X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

অন্ধকার সিরিজের কবিতা

কুমার দীপ
১০ মে ২০২২, ১৩:২৩আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১৩:২৩

২০.
অনুত্তীর্ণ জীবনের কড়িকাঠে মাথা রেখে বসে আছি
সামনে শিরচ্ছেদ
পিছনে অন্ধকার
কোন দিকে যাব?

কেউ বলে― 
সামনে এগোও
অন্ধকারে বাঁচার চেয়ে
শিরচ্ছেদই ভালো
কেউ বলে―
পিছিয়ে যাও
বাঁচার চেয়েও দরকারি কি
অমন কোনো আলো?

অনুত্তীর্ণ জীবনের কড়িকাঠে মাথা রেখে বসে আছি
সামনে এগোতে চাই―
পারি না
পেছনে ফিরতে চাই―
পারি না।

এভাবে কড়িকাঠে মাথা রেখে কতোকাল থাকা যায়―মা!


২১.
জ্বলে উঠছে সুসজ্জিত আতশ
আলোয় মোড়ানো চারধার
মঞ্চের চেয়ারগুলোতে বসে আছেন
মাননীয় অন্ধকার।


২২.
জরায়ুর অন্ধকার ছিঁড়ে যখন বাইরে এলাম
আনন্দধ্বনি রটে গেল চারদিকে
আমি কাঁদছিলাম
সকলে বললো―
অনেক আলোয় চমকে গিয়ে
এখন কাঁদছে
এরপর হাসবে। 
কথা সত্যি হলো 
একদিন আলোতেও হাসতে শিখলাম আমি

হাসতে হাসতেই এগোচ্ছিলাম পথ 

পথ চলতে চলতেই 
একদিন আবিষ্কার করলাম―
আমার চেয়ে দ্রুত গতিতে হেঁটে যাচ্ছে যে
সে একটা অন্ধকার।
বামে শূন্য
ডানে হাঁটছে যে―
সে-ও এক অন্ধকার।
যারা পিছন থেকে এগিয়ে আসছে দৌড়পায়ে
তাদের হাতে অন্ধকারের মশাল
মুখে অন্ধকারের শ্লোগান।
আলোর গান গাইবে বলে যারা পথে নেমেছিল
তাদেরও পায়ে পায়ে অন্ধকারের ঘুঙুর
গায়ে অন্ধকারের জামা।
আর কী আশ্চর্য― 
অন্ধকারের সুদৃশ্য উষ্ণীষ মাথায় দিয়ে
ল্যাম্পপোস্টের মতো দাঁড়িয়ে
আলোর পথের রাজা!

থমকে দাঁড়াতেই খেয়াল হলো―
প্রিয়তমার মতো পরম আদরে
আমাকেও যে জড়িয়ে ধরেছে গলা
সে-ও কোনো অন্ধকারের মায়া
মনে হলো―
অন্ধকারের অথৈ সাগরে
ভাসছি

মাতৃজরায়ু থেকে বের হয়ে কেঁদেছিলাম
সে অনেককাল হলো―
আলোর কান্নাধ্বনি শুনতে শুনতে
আমি বিমূঢ় প্রমিথিউস  
হাসছি।


২৩.
কখনও কখনও সকালেই নেমে আসে সন্ধ্যা
ফাগুনকে মনে হয়―
শ্রাবণের স্বর। 
মুঠো খুললেই
ছাই হয়ে ঝরে পড়ে
সোনার মোহর।

মধ্যাহ্ন পুকুর টলমল

অথচ এ-ঘর থেকে ও-ঘরে গিয়েই ভুলে যাই―
কী জন্যে ছেড়েছি আসন!
কার জন্যে পুড়ে যায়
বুকের বৃন্দাবন! 

জ্যোতিষ্মান ভিখিরির থলের পাঁজরে
খুচরো পয়সার মতো
বুকের মহাকাশে জমিয়ে রেখেছি
অনেক পৃথিবী
সেগুলোকে কক্ষপথে পাঠানোর আগেই
নিভে যেতে চায় আলো

মনে হয়― 
সকালেই সন্ধ্যা ঘনালো।


২৪.
অ-তে অজগর না-লিখে
অজাগর লিখেছিলাম বলে
খুব বকেছিলেন স্কুলের স্যার―
‘যদি তুই জেনে লিখিস,
তাহলে কবি হবি
না-জেনে লিখলে
গোল্লায় যাবি।’

শৈশবের সেইসব দিনে
কবি হওয়ার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না
আর গোল্লায় গেলে 
বাবা খুব কষ্ট পাবেন জেনে বলেছিলাম―
‘স্যার, আমার তো সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা মনে মনে
সিদ্ধার্থের মতো সবকিছু ছেড়ে দূর বনে...’
স্যার হেসে বলেছিলেন―
‘তোর না-কি সুতো বাঁধা মায়ের আঁচলে
তুই হবি শুদ্ধধনের ছেলে!
আকাশ-কুসুম স্বপ্ন না-দেখে
পড়ালেখায় মনোযোগ দে
অনেক বড়ো হতে পারবি
গাড়ি-বাড়ি করতে পারবি।’

স্যারের এ-কথার পরে পড়ালেখা অপেক্ষা
‘আকাশ-কুসুম’ই বেড়ে গেল আমার 
গাড়ির ধোঁয়ায়
চোখে আসে জল
বাড়ি বলতে মনে হয়―
বোধিবৃক্ষেরই তল।
নীলাকাশ দেখে ভাবি―
ওটা কি আমারই আরেক ভুঁই!
অনেকেই বলে―
‘গুরুর আশীর্বাদ ফলে গেছে
কবি হয়েছিস তুই।’

অথচ কেউ জানে না
আমার সকল ফাগুন রাত
ভরে আছে জলে
কবিতার জন্যে নয়
এতগুলো বছরেও
বোধিবৃক্ষের দেখা পেলাম না বলে।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
ইচ্ছা
সর্বশেষ খবর
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আধুনিকায়নে কাজ করবে জাইকা ও বিএফডিসি
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
ট্রেনের ৪৫ হাজার টিকিট কিনতে দেড় কোটির বেশি হিট
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের