X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
আফগান কবিতা

আমি মুখ খুলতে চাই না : নাদিয়া আঞ্জুমান

অনুবাদ ও ভূমিকা : ফজল হাসান
২১ আগস্ট ২০২১, ১৫:১৭আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২১, ১৫:১৭

নাদিয়া আঞ্জুমান ছিলেন আফগানিস্তানের উদীয়মান তরুণ কবি। মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে তার স্বামী তাকে হত্যা করে। সম্প্রতি তালেবানদের ক্ষমতায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এবং যখন সমস্ত বিশ্ব নতুন শাসনামলে নারীদের জীবন কী হবে, তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন, তখন তার ‘আমি মুখ খুলতে চাই না’ কবিতাটি ভাইরাল হয়ে যায়। 
নাদিয়া আঞ্জুমানের জন্ম ১৯৮০ সালে হেরাতে। তিনি ছিলেন এক বড় পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান। ১৯৯৬ সালে তালেবানরা যখন ক্ষমতা দখল করে এবং সন্ত্রাসী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, তখন তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। তালেবানরা বিশেষ ধরনের খেলাধুলা, সঙ্গীত, ফটোগ্রাফ এবং টেলিভিশন নিষিদ্ধ করে। এছাড়া তারা মহিলাদের ঘরের বাইরে কাজ করার, পড়ালেখা করার এবং পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্যের সঙ্গে না গিয়ে বাইরে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিল, এমনকি ব্যভিচারের অভিযোগে অভিযুক্ত নারীদের চাবুক এবং পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রথা চালু করেছিল।
তালেবানদের কঠোর এবং অমানবিক দমনের সেই প্রেক্ষাপটে, নাদিয়া সেলাই ক্লাসের পোশাক পরে একটি সাহিত্যচক্রে অংশ নিয়েছিলেন–অল্পবয়সী মেয়েদের জন্য অনুমোদিত কয়েকটি ক্রিয়াকলাপের মধ্যে একটি ছিল সেলাই শেখা–যাকে ‘গোল্ডেন নিডল সেলাই স্কুল’ বলা হতো। সেখানে তিনি শেক্সপিয়ার, তলস্তয় এবং বালজাকের মতো (তৎকালীন সময়ে আফগানিস্তানে নিষিদ্ধ) লেখকদের সাহিত্যকর্মের সঙ্গে পরিচিত হন। উল্লেখ্য, তিনি জানতেন যে তালেবানদের হাতে ধরা পড়লে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
অনেক আফগান পরিবারের মতো তার বাবা-মা চেয়েছিলেন যে তিনি চৌদ্দ বা পনেরো বছর বয়সে বিয়ে করে ঘর-সংসার করুক। কিন্তু তিনি জেদ করে বিয়ে বিলম্বিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের কেরানি ফরিদ আহমাদ মজিদ মিয়াকে বিয়ে করতে বাধ্য হন।
২০০১ সালে আমেরিকান আক্রমণ এবং তালেবান সরকার পতনের পর আঞ্জুমান হেরাত বিশ্ববিদ্যালয়ে দারি সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন এবং সেই সময় তার প্রথম বই ‘গোল-ই ডুডি’ (ধোঁয়াটে ফুল) প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি আফগানিস্তানে পিতৃতন্ত্রের বর্বরতা এবং নারীদের নিপীড়নের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। উল্লেখ্য, গ্রন্থটি আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ইরানে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
যাহোক, কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের কিছুদিন পর (২০০৫ সালে) তার স্বামী তাকে ভীষণ প্রহার করে। বিবিসির খবর অনুযায়ী, তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। পুলিশ পরে জানায়, তার স্বামী তাকে আঘাত করার কথা স্বীকার করেছে, কিন্তু তাকে হত্যার কথা স্বীকার করেনি এবং দাবি করা হয়েছে, নাদিয়া আত্মহত্যা করেছেন।
হেরাত সেলাই সার্কেলস সম্পর্কে একটি বইয়ে সাংবাদিক এবং লেখিকা ক্রিস্টিনা ল্যাম্ব উল্লেখ করেছেন, ‘নাদিয়ার বন্ধুরা বলেছিল তার প্রতি আত্মীয়-স্বজন অত্যন্ত ক্ষিপ্ত ছিল। কারণ তারা বিশ্বাস করত যে, একজন নারী হয়ে প্রেম এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে কবিতা প্রকাশ করে তিনি পরিবারকে রীতিমতো অসম্মান করেছেন।


আমি মুখ খুলতে চাই না

আমি মুখ খুলতে চাই না
আমি কি গাইতে পারি?
আমাকে—জীবন যাকে ঘৃণা করে— 
গান গাইতে অনেক কিছু দিয়েছে, যেন আমি চুপ করি।
আমি কি মধুর কথা বলব
যখন আমার মনে পড়ে তিক্ততা?
হায়, অত্যাচারীর ভোজ
আমার মুখ ঢেকে দিয়েছে।
জীবনে আমার পাশে কেউ নেই
আমি কার কাছে আমার নমনীয়তা উৎসর্গ করব?
যা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, কথা বলতে, হাসতে,
মরে যেতে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে।
আমি আছি আমার জোরপূর্বক একাকিত্ব নিয়ে,
আমার বেদনা এবং আমার দুঃখের সাথে।
আমি অকারণে জন্মেছিলাম
আমার মুখে সিলমোহর দেওয়া উচিত।
বসন্ত এসেছে, আমার হৃদয়ে
উদযাপনের অনুকূল মুহূর্ত।
কিন্তু আমি কী করতে পারি যদি একটি ডানা থাকে
আমি এখন আটকা পড়েছি?
তাই আমি উড়তে পারি না।
আমি অনেক দিন থেকে নীরব আছি,
কিন্তু আমি কখনও সুর ভুলে যাইনি
আমি ফিসফিস করা বন্ধ করতে পারি না
আমার হৃদয় থেকে প্রবাহিত গান
তারা আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে 
একদিন আমি খাঁচা ভেঙে ফেলব
আমি উড়ব, এই একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসব
এবং বিষণ্ণতার সাথে গান করব।
আমি ভঙ্গুর পপলার নই যে
বাতাসে কেঁপে উঠব।
আমি একজন আফগান নারী
সুতরাং আমার ক্রমাগত অভিযোগটি বুঝুন।
আমি এক কোণে খাঁচাবন্দি
বিষণ্ণতা এবং দুঃখে পূর্ণ...
আমার ডানা ভাঙা এবং আমি উড়তে পারি না...
আমি একজন আফগান নারী এবং 
আমাকে অবশ্যই নেকড়ের মতো 
গর্জন করে কথা বলতে হবে।

[সূত্র : ইংরেজিতে ‘আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু ওপেন মাই মাউথ’ কবিতার অনুবাদ।
সম্প্রতি কবিতাটি ‘টুডে ইন ২৪ নিউজলেটার’-এ পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।]

/জেডএস/
সম্পর্কিত
ভাঙা হাটের দিন
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ফিরেছে অস্ট্রেলিয়া
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
গাজায় ৪০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিলো ইসরায়েল
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সবজির কেজি এখনও ৬০ টাকার বেশি, ২০০ ছাড়িয়েছে ব্রয়লার
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ