X
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
৭ চৈত্র ১৪৩১

প্রিয় দশ

আমিনুল ইসলাম
০৭ জুন ২০২৪, ১০:৩০আপডেট : ০৭ জুন ২০২৪, ১০:৩০

আধুনিক দৈত্য

আমি গাছের গোড়ায় জল দিতে পারি
আমাকে কাজে লাগাও
তা না হলে
আমি গাছের ছায়ায় আগুন লাগাব
সেটা দাবানল হয়েও উঠতে পারে।


স্রোত ও ঢেউ—তিন

গন্তব্য উজানে জেনে
ঢেউয়ের পিঠে শোয়ার হওয়া
গন্তব্যের কাছাকাছি যখন—
থেমে গেছে হাওয়া
এখন একান্ত অনুনয় শুনে
হেসে ওঠে স্রোত!


অনুর্বর সময়ের চুমু

ধর্মঘট নয়, লে অফও নয়,
কারখানা খোলা
অথচ প্রোডাক্ট নেই!
বালির বাগানে
কাঁকড়ারা হেঁটে যায়
সোনালি সাফল্যে;
হতাশ অধরে—
অনুর্বর চুমুর আবৃত্তি;

প্রেম নয়, প্রতারণা নয়
তরল মলিন কষ
দুভাগ অতৃপ্তি আর
একভাগ অসাফল্যে
শুকোয় শুষ্ক বাতাসে।


স্রোতের পথে সেমিকোলন

কমে গেছে—কমে গেছে—কমে গেছে
অতএব এখনো তো...
তার মানে তবুও তো...!

হে রাতের জানালা, হে দিনের দুয়ার,
বল তাকে
ঘণ্টাদুয়েকের জন্য সে যেন সরিয়ে নেয়
আঁধারের রঙমাখা টমাহক দুচোখের অন্ধঅবরোধ।


বাড়ির দুঃখ অথবা দুঃখের বাড়ি

নিজহাতে বন্ধ করিনি দুয়ার
আমি তো আর জীবনানন্দ নই
ভেতরে থেকে বাইরে তালা দেবই বা কি করে!
চোরেও যায়নি নিয়ে
এটা ভগবানের বাড়ি
পরিত্যক্ত ঘোষণার আগে
ভাঙার অনুমতি নাই।

কিন্তু আগাছার উৎপাত মাথায় নিয়ে
আমি আর কতকাল বন্দি থাকব এভাবে?
আর কতদিন পাশ দিয়ে চলে যাবে
পৌরবিভাগের লোকজন!
আর কত রাত শুনতে হবে
গোখরো-নীরবতার খোলস বদলানোর শব্দ?

তারচেয়ে আমাকে শত্রুসম্পত্তি ঘোষণা করা হোক
দখলে বা বেদখলে
কেউ এসে ঢুকুক এ ঘরে
অঘোষিত মূল্যে—অন্ততঃ
বাড়িটার নাম উঠুক
পৌরপিতার প্রপার্টি রেজিস্টারে।


স্রোত

অলখ জোয়ারে ভাসে থই থই ভাপা পিঠা দিন;
স্মৃতিচারী পাকুড়ের পলাতকা সুরেলা দুপুর;
দাদুর দুচোখ-ছোঁয়া পশমি গোধূলি; স্বপ্নমাখা
পরীদের ডানাঘঁষা বসন্তের রাত, ভাসে সেও।

প্লাবিত পুকুরের ঢেউলাগা পদ্মফুলসম
বিশ্বাসের রঙমাখা আমাদের স্বপ্ন থোকা থোকা
ঘুরে ঘুরে ভাসে দ্যাখো, তটঘেঁষা ঘোলা জলাবর্তে!
আর যত ঝাঁকবদ্ধ প্রাণ অদ্ভুত মাছের মতো
ভেসে যায় স্রোতানুগ; প্রশ্নগুলো ভেসেছে আগেই!

আজীবন স্রোতসখা শ্যাওলা কচুরি—মাঝিদের

কাজকর্মে হতভম্ব, গদগদ ভেজাকণ্ঠে বলে—
‘হায় হায়! আমাদেরও পিছু ফেলে চলেছে কোথায়!
কোন সমুদ্রের টানে? স্রোত-পাওয়া মাঝিদের মুখে
কোনো কথা নেই। শুধু হাতের ইশারা, হয়তোবা
দৃশ্যাকুল—সুখকল্পনার মতো মিশে যায় দূরে....
মহা মাৎস্যন্যায়-ছোঁয়া জলধাঁধাজাত কুয়াশায়...


সক্রেটিসের পৃথিবী

‘খৈয়ামের সাকীর মতো সুমনা সময়ের হাতে
আনসিডিউল্ড পেয়ালিটি হেমলকের।’
প্রেমপত্র প্রেসক্রিপশন ও জন্মসনদ হাতে
যতবার দাঁড়াই জন্মের কাঠগড়ায়—
‘মাই লর্ড, ইয়োর অনার—’
ততবারই ডিএলআর কোট করে সেকথাই
ঘোষণা করেন মহামান্য আদালত
আমাকে থামিয়ে দিয়ে মাঝপথে।

অথচ আপিল বা রিভিউ করার সুযোগ রাখেনি—
আকবরের চেয়েও উজ্জ্বল উপাধিধারী
মহা-একনায়কের অসংশোধনযোগ্য সংবিধান!


বিকিনি রাত এবং ফুটো কনডম

প্রবাদের পাথর ফেটে উচ্চারিত হয় সজোরে,
সেটা হয় সিপাহি বিদ্রোহ,
মুখে এসে লাগে টমাহক রিপ্লাই;
প্রভাতি প্রার্থনা কাতরকবিতা হলে
সেটা উসকানির লেজে কাতুকুতু হয়,
আঁধারের প্লাস এসে খুলে নেয় নখ।

রোদের সংবিধান নিয়ে কথা বলে
ট্রেন-বাস-টি স্টল-টকশো, জেলখানা;
‘আ রে করো কী!
মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেল না!’
দশমুখে কথা বলে দিনের ডাকাত।
আরে ও চোরের মা,
তুমি কেন লজ্জা পাচ্ছ জননী?

ফলে অরণ্যে রোদন—এ প্রবাদের চোখের ওপর
ঘন হয়ে আসে—
উলটো হয়ে ঝুলতে থাকা চোখবাঁধা রাত।

আছিলা বাঁশের স্কুলে জমে ওঠা প্রাকটিক্যাল
ক্লাস থেকে ডাকছি—
ও ইতিহাস, ওগো মহাকালের প্রেস সেক্রেটারি,
প্রস্তরযুগকে সঙ্গে নিয়ে একবার এসো ভাই
দেখে যাও—আলোকায়নের বিকিনি পরা রাত,
ফুটো কনডম আর ধর্ষকদের ইউনাইটেড ক্লাব!


এইসব শেয়ালেরা

উজাড় উপবন-শুকিয়ে যায় নদনদী
গ্রামগুলো রক্তশূন্য
ঝোপঝাড়ে কারা যে বিয়োয়!
অধিকন্তু কাঁটাতারে ফেলানীর লাশ
তাহলে কোথায় যায়?

আহা মাতা সরস্বতী, তোমার ওলানে
সকলেরই দুধ জোটে
অতএব...
ফলে এতটা বিভ্রাট।

কচুক্ষেতে ধানক্ষেতে-টকশোয়ে-সেমিনারে
সবখানে দলবদ্ধ হুক্কাহুয়া;
মহামতি মার্কস-এইখানে বলে রাখি—
দল মানে শ্রেণি নয়—
অন্যকিছু, অন্যকিছু হতে পারে।
শ্যামা নয়-কুহু নয়-বুলবুলও নয়,
শেয়ালেরাই প্রকৃত গায়ক
আর হুক্কাহুয়াই হচ্ছে বিশুদ্ধসংগীত
উপরন্তু কোরাসেরও ক্লাসিক দৃষ্টান্ত—

কণ্ঠভোটে তিনবার...অতএব
এইকথা মেনে নিতে হবে।
আহা পদ-অধিকার,
এমনটি এ-জগতে আর কোথায় মিলিবে?

আর দ্যাখো,
মালা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন ইস্টাব্লিশমেন্ট।


মিথ্যাচারীর স্মৃতির মিনার

সে একসময় আমিও সিগারেট খেতাম!
ছবি বলতো, এরপর থেকে আর যদি
সিগারেট খেয়ে আসো,
আমি কিন্তু দিব না! দুচোখের কিরা!
ছাই নিমের দাঁতন বাবলার কচি ডাল
কিছু না পেলে পিচ্ছিল বালি
ক্ষয় করে ফেলতাম চকচকে এনামেল:
আজ কিন্তু সিগ্রেট খাইনি! দ্যাখো...
ও মধুবালার মতন দাঁত বের করে বলতো
গন্ধ কিন্তু কিছুটা রয়েই গেছে!

মিথ্যার জয় নিয়ে আমি ফিরে আসতাম বাসায়
মেজোবুবুর পাওয়ালা আয়নাখানি হাতে নিয়ে
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতাম
ঠোঁটে কোথাও লেগে আছে কিনা ওর গালের রং!

আয়না লিয়া অত দেখতে হবে না জি ভাই
তুমি এমনিতেই খুব সুন্দর!
মেজোবুবু তুমি আর কি বুঝবা— কী দেখি আমি!

আমি আজ সত্যি সত্যি সিগারেট খাই নাকো
কী পেলাম আজ!
ফুসফুস তাজা আছে?
করোনা অতিমারিতে তা কাজে লাগবে?

আবারও সিগারেট ধরতে ইচ্ছে করছে
আবারও ছবির সামনে দাঁড়িয়ে
বলতে ইচ্ছে করছে একটি মিথ্যাকথা:
আজ কিন্তু সিগারেট খাইনিকো ছবি!

মিথ্যা বলছি এই সত্য ষোলআনাই বুঝতো সে
কিন্তু তার কাছে দামি ছিল আরেকটি সত্য
যেখানে ছাই নিমের দাঁতন কিংবা
সাদা বালির মতো কোনো ফাঁক ছিল না।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
বাঙলা যেভাবে দুঃখী হলো
পল্লিকবি জসিম উদ্‌দীনের ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
ইউরোপের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের বড় উত্থান
ইউরোপের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের বড় উত্থান
রাজধানীর মিরপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
রাজধানীর মিরপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
কেরানীগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল নিউ মার্কেট থেকে গ্রেফতার
কেরানীগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল নিউ মার্কেট থেকে গ্রেফতার
আ.লীগ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে যা বললেন নাহিদ ইসলাম
আ.লীগ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে যা বললেন নাহিদ ইসলাম
সর্বাধিক পঠিত
বরিশালে নাহিদ ইসলামের পথ আটকে বিক্ষোভ
বরিশালে নাহিদ ইসলামের পথ আটকে বিক্ষোভ
প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি পোশাক কারখানা
প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি পোশাক কারখানা
ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টাকে যা বললেন হাসনাত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টাকে যা বললেন হাসনাত
আপাতত দেশে ফিরছেন না তারেক রহমান
আপাতত দেশে ফিরছেন না তারেক রহমান
হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা: মাঝপথ থেকে ঢাকায় ফিরলো বিমানের ফ্লাইট
হিথ্রো বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা: মাঝপথ থেকে ঢাকায় ফিরলো বিমানের ফ্লাইট