X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২
নভেলেটের শিল্পরূপ

নভেল, নভেলা ও নভেলেট : ভিন্নতার সূত্র সন্ধান ।। শেষ পর্ব

হামীম কামরুল হক
০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:২৭আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:৩১

নভেলেট হিসেবে কমলকুমার মজুমদারের ‘শ্যাম-নৌকা’

নভেল, নভেলা ও নভেলেট নিয়ে নানান মত পার্থক্য যেমন আছে, তেমন এদের বিবর্তনও লক্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে নভেল ও নভেলার চারিত্র্য ক্রমে স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট হয়ে উঠেছে। নভেল বা উপন্যাসের অভিজ্ঞতা ও জীবনের সামগ্রিকতা যেভাবে দেখতে পাই, সেটিই আকারে ছোট উপন্যাসেও দেখতে পাই ভিন্ন একটি মাত্রা। Oxford Advance Learner’s Dictionery -তে নভেলার পরিচয় স্পষ্টভাবেই ‘ছোট উপন্যাস’, নভেলেটকে ‘সাহিত্যগুণে দুর্বল ছোট উপন্যাস বিশেষ’ (Hornby,1995 :792 ) এবং Dorling Kindersly Illustrated Oxford Dictionary -তে নভেলেটকে বলা হয়েছে কোথাও ‘হালকা রোমান্টিক উপন্যাস’ বা light romantic novel (Davis & Webster,2003 :559 )।

নভেলেটকে ‘সাহিত্যগুণে দুর্বল’ ও ‘হালকা রোমান্টিক উপন্যাস’ হিসেবে চিহ্নিত করার অর্থ এর প্রকৃত স্বরূপ ও সামর্থ্যকে ছোট করে দেখার সামিল। এগুলি সহজেই খণ্ডন করা যায়। রবীন্দ্রনাথের তিনটি ‘ছোট উপন্যাস’— যেগুলিকে আমরা নভেলেটই বলতে চাই, —‘চতুরঙ্গ’, ‘মালঞ্চ’ এবং ‘চার অধ্যায়ে’র বিষয় ও আঙ্গিকের দৃঢ়তা ও সাহিত্যগুণ আমাদের মনে করায় আঙ্গিক হিসেবে নভেলেটের শক্তিমত্তার কথা। ‘চতুরঙ্গ’কে নীহাররঞ্জন রায় বুদ্ধিবাদী উপন্যাস হিসেবে উল্লেখ করেন এবং মনে করেন এটি বিরবণধর্মী উপন্যাসও নয় (নীহাররঞ্জন, ১৪১৬:৪২৫) তাঁর মতে, ‘‘চতুরঙ্গে’’র কবিকল্পনার ঐশ্বর্যও লক্ষ্য করিবার। বুদ্ধিদীপ্ত সূত্রগুলির মধ্যে ত সে-পরিচয় আছেই; তাহা ছাড়া, নানা জায়গায়, নানান বর্ণনায়ও এই ঐশ্বর্য ইতস্তত বিক্ষিত। সর্বত্রই এই বর্ণনা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, দুই চারিটি বাক্যমাত্র তাহার সম্বল, অথচ এই সংক্ষিপ্ত আয়তনের মধ্যেই সমস্ত রহস্য, সমগ্র সত্যটি যেন ঘনীভূত হইয়া আছে।’’

সার্থক নভেলেটের যে মূল বৈশিষ্ট্য সেটিই ‘চতুরঙ্গে’ সেটিই দেখা যাচ্ছে— সংক্ষিপ্ত আয়তনের ভেতরে সমগ্রকে ঘনীভূত করার প্রয়াস। সৈয়দ আকরম হোসেনের মতে, ‘‘শেষের কবিতা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপন্যাসের গঠন-শৈলীতে পরিবর্তন আনেন। ঘটনা-সংস্থানের নাটকীয়তা, সংলাপাংশ বাড়িয়ে, বিবৃতি এবং বর্ণনাংশ হ্রস্ব করে রসবেদনকে গাঢ় এবং ঘনবদ্ধ করার দিকেই তাঁর মানসিকতা লক্ষণীয়। শেষের কবিতা থেকেই এ লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। পক্ষান্তরে, শেষের কবিতার কাব্যধর্মীতাকে সংযত করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরবর্তী উপন্যাসগুলিতে বিষয়ানুগ গদ্যরীতি প্রয়োগ করেছেন। শেষের কবিতার পরবর্তী উপন্যাসগুলি আকৃতিগত দিক দিয়ে ক্ষুদ্র। সুবোধ সেনগুপ্ত এ-পর্যায়ের উপন্যাসগুলিকে বলেছেন ‘ক্ষুদ্র উপন্যাস’, কেউ বলেছেন ‘খণ্ডোপন্যাস’।’’(আকরম, ১৯৬৯:১৫৩-১৫৪)

আমরা মনে করি একালে এদেরকে ‘নভেলেট’ই বলা হতো। ‘দুইবোন’ এ পর্যায়ের প্রথম রচনা হলেও আকারের সংক্ষিপ্ততা ছাড়া সার্থক নভেলেটের গুণ এতে নেই। এরচেয়ে ‘মালঞ্চ’ ও ‘চার অধ্যায়’কে আমরা রবীন্দ্রনাথের সার্থক নভেলেট বলতে পারি। এর ভেতরে ‘মালঞ্চ’কেই অনেকাংশে শ্রেষ্ঠ বলতে চাইছেন সৈয়দ আকরম হোসেন,‘‘বাস্তবতার শৈল্পিক ব্যবহারে, জীবন তৃষ্ণা এবং অস্তিত্ব রক্ষার তীব্র যন্ত্রণায়, ভাষা ব্যবহারের চমৎকারিত্বে মালঞ্চ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ পর্যায়ের উপন্যাস তিনটির মধ্যে অনেকাংশে শ্রেষ্ঠ। (আকরম, ১৯৬৯:১৫৮-১৫৯)

পূর্ণেন্দু পত্রীর মতে, এই উপন্যাসে নিজের অন্তর্গত ভায়োলেন্সকেও মুক্ত করেন রবীন্দ্রনাথ; একই সঙ্গে নিজেকে দায় মুক্ত করেন জীবন ও সত্যের দ্বান্দ্বিক সত্তাকে উন্মোচনের মাধ্যমে। (পূর্ণেন্দু, ২০০৫:১১৯) এবং ‘চার অধ্যায়’কে বলা যেতে পারে তাঁর শেষ এবং নীরিক্ষামূলক উপন্যাস। ‘‘এটি ঘটনা সংস্থাপনে, ভাব-প্রবাহে এবং পরিণতির দিক দিয়ে নতুনত্ব সৃষ্টিতে প্রয়াসী।’’ (আকরম, ১৯৬৯:১৬৮)। এই নতুনত্ব আরো যে যে লক্ষণে এতে উদ্ভাসিত তা নভেলেটেরই নতুনত্ব। তাঁর দীর্ঘ উপন্যাসগুলির সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যাবে তিনি এ-রচনাগুলি কোনো দীর্ঘ উপন্যাসের সার-গুণাবলী নিয়ে আকারে সংক্ষিপ্ত করেননি। জীবনের বিস্তৃত ‘রূপ’ যদি তার দীর্ঘ উপন্যাসের অন্যতম দিক হয়ে থাকে, তাহলে শেষ পর্যায়ের উপন্যাসগুলিতে এসেছে সংক্ষেপে কিন্তু সমগ্রভাবে জীবনের ‘স্বরূপ’। পরবর্তীকালে বাংলা নভেলেটে রবীন্দ্রনাথের নভেলেটগুলির এই বৈশিষ্ট্যটিই লক্ষ করা যাবে। এবং বর্তমান নভেলেটই দীর্ঘ উপন্যাসের 'epitome' বা ‘সার-সংক্ষেপ’ বা ‘গুণাবলির প্রতীক’ না হয়েও খণ্ডিত জীবনের কথা তুলে এনে তাকে অখণ্ড জীবনের সমগ্রতায় উন্নীত করার সবচেয়ে সার্থক শিল্পাঙ্গিক হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

সেদিক থেকে নভেলেটকেই বলা হচ্ছে যুগের চাহিদা অনুযায়ী সবচেয়ে দৃঢ়বদ্ধ কার্যকর একটি সাহিত্য আঙ্গিক। ফলে আগামীতে সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী আঙ্গিক হিসেবে নভেলেটের সম্ভবনা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে নভেল বা উপন্যাসের চেয়ে নভেলেটের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে যেকটা বিষয়কে চিহ্নিত করা হচ্ছে সেগুলি হল —

ক. নভেল যুগের সৃষ্টি। যুগের প্রতিনিধিও। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে-যুগচেতনার ক্রমবিলুপ্তি ও ব্যক্তিচেতনার ক্রমবিকাশই নভেল নয় নভেলেট রচনায় লেখককে প্ররোচিত করেছে। সেইসঙ্গে পাঠককেও। অর্থাৎ যুগের প্রবাহমানতায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের প্রাবল্যের দাবিতে নভেলেট ক্রমবর্ধমান ভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নভেলেটই কালের লিখন-নিয়ন্তাও।

খ. জীবন এখন গতিশীল। সেই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে স্রষ্টা ও পাঠক বড়মাপের বিশাল উপন্যাস অপেক্ষা ছোটমাপের নভেলেটে জীবনদর্শনের ও জীবনদর্পনের অন্বেষণকেই যথোপযুক্ত মনে করছে। এটা সমাজপ্রবাহ ও যুগরসের সাথে ব্যক্তিমানসের অভিযোজনের অনিবার্য ফলশ্রুতি। তাই প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে নভেল নয়, নভেলেটই যুগের সৃষ্টি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গ. খণ্ডসভ্যতা ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানের প্রয়োগের ফলে এমন এমন বাহ্য সামাজিকতায় সম্পর্কযুক্ত কিংবা ব্যাপ্ত নয়— বরং অন্তর্মুখীনতায় সঙ্কুচিত। সেই সাথে তার মানস-অভ্যন্তরের জটিলতাও সুপ্রচুর। নভেলেটে যেহেতু এই জটিলতা ও অন্তর্মুখীনতার তীক্ষ্ণ চিত্রণ থাকে— সেহেতু নভেলকে সরিয়ে নভেলেটই জনপ্রিয়তার শিখরে উঠে গেছে। (রসিক;২০০০:২৭৮-৭৯)

ব্যক্তিচেতনার বৃদ্ধি, গতিশীল জীবনের দাবি, জটিল অন্তর্মুখীনতার তীক্ষ্ণ তীব্রতাপূর্ণ উপস্থাপনা নভেলেটকে ক্রমে বিশিষ্ট শিল্পমাধ্যম করে তুলেছে। বর্তমানে সবচেয়ে সংবেদী সাহিত্য আঙ্গিক হিসেবে নভেলেটকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। শ্রেয় ও প্রেয় দুটোদিকেই নভেলেটের চাহিদা বেড়ে চলেছে। উল্লেখ্য বাংলাদেশে ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যথাক্রমে ঈদ ও পূজাসংখ্যায় যেসব রচনাকে উপন্যাস হিসেবে অভিহিত করা হয়, সেগুলি আদতে আকৃতিতে নভেলেটে চেয়ে খুব একটা বড় নয়। পরে সেসব রচনাই একটু পরিশোধিত হয়ে কিংবা হুবহুভাবে বই হিসেবে মুদ্রিত হয়। কেবল তাই নয়, সাহিত্যের ইতিহাস থেকে নভেলেটের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন রচনার সন্ধান করার একটা ধারাও শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যে জগদীশ গুপ্তের রচিত ‘ছোট উপন্যাস’গুলি নতুন করে মনোযোগ পাচ্ছে। (শুভঙ্কর;২০০০:২৬৭) যদিও এদের বেশির ভাগই নভেলেটের চেয়ে নভেলার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। অন্যদিকে কমলকুমার মজুমদারের ‘গোলাপ সুন্দরী’ ও ‘শ্যাম-নৌকা’র বৈশিষ্ট্যগুলি নভেলেটের সঙ্গেই সংগতিপূর্ণ।

মূলত নভেলেট বলতে আমরা সেই রচনাকেই বুঝতে চাইছি—

ক. আকৃতি যেটি একটি বড় গল্পের সমান, কিন্তু প্রকৃতিতে উপন্যাসের গুণসম্পন্ন।
খ. যেটি মূলত দশ হাজার থেকে কুড়ি হাজার শব্দে রচিত, তবে কম-বেশিও হতে পারে।
গ. এর ভাষা বা গদ্যনির্মাণে এবং আঙ্গিক বা কাঠামোতে কোনোরকম শিথিলতা থাকবে না, পর্যবেক্ষণে থাকবে তীক্ষ্ণতা। এটি হবে ছোটগল্পের মতো সর্বদিক থেকে সংহত ও সংযত। সংক্ষিপ্ততা ও পরিমিতিবোধই আধুনিক নভেলেটের অন্যতম প্রধান বিবেচনা। বিন্দুতে সিন্ধু বা এর গদ্য ও বর্ণনাভঙ্গিতে সংক্ষেপে বিষয়ের বিস্তার ঘটবে।
ঘ. এক বা একাধিক চরিত্র সেখানে পূর্ণভাবে বিকাশিত হবে। তবে মূল ঘটনা ও মূল চরিত্র থেকে ঘটনাসূত্র কখনোই দূরে যাবে না। উপকাহিনি, শাখাকাহিনির সংখ্যা স্বল্প। এবং এর প্রত্যেকটি কাহিনির মূল ধারার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থাকবে।
ঙ. আকারে ছোটগল্পের চেয়ে সামান্য বড় এবং উপন্যাস ও নভেলার চেয়ে ছোট হলেও এর প্রাণে ও আত্মায় থাকবে উপন্যাসের বিস্তৃতি। অর্থাৎ দেহ-কাঠামো ছোট হলেও, হৃদয়টি থাকবে বড়।
চ. নভেলেটের ভাষা ও ভঙ্গি একটি ধ্রুপদী মেজাজে বাঁধা থাকবে। বাণিজ্যিকভাবে আমোদ-জাগানিয়া হালকা মেজাজের নভেলেটও রচিত হতে পারে, যেভাবে উপন্যাসও মূলত সৃজনশীল ও সস্তামানের বাজারি— এই দুয়ের ভিত্তিতে হয়ে থাকে।
ছ. সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো— এতে এক বা একাধিক চিন্তার আনাগোনা হবে, মনন ও একটি প্রগাঢ় দার্শনিকতা এর ভেতর নিহিত থাকবে। এটি দর্শনের মতো দার্শনিকতা নয়, সাহিত্য যেভাবে সৌন্দর্যের মাধ্যমে দার্শনিকতায় মাত্রায় উন্নীত হতে পারে, বঙ্কিম যেভাবে বলেছিলেন সাহিত্য সরাসরি নীতিশিক্ষা দেয় না, সৌন্দর্যের মাধ্যমে নীতিশিক্ষা দেয়, তিনি লিখেছিলেন,‘‘কবিরা জগতের শিক্ষাদাতা— কিন্তু নীতিব্যাখ্যার দ্বারা তাঁহারা শিক্ষা দেন না। কথাচ্ছলেও নীতিশিক্ষা দেন না। তাঁহারা সৌন্দর্য্যরে চরমোৎকর্ষ সৃজনের দ্বারা জগতের চিত্তশুদ্ধি বিধান করেন।’’(বঙ্কিম; ৪১৭: ১৬১)— এই বিষয়টি এর সবচেয়ে বড় দিক। এর ঘাটতি থাকলে এর শিল্পসিদ্ধিও পূর্ণতা পায় না।

এটি একটি প্রস্তাবনা মাত্র। সার্থক নভেলেটে শনাক্ত করতে এই সূত্রগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সার্থক নভেলেট নির্দিষ্ট ছক মেনে রচিত নাও হতে পারে।

কমলকুমারের ‘শ্যাম-নৌকা’ নিয়ে আলোচনার আগে বিশ্ববিখ্যাত তিনটি রচনা নিয়ে সামান্য কয়েকটি কথা বলে নেওয়া দরকার। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, তিনটি রচনাকেই একাধারে ছোট উপন্যাস, নভেলা ও নভেলেট তিন নামেই আখ্যায়িত করা হয়। এই তিনটি রচনা হলো— টমাস মানের ‘ডেথ ইন ভেনিস’ (১৯১৩), আলবেয়ার কাম্যুর ‘দ্য আউটসাইডার’ (১৯৪২) এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দ্য ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ (১৯৫২)। এর ভেতরে টমাস মানের ‘ডেথ ইন ভেনিস’ ও হেমিংওয়ের ‘দ্য ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ আকৃতিতে-প্রকৃতিতে নভেলা। কিন্তু বর্ণনা ও নির্মাণে নভেলেটের গুণ সম্পন্ন। কিন্তু হেমিংওয়ে তার এ রচনাটিতে সাহিত্যিকের দার্শনিকতা যে-মাত্রায় উন্নীত এবং জীবনদৃষ্টি যে-উচ্চতায় বিস্তৃত— তা একে দিয়েছে উপন্যাসের হৃদয়। অন্যদিকে, কাম্যুর রচনাটি জটিলতা, এবং বাগভঙ্গি ও বর্ণনাভঙ্গির বক্রতায়, মনস্তাত্ত্বিক কুটিলতা এবং দার্শনিতায় পরিপূর্ণ উপন্যাসের সমতুল্য প্রায়। একজন সমালোচকের মতে, ‘‘উনিশ শতকে, ইউরোপের খণ্ড খণ্ড বড় মাপের উপন্যাস লেখা লক্ষ করা গেলেও বিশ শতকের মধ্যভাগে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা তার পরবর্তীকালে নভেলেট লেখার প্রবণতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বা আলবেয়ার কাম্যু যখন নভেলেট লেখেন তখন তা নিছক খণ্ড উপন্যাস নয়, উপন্যাসের খণ্ডাংশ নয়, অসম্পূর্ণ নয়।’’ (শুভঙ্কর;২০০০: ২৬৫) এরই প্রতিধ্বনি করে আমরা বলতে চাই কমলকুমারের এই ‘শ্যাম-নৌকা’ খণ্ড উপন্যাস নয়, উপন্যাসের খণ্ডাংশও নয়, অসম্পূর্ণ তো নয়ই, বলা যায় পরিপূর্ণ একটি নভেলেট।

প্রাপ্ততথ্য অনুযায়ী ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ১৩৭১ সংখ্যায় সালে ‘শ্যাম-নৌকা’ প্রকাশিত হয়। প্রথমে সেটি প্রকাশিত হয়েছিল ছোটগল্প হিসেবে। কমলকুমার গল্পটিতে বৃহৎ উপন্যাসের সম্ভবনা দেখতে পেয়ে এটিকে উপন্যাসে হিসেবে নির্মাণ করতে থাকেন। ‘শ্যাম-নৌকা’র এই উপন্যাস-রূপটি কোনো পত্রিকায় প্রকাশিত না হয়ে সরাসরি গ্রন্থকারে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হওয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৪ ফর্মা (২২৪ পৃষ্ঠা) প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি সেটি বাতিল করেন। (শোয়াইব; ২০০৯:১০৭) কমলকুমারের উদ্যোগ ‘শ্যাম-নৌকা’কে যে-স্তরে নিয়ে যেতে চেয়েছিল, সেটি আর পরিপূর্ণতা পায়নি; যেটুকু পেয়েছে তা আনন্দ পাবলিশার্স কর্তৃক প্রকাশিত কমলকুমার মজুমদারের ‘উপন্যাস সমগ্রে’র ‘শ্যাম-নৌকা’ হিসেবেই এখন বর্তমান। শোয়াইব জিবরানও সেই আঙ্গিকটিকে নভেলেটই বলতে চাইছেন। তাঁর মতে একই সময়ে প্রকাশিত ‘অনিলা স্মরণে’-র সঙ্গে এর বিষয়গত ও ভাবগত ঐক্যসূত্র আছে। ‘‘দুটোরই বিষয় পিতার প্রতি ভালোবাসা। আঙ্গিকের দিক থেকেও দুটি সম-আঙ্গিকের। এগুলি আঙ্গিকের দিক থেকে উপন্যাস হয়ে উঠতে পারেনি, আবার ছোটগল্পও থাকেনি।’’ (শোয়াইব;২০০৯:১০৮) তাই এটিকে নভেলেট হিসেবেই বিবেচনা করাই অধিক যুক্তিযুক্ত মনে হয়। এই নভেলেটের কেন্দ্রীয় বিষয় পিতার প্রতি এক বালকের ভালোবাসা।

রফিক কায়সার ‘শ্যাম-নৌকা’র সাদৃশ্য পান ‘অন্তর্জলী যাত্রা’র সঙ্গে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের লোকাচার, গ্রামীণ বাংলাদেশ, মানুষের ধার্মিকতা, অর্থাৎ সবমিলিয়ে ‘শ্যাম-নৌকা’ তাঁর মতে, হারানো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।

‘‘কাহিনী ও পটভূমির দিক দিয়ে ‘শ্যাম-নৌকা’র সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে অন্তর্জলী যাত্রার। ‘শ্যাম-নৌকা’ অন্তর্জলী যাত্রার পরিপূরক রচনা। অন্তর্জলী যাত্রার মূল চরিত্র বৈজুনাথ ‘শ্যাম-নৌকা’য় ব্রাহ্মণকুমার হয়ে এসেছে। চাড়াল বৈজুনাথের সুতীব্র প্যাশন কালাচাঁদে অনুপস্থিত। মৃত্যু ও সৌন্দর্যকে উভয়েই অবলোকন করেছে একই দৃষ্টিতে। অন্তর্জলী যাত্রায় বৈজু ধিকৃত হয়েছে তার নীচু জন্মের জন্য, ‘শ্যাম-নৌকা’য় কালাচাঁদ বিকৃত হয়েছে তার ধার্মিকতার কারণে।” (রফিক;২০০১: ৮৪)

শোয়াইব জিবরান ‘অনিলা স্মরণে’র সঙ্গে এর ভাবগত দিকে একটি ‘পিতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা’কে প্রথমে উল্লেখ করে পরে এর ভাবরূপের আরেকটি মিল পান ‘অন্তর্জলী যাত্রা’র সঙ্গে। তিনি মনে করেন, ‘‘ভাবের দিক থেকে উপন্যাসিকাটি অন্তর্জলী যাত্রা-র উত্তরসুরি। অন্তর্জলী যাত্রা-র বিষয় পরমাত্মার দিকে জীবাত্মা সীতরামের যাত্রা, আর শ্যাম-নৌকা উপন্যাসিকার বিষয় দেহরূপর নৌকায় বসবাসরত কালাচাঁদের পিতার আত্মার অনন্তের সাথে মিলন যাত্রা। উপন্যাসিকার নাম শ্যাম-নৌকা। বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের আধার চরিত্র রাধাকৃষ্ণের কৃষ্ণের অপর নাম শ্যাম। মানুষের আত্মা সে কৃষ্ণের বা ভগবানেরই অংশ। মর্তে দেহরূপ নৌকা তার আশ্রয়। কমলকুমার এ অর্থেই শ্যাম-নৌকা শব্দযুগল ব্যবহার করেছেন।” (শোয়াইব;২০০৯:১০৯)

নভেলেটটিতে শ্যাম-নৌকা শব্দবন্ধটি সরাসরি যেভাবে, সেটিও লক্ষণীয়—

ক.‘‘খালের সুউচ্চ পাড় হইতে, নিম্নে, শ্যাম-নৌকার নির্ব্বিকার, চট আচ্ছাদনে যাহাকে দেকে, সে তাহার বাপ, ইহজীবনের কারণ, এবং সে নিজে সম্বন্ধ;’’ (কমলকুমার; ২০০২:১৭৩)
খ. ‘‘গঙ্গার বক্ষে ঘূর্ণায়মান জলরাশি— এখানে সেখানে; মধ্যে এই শ্যাম-নৌকা, সম্মুখে পিতা একখানি হাত নৌকা ছাড়িয়া আছে, আর তিমিরাচ্ছন্ন, তমসাবৃত অন্ধকার। ক্রৌঞ্চ মিথুন অন্ধকার! জুতার অন্তঃস্থিত ব্যবধানের অন্ধকার।’’ (কমলকুমার; ২০০২:১৭৪)

শোয়াইব মনে করেন, শ্যাম-নৌকায় কেন্দ্রীয়ভাব প্রবলভাবে অসুস্থ ও প্রায় মৃত্যুপথযাত্রী পিতার প্রতি বালক কালাচাঁদের ভালোবাসা। কিন্তু এর ‘ভাববিগ্রহটি’কে ধর্মতত্ত্বের। কমলকুমার এই ভাব ও ভাববিগ্রহ পরিস্ফুটনের কমলকুমার ভাষাকে ‘স্থাবরতা’ দেওয়ার জন্য যে-কাহিনিকাঠামো, চরিত্রসমূহ ও বর্ণনা পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করেছেন তা আকৃতিতে ছোটগল্পসম কিন্তু প্রকৃতিতে উপন্যাস অধিক এক শিল্পনিপুণ আখ্যায়িকা। (শোয়াইব;২০০৯:১০৯) লক্ষণীয় যে তিনি ‘উপন্যাস অধিক’ কথাটির সঙ্গে একে ‘শিল্পনিপুণ আখ্যায়িকা’ বলে উল্লেখ করছেন।

অন্যদিকে রফিক কায়সার এর বিষয়বস্তুর ভেতরে ‘অসামান্য কিছু নেই’ বলেই মনে করেছিলেন। এতে কালাচাঁদের নৈতিক জীবন নিরবচ্ছিন্ন কোনোরকম নাটকীয়তার সুরে বাঁধা নয় এবং লেখকের অন্যান্য গল্পের মতো ‘শ্যাম-নৌকা’র গতি শ্লথ। (রফিক; ২০০১:৮৪-৮৫)

আমরা দেখেছি, নভেলেটকে একটি গতিময় শিল্প-আঙ্গিক হিসেবেই ধরে নিতে চাইছেন কেউ কেউ, যে কারণে দীর্ঘ উপন্যাসের চেয়ে এর চাহিদা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তারা মনে করেন। (রসিক;২০০০:২৭৮-৭৯) কমলকুমারের নভেলেটের এই যে শ্লথগতি তা প্রচলিত নভেলেটের সঙ্গে খাপ খায়নি। এছাড়াও তিনি কোনো নিটোল গল্প বলতে চাননি। (রফিক; ২০০১:৮৪) একটি নভেলেটে জীবনের সামগ্রিকতা যে-মাত্রায় থাকা প্রয়োজন রফিক কায়সারের ভাষ্যে তার সমর্থন মেলে— ‘‘শ্যাম-নৌকা’য় কমলকুমার বাঙালি বর্ণ হিন্দুসমাজের প্রায় সব স্তরের মানুষকে গল্পের চরিত্র ও ভূমিকায় ঠাঁই দিয়েছেন। মানুষের স্বরূপ ব্যাখার সাথে সাথে দেশকালকে সমমাত্রায় তুলে ধরেছেন লেখক। লুপ্ত প্রায় আচার অনুশাসন ও হারানো দিনের বাংলাদেশের জীবনযাত্রায় কমলকুমার আবিষ্কার করছেন সময়ে সংগে ব্যক্তি মানুষের সম্পর্ক কতটুকু।’’ (রফিক; ২০০১:৮৫)

এর কাহিনির দিকটিকে সামনে রেখেই রফিক কায়সার এটিকে ‘গল্প’ বলছেন। ‘শ্যাম-নৌকা’য় থাকা কাহিনিটি তেমন জটিল, কুটিল কোনো গল্প নিয়ে নির্মিত নয়। কালাচাঁদ নামের একটি বালক তার অসুস্থ পিতাকে সুস্থ করে তোলার জন্য হন্যে হয়ে ওঠে। সে একটি মহিষ চুরি করে। তাকে এ ব্যাপারে দুকড়ি ও রসকে সমর্থন দেয়। দুকড়ি ও রসকের কথা অল্প করে বিভিন্ন স্থানে হাজির করেছেন লেখক। এদের দুজনের অতীত ও বর্তমানের নানান রেখাচিত্র তাতে এসেছে। সেই সঙ্গে কালাচাঁদের এদের সঙ্গে যোগ এবং কালাচাঁদের নিজের অতীতের কিছু দৃশ্যকল্প এসেছে। অভাবের জন্য অল্প বয়সে সে যাত্রাপালা করে রোজগার করার চেষ্টা করেছিল, যোগ দিয়েছিল চণ্ডী অপেরায়। কিন্তু এর সঙ্গে যুক্ত মানুষের নানান নোংরা আচরণ ও বিকৃতি তাকে অল্প বয়সে সচেতন করে তোলে। চণ্ডী অপেরাতেই মা-রসকে আর দুকড়ি সঙ্গে তার ঘনিষ্টতা হয়। তারা দুজনেরই বয়সে ও স্বভাবে কালাচাঁদের চেয়ে বড়। তাদের সম্পর্কে সে স্বস্তিবোধ করে না, কিন্তু তাদের সাহায্য ছাড়া তার উপায়ও থাকে না। তাদেরই সাহায্যে কালাচাঁদ মহিষ চুরি করে তার পিঠে পিতাকে নিয়ে এক সন্ধ্যায় গঞ্জের হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। মহিষচুরির বিষয়টি তাকে পাপ-পূণ্যের দোলাচলে ফেলে দেয়। মহিষের পিঠে পিতাকে চড়িয়ে সে যখন নদীর কাছে পৌঁছায়, সে পিতাকে একটি নৌকায় তোলে। নৌকায় পিতা তাকে গালাগালিও করে। তারা বেশ বেলা করে গঞ্জের হাসপাতালে পৌঁছায়। প্রথমে সেখানে ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছিল না। যখন ডাক্তার এল, তার পিতার তখন শেষ দশা। ডাক্তার এসে পিতাকে মৃত ঘোষণা করলে সে আর্তনাদ করে ওঠে। সে পিতাকে কোনোভাবেই মরতে দিতে চায় না। জুয়া খেলে সে টাকা জোগাড় করতে চায়। কিন্তু সে জুয়া খেলায় তার সঞ্চিত তিনটি টাকাও খুইয়ে আসে। অতঃপর পিতাকে সে কলকাতায় নিয়ে যেতে চায়। সে পিতাকে আবারও নৌকায় তুলে পাগলের মতো মন নিয়ে রওনা দেয়। এদিকে পিতার মৃতদেহের দিকে তাকিয়ে সে আরো অস্থির বোধ করে। পিতা মরে গেছে, কিন্তু তার একচোখ খোলা দেখে সে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে সেই চোখের ওপর ঘুষি মারে।— এর ভেতরে দিয়ে পাপ ও বেদনার এক চূড়ান্ত স্তরে সে উন্নীত হয়। দুঃখের প্রবল অনুভব তাকে মৃত্যুর নতুন এক সৌন্দর্য দেখায়, যাকে সে বুঝতে পারে অনন্তের ভেতরে আবর্তিত হওয়া জীবনের ইতি কেবল মৃত্যুতেই সমাপ্ত হয় না। এদিকে নৌকা নদী থেকে সাগরের দিকে ভেসে যেতে থাকে।

এই যে কাহিনিটা বলা হল তার গতি এতটা দ্রুতও নয়, সরলরৈখিক তো নয়ই। কমলকুমার নিজের লেখক স্বভাব সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছিলেন যে, ‘‘আমি নিজে জ্যামিতির অনুগ্রাহী—... আমি ঠিক এনালিটিক কিউবিজমের পক্ষপাতী; এখানে টেনশনে রেখা সকল যতক্ষণ না সৃষ্টি (অনেকটা timber -এর মত অথচ এইগুলিকে অনেকে image বলেন) এতক্ষণ গল্প হয় নাই বলিয়া আমার ধারণা, আমি আদতে ইয়েরোগ্লিফিক লেখক নই। লেখার প্রেরণা যখন (সৃষ্টিক্ষমতা বাক্য বড় উচ্চমার্গের) এই ঘটনাপ্রবাহের নিকট যাওয়া আসা করে তখনই গল্পের বস্তুত্বের অনুভব হয়। ইহা স্মর্তব্য যে টেনশন ব্যতীত বস্তুত্বের স্থাবরতা সম্ভব নয়। অবশ্য এই এনালিটিক ব্যাপারে সহিত স্তাঁদালীয় বিশেষণের যথেষ্ট পার্থক্য আছে।’’ (কমলকুমার; ২০০৮;১৬)

অ্যানালিটিক কিউবিজমের প্রতি পক্ষপাতের বিষয়টি কেবল তাঁর কথার কথা নয়। আমরা দেখতে পাই তিনি তাঁর রচনাকে একদিকে চিত্র করে তোলেন, অন্যদিকে দৃশ্যগুলিকে নানান তলে ভেঙে দেন। ‘শ্যাম-নৌকা’য় তিনি জটিল গদ্যে বর্ণনা যেমন দিয়েছেন, সরল বর্ণনাও একই সঙ্গে দিয়েছেন। যেমন—‘‘রসকে কুটোটি দাঁতে দাঁতে চাপিয়াই বলিল, ‘এর মানে বৈষ্ণবীয় দীনতা— স্বরূপ যখন নীলাচলে প্রভুর কাছে এলেন, তাঁর ঠোঁটে-মহাপ্রভু’ বলিয়া কুটোটি অপসরণ করত স্মিত হাস্যে ধীরে বলিল, ‘

এখন তুই যদি আমার দীনভাব, কাতরতা দেখে তোর পাষাণ হৃদয় যদি’ বলিয়া ওষ্ঠের সেনসেনে লাল জিহ্বা বুলাইয়া অল্প স্বরে গান ধরিল— ‘চিকন কালা গলার মালা বাজন নূপুর পায়— বলি চিকন কালা!’ এই গীতে কালাচাঁদের কেমন ধারণা হইল, সে আরও ছেলেমানুষ শিশু, তাহার হাত ধরিয়া দণ্ডায়মান করত রসকে গাহিতেছে, তাহার পদদ্বয় টলিতেছে— আর যে এই সুললিত পদবন্ধনের গীতের আপ্লুত পরম আনন্দময় উষ্ণ অভিমান এবং কভু ম্লান ঝটিতি চতুর চাহনিসঞ্চার দৃষ্টে কালাচাঁদ খুব সম্ভব মোহিত, এ কারণে যে তাহারই নিমেষের আয়ত্তের মাঝে রসকের সুন্দর দুইখানি হাত— যাহার তালু নিত্য যাত্রা করার ফলে, যেহেতু তালুতে আলতা দেয়— বিশেষ রক্তিম, এত লাল যেন শ্রীশ্রীমা লক্ষ্মীর হস্তদ্বয়— গীতের সহিত অপূর্ব ভঙ্গিমা-শালীনতায় ঘুরে— তাহাতে বরাভয় দিয়াছে; রসকে এই অল্প বয়সেই স্ত্রী-ভূমিকায় অভিনয় দক্ষ তথাপি এখন, এক্ষেত্রে, নিঃসন্দেহে, অভিনয় করে নাই; শুধু কালাচাঁদ, যে এখন আসীন, তাহাকে উহার পাষাণ ভাবিতে ভাল লাগে, তাই এ গীত।’’ (কমলকুমার; ২০০২: ১৫৮)

কমলকুমার তাঁর গদ্যে কীভাবে অ্যানালিটিক কিউবিজম ফলিয়ে চলেন এবং টেনশান তৈরি করে কীভাবে বস্তুত্বের স্থাবরতাকে হাজির করেন তাঁর গদ্য যেখানে অপেক্ষাকৃত সরল হয়ে ওঠে, সেখানেও সেটি দেখা যায়— ‘‘মূহ্যমান বাপকে কালাচাঁদের কেমন যেন মায়া হইল, সে নিশ্চয় অনেক কথা মনে সাজাইয়াছিল, যে সকল বাক্যের মধ্যে আপনাকার বাহাদুরি সঠিক বিষয়, কিন্তু কোন কথাই সে বলিল না, বাপাকে ধীরে উঠাইয়া অতি সন্তর্পণে, শিশুজ্ঞানে, নৌকায় উঠাইয়া বাপের পা ধুইয়া, পরণের ঠেঁটি খুলিয়া সযত্নে মুছাইয়া, সত্বর মহিষ পৃষ্ঠ হইতে খড় চট আনিতে দৌড়াইল; এক আঁটি খড় মহিষকে দিয়া তাহাকে নমস্কার অন্তে নৌকায় ফিরিল। নৌকায়, বেশ প্রশস্ত, খড়ের বিছানায় বাপ সত্যই আরামে আপনাকে জড়াইয়া আছে; এ দৃশ্য দেখিয়া তাহার, কালাচাঁদের, শরীর পয্যর্ন্ত স্ফীত, পাঁচ পীর স্মরণ করত, দুর্গা নাম করিয়া নৌকা ছাড়িল, খানিক লগী দিয়ে আসিয়া বৈঠা ধরে। অনেকক্ষণ এইভাবে বহিবার পর, খাল যেখানে শেষ হইতে আর কয়েক রশি বাকি, সেখান হইতে দেখিল, বিরাট গঙ্গা! শুধু বলিল, ‘বাবা, মা গঙ্গা...’ (কমলকুমার; ২০০২: ১৬৮)

এখানে লক্ষণীয়, পাঁচ পীর ও দুর্গার স্মরণ নেওয়ার বিষয়টি। বাঙালি জীবনের ভক্তির ধর্মভেদ ঘুচে যাওয়ার বিষয়টি এখানে এসেছে। কলমকুমারের গদ্যের আরেক সূত্র— ‘কথারা ইশারা বটে’ (কমলকুমার; ২০০৮: ১৫)। তিনি এটা ভালো রপ্ত করেছেন তার গদ্যে। তাতে তিনি নিজের রচনাশৈলীর কোনো পরিবর্তন করেননি। বরং নিজের ধারণা অটুট রেখেই মনে করেন, ‘‘এই ইশারা পরমপর্য্যায় যাহা ওতঃপ্রোত বাচনিক সত্তা তাহা দেখা দেয়, কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য সুহাসিনীর পমেটম বা শ্যাম নৌকা আমার শত চেষ্টা সত্ত্বেও অনেককেই আনন্দ দেয় নাই। ঘটনা প্রবাহকে আমি লেখার উপজীব্য বলিয়া ধরি না, তাই অনেক ঘটনা বহুবার পরিশোধিত হইয়াও আমার নিকট রহিয়া গিয়াছে...’’ (কমলকুমার; ২০০৮: ১৫)

‘শ্যাম-নৌকা’ নিশ্চিতভাবেই ঘটনাপ্রবাহ আছে, আদি-মধ্য-অন্ত আছে, কিন্তু তিনি ঘটনাপ্রবাহকে ভেঙে দিয়েছেন, তাস বাঁটার মতো করে আগুপিছু করে করে নিয়ে গেছেন ক্রমে পরিণতির দিকে। তিনি বাঙালি জীবনের এমন তল থেকে ঘটনা তুলে এনেছিলেন যে, যাকে রফিক কায়সার বলেছেন,‘‘হারানো বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি’’। এই প্রতিচ্ছবিতে তিনি যেসব চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন শ্যাম নৌকা, সেটি একেবারে কম নয়, একটি স্বল্প আয়তনের নভেলেটের জন্য যথেষ্ট। কালাচাঁদ, পিতা, দুকড়ি, মা-রসকে, মহাদেব চাবিওয়ালা, রসিকের মা, আলম ফকির, কালাচাঁদের মা, ডোমের মাসী, বিহারী স্ত্রীলোক, শীতল ঠাকুজ্জী, সরযূ বায়েন, জসিম মিয়া, খোনা-মাস্টার, আগা কাবুলি, টগরের মা, ডাক্তার, ডোম, একজন রুগী, কডওয়ালা ও তার সঙ্গী, কয়েকজন জুয়াড়ী— মূলত এই চরিত্রগুলি তিনি এখানে হাজির করেছেন। কোনো কোনো চরিত্রের নামমাত্র নিয়েছেন, একটি দুটো শব্দ কি বাক্যে তাদের কথা বলেছেন। উল্লিখিত চরিত্রটি যে দৃশ্যে আছে সেখানেই জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বলাবাহুল্য মহিষটিও এতে একটি চরিত্র। আর নৌকা তো অনন্ত জীবনের পথে যাত্রার প্রতীক। তবে তিনি এর প্রধান চরিত্র মূলত চারটি— কালাচাঁদ, পিতা, রসকে ও দুকড়ি। কারণ এই কটি চরিত্রের অতীত ও বর্তমান, অর্থাৎ উপন্যাসে তারা যেখানে যেভাবে হাজির হয়েছে, সেটি সংক্ষেপে কিন্তু বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মূলত তিনি এর প্রধানতম চরিত্র কালাচাঁদকেই শুরু থেকে শেষবধি উন্মেষ থেকে বিস্তারের দিকে নিয়ে গেছেন।

আমার নভেলেট সম্পর্কে আলোচনায় বলেছি, একটি কি দুটি চরিত্র এর কাহিনিতে বিস্তার দেওয়া হবে। ‘শ্যাম- নৌকা’য় তেমনি করে একটি চরিত্র কালাচাঁদ ও তার জীবন সংকটের রূপায়ন পাই। তেমনি আছে বেশ কিছু স্থান ও স্থানের উল্লেখ— পর্ব্বতপুর, খেলাতগড়, ইটগড় বস্তি, বাদামতলা, মথুরানগর, হাটখোলা, গোলাপগঞ্জ, চব্বিশ পরগণা ও কলকাতা, এসেছে জলাভূমি, নদী ও সাগরের কথা। এই নভেলেটটি আকারে বলতে গেলে একটি বড় গল্পের সমান। কমলকুমারের ‘উপন্যাস সমগ্রে’র মাত্র কুড়ি পৃষ্ঠার ভেতরে এটি মুদ্রিত এবং বারো হাজারের কম শব্দে এটি রচিত, সেদিক থেকেও এটি একটি নভেলেটের আয়তনেরই রচনা। এবং কমলকুমারের গদ্যে কোনো শিথিলতা যেমন নেই, তেমনি তা একটি ধ্রুপদী স্বরে বাঁধা।

এছাড়াও আমারা দেখে নিয়েছি যে কমলকুমার প্রথমে একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন ‘শ্যাম-নৌকা’ নামে  অতঃপর এর ভেতরে দীর্ঘ উপন্যাসের সম্ভবনা দেখে, এটিকে তেমন মাপের উপন্যাস হিসেবেই রচনা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বর্ধিত অংশটি তাঁর কাছে জুৎসই মনে না হওয়ায় তিনি সেটি বাতিল করেছেন। ফলে এটা বলতে কোনো বাঁধা নেই যে ‘শ্যাম-নৌকা’ আদতে নভেলেটের চেয়ে দীর্ঘ হতে পারত না। তদুপরি এর আকার ছোট হলেও প্রাণ ও আত্মা উপন্যাসের। সেদিক থেকেও এটি নভেলেট হিসেবে গণ্য।

তবে কোনো নভেলেটের মূল ও প্রধানদিকটি যে চিন্তাশীলতা, মো ইয়ান যেটিকে বলেছেন সাহিত্যকর্মের মূল ব্যাপার, আয়তন দিয়ে বিচার না করে এর লেখকের আরাধ্য চিন্তা ও দার্শনিকতার সঙ্গে যখন পাঠকের যোগ ঘটে তখনই সেটি সার্থক সাহিত্যকর্ম হয়ে ওঠে। এতে মিলে তিনটি বিষয়— জীবনবিষয় সচেতনতা, ভাষাবোধের উন্নতি এবং সর্বোপরি পাঠ করে আনন্দলাভ, যেটি নিয়ে কমলকুমার সেই সময়ে কিঞ্চিৎ দুঃখ করেছেন যে, তাঁর শত চেষ্টায় পাঠকরা তাঁর রচনায় আনন্দ পাননি।

এর বৈষ্ণবীয় দৃষ্টি বা ধর্মতত্ত্বের কথা মনে রেখেও আমরা বলতে পারি, ‘শ্যাম-নৌকা’ সুস্থতার সন্ধানে অভিযাত্রা, যেটি শেষ পর্যন্ত সৌন্দর্য ও ভালোবাসার বোধে উন্নীত হয়। পিতার অসুস্থতা, কাশিতে রক্ত উঠতে দেখে এবং শরীরের দুর্গতি দেখে কালাচাঁদের আকুল হয়ে ওঠা থেকে পিতার মৃত্যু পর্যন্ত আমরা একটি পরম্পরা দেখি সেটি হল :

অসুস্থতা > রক্ত > অশ্রু > পাপ > যাত্রা >  দুঃখ> সৌন্দর্য > ভালোবাসা।

এখানে পাপ হয়েছিল মহিষচুরিতে, পাপাচার দেখেছিল চণ্ডী অপেরায়, দুঃখ তৈরি হয় যখন অভাবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল কালাচাঁদ এবং যখন এত চেষ্টার পর পিতার মৃত্যু হল। এক প্রবল বেদনা থেকে সে উপলব্ধি করে, সে দীনবন্ধুকে স্মরণ করে বলতে থাকে, ‘‘পীরিত নিয়ে আমি নয়-ছয় করেছি ঠাকুর এখন আমার কেমন ভালো লাগছে ঠাকুর আমি হেসেছি আমি ক্লান্ত হয়েছি ক্রন্দনে আমি ক্লান্ত... আমায় দুঃখ দাও নাথ, দুঃখ যা সুন্দর কেননা দুঃখই একমাত্র সৌন্দর্য!’’ (কমলকুমার; ২০০২:১৭৫) একই সঙ্গে সে বলছে, ‘‘পৃথিবীতে আবার যদি আসি; আমি আসবোই... ভালোবাসা দিও— দেখ আমার ভালোবাসা ধোবা ঘরে যাবে না’... এবং মনস্থ করিল পিতাকে আলিঙ্গন অবস্থায় মরিবে। ওষ্ঠে কাঁপিল ‘যে ভালোবাসা...” (কমলকুমার ;২০০২:১৭৫)

কথাটা তাকে রসিক বলেছিল, ‘‘ওগো কালাবাবু আমি মধুর ভাবের ভাবি, কাঞ্চন ফেলে কাঁচে গেরো দিইনি, পীরিত আমার ধোবা ঘরকে যাবে না...’’(কমলকুমার ;২০০২:১৭২) কালাচাঁদের চূড়ান্ত বেদনা তাকে এক সৌন্দর্যের মুখোমুখি করে দিল, তাতে সে নতুন করে উপলব্ধি করে, স্নেহ, মমতায়, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় ময়লা লাগতে দেওয়া উচিত নয়। এখানেই কমলকুমারের সাহিত্যচর্চার মূল উদ্দেশ্যর সঙ্গে মিলে যায় কথাগুলি।

সাহিত্যিকদের কোনো ভূমিকা আছে কিনা এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে কমলকুমার বলেছিলেন, ‘‘ভূমিকা আছে। স্নেহ কথাটাকে রেখে যাব, আমরা প্রেম কথাটাকে রেখে যাবে। আমরা শ্রদ্ধা কথাটাকে বাঁচিয়ে যাব। এই যে সব ক্লাস আসছে এ ক্লাস কথাগুলো জানতে পারবে। এ কথাগুলো ইন্টারপ্রিট করতে পারে, নিজেদের মধ্যে প্রোপাগেট করতে পারে।

আমরা সাহিত্যে কী করি? আমরা কতকগুলো সুন্দর কথা কতকগুলো ভক্তিরস এই কথাগুলো— যেমন ছেলেবেলাতে দেখলাম ওয়র অ্যান্ড পীস— তেমনি কোনো বইয়ে ভক্তির কথা, পিতৃস্নেহ, মাতৃস্নেহ, এটাতে স্ত্রীর ক্যারাক্টার খুব চমৎকার রয়েছে অর্থাৎ এরকম হওয়া উচিত।’’ (অর্ঘ্যকুসুম;১৯৯৩: ১৯) এবং কেন লেখেন— এর উত্তরে কমলকুমার বলেছিলেন, ‘‘নিজে ভাবতে চেষ্টা করেছি এটা, উত্তর পাইনি। এটা হলে অত্যন্ত বিলাসিতার একটা উত্তর দিতে হয়। কিন্তু ব্যাপারটা কি জানেন এটা লেখা উচিত এ রকম একটা বোধ থাকে।’’ (অর্ঘ্যকুসুম;১৯৯৩: ১৬)

ফলে দেখা যাচ্ছে লেখার কাজটি তাঁর ঔচিত্যবোধজাত এবং সেই ঔচিত্যবোধের ভেতর দিয়ে তিনি যে স্নেহ-প্রেম-শ্রদ্ধা কথাগুলি রেখে যাবেন, তাই তিনি করে গেছেন একটি পর একটি রচনায়। ‘শ্যাম-নৌকা’ এর আরো একটি দৃষ্টান্তমাত্র। তিনি তার চিন্তাগুলিকে ‘বহুবার পরিশোধিত’ করে উপন্যাস বা নভেলে, এবং নভেলা ও নভেলেটের উপস্থাপন করেছেন। তিনি তাঁর বিষয়ের জন্য কোন কোন ‘ফ্রেম’ চিন্তা করেছিলেন, সেটি তাঁর এক একটি রচনার আকার, আকৃতি, প্রকৃতি, নির্মাণ ও বর্ণনাভঙ্গি, গদ্য ব্যহারের ভেতরে দিয়ে স্পষ্ট করে গিয়েছেন।

বেশ কিছু ছোটগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নভেলা ও নভেলেট তিনি রচনা করে গেছেন। আমরা আগেও বলেছি ‘গোলাপ সুন্দরী’ ও ‘অনিলা স্মরণে’র কথা, যে রচনা দুটিকে নভেলেট বলা হয়েছে— দুটো রচনাই আধুনিক নাগরিক মানুষের সংকটের কাহিনির ভিত্তিতে রচিত, কিন্তু কমলকুমারের রচনাগুলির প্রধানতম দিক হলো লৌকিক জীবনের ভেতর দিয়ে বাঙালি শাশ্বত চেতনাগুলিকে উপস্থাপন করা, যা তিনি ‘অন্তর্জলী যাত্রা’, ‘সুহাসিনীর পমেটম’, ‘পিঞ্জরে বসিয়া সুখ’, ‘খেলার প্রতিভা’ ও ‘শবরীমঙ্গলে’র ভেতর দিয়ে রেখে গেছেন, তারই ধারা প্রবাহিত হয়েছে ‘শ্যাম-নৌকা’য়।

মূলত মৃত্যু ও সৌন্দর্য­— তাঁর সমস্ত রচনার প্রধান দুটো ভাববস্তু, আর এই দুই ভাবকল্পের জন্যই কমলকুমার মহৎ (রফিক;২০০১:৬৩); সেই ভাববস্তুই সংক্ষিপ্ত আকারে, দৃঢ় ভাষা এবং জীবনবোধ গভীরতা ‘শ্যাম-নৌকা’র মাধ্যমে আরেক দফা হাজির করেছেন, এতে ‘শ্যাম-নৌকা’ হয়ে উঠেছে তার সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী রচনা এবং নভেলেটের একটি সার্থক দৃষ্টান্ত।

রচনাপঞ্জি :

অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত : (১৯৯৩), নানা দৃষ্টিতে কমলকুমার মজুমদার, সমতট প্রকাশন, কলকাতা।
কমলকুমার মজুমদার :
(২০০২), উপন্যাস সমগ্র, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা।
(২০০৮), অগ্রন্থিত কমলকুমার, অবভাস, কলকাতা।
জাহিরুল হাসান : (২০০০),‘দূষণ: ভিতরে ও বাইরে’, কড়ি ও কোমল,  সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর, তৃতীয় বর্ষ, তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যা, সম্পাদনা: ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, কলকাতা।
দেবব্রত চক্রবর্তী : (১৯৯৮), ভেনিসে মৃত্যু, (মূল: টমাস মান), এম.সি. সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
দেবেশ রায় :
(১৯৯৪), উপন্যাসের নতুন ধরণের খোঁজে, প্রতিক্ষণ পাবলিকেশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা।
(২০০০), ‘কেন যে লিখি!’, কেন লিখি, সম্পাদনা: সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ, কলকাতা।
নীহাররঞ্জন রায় : (১৪১৬),রবীন্দ্র-সাহিত্যের ভূমিকা, নিউ এজ পাবলিশার্স, কলকাতা।
পূর্ণেন্দু পত্রী : (২০০৫), আমার রবীন্দ্রনাথ, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় : (১৪১৭), বঙ্কিম রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড: সমগ্র সাহিত্য, সম্পাদনা: যোগেশচন্দ্র বাগল, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা।
যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, আচার্য : (১৪১৩) ‘বিজয়া’, সমকালীন, নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন, ১ম খণ্ড, সম্পদনা: আনন্দগোপাল সেনগুপ্ত, করুণা প্রকাশনী, কলকাতা।
রফিক কায়সার : (২০০১), কমলপুরাণ, একুশে পাবলিকেশন্স লিমিটেড, ঢাকা।
রশীদ, মোহাম্মদ আবদুর : (২০১০), শহীদুল জহির স্মারকগ্রন্থ, পাঠক সমাবেশ, ঢাকা।
রসিক চৌকিদার : (২০০০), ‘প্রসঙ্গ নভেল ও নভেলেট’, কড়ি ও কোমল,  সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর, তৃতীয় বর্ষ, তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যা, সম্পাদনা: ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, কলকাতা।
শশীভূষণ দাশগুপ্ত : (১৩৬৩),  বাঙলা-সাহিত্যে নবযুগ,এ. মুখার্জী অ্যাণ্ড কোং (প্রাইভেট) লিঃ, কলিকাতা।
শুভঙ্কর ঘোষ : (২০০০), ‘প্রসঙ্গ নভেলেট’, কড়ি ও কোমল,  সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর, তৃতীয় বর্ষ, তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যা, সম্পাদনা: ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, কলকাতা।
শোয়াইব জিবরান : (২০০৯), কমলকুমার মজুমদারের উপন্যাসের করণকৌশল, বাংলা একাডেমী, ঢাকা।
সরোজ মোহন মিত্র : (২০০০), ‘বনফুলের নভেলেট’, কড়ি ও কোমল,  সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর, তৃতীয় বর্ষ, তৃতীয় ও চতুর্থ সংখ্যা, সম্পাদনা: ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য, কলকাতা।
সৈয়দ আকরম হোসেন : (১৯৬৯), রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস দেশকাল ও শিল্পরূপ, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

A S Hornby: (1995), Oxford Advance Learner’s Dictionery, Oxford University Press. London.
Christopher Davis & Thomas Webster: (2003), Dorling Kindersly Illustrated Oxford Dictionary, Dorling Kindersly and Oxford University Press, London.
Irving Howe: (1968), Classics of Modern Fiction: Eight Short Novellas, Harcourt, Brace & World, Inc., New York.
Kennedy, X.J.: (1976), An Introduction to Fiction, Little, Brown And Company, Boston- Canada.
Mo Yan: (2011), ‘Preface’, Shifu, You’ll Do Anything for a Laugh, Translated by Howard Goldblatt.

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
যেভাবে বানাবেন কাঁচা আমের টক-মিষ্টি-ঝাল আমসত্ত্ব 
এক যুগ আগে নিখোঁজ বিএনপিনেতার বাসায় পুলিশ: ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ, এসআই প্রত্যাহার
এক যুগ আগে নিখোঁজ বিএনপিনেতার বাসায় পুলিশ: ডিএমপির দুঃখ প্রকাশ, এসআই প্রত্যাহার
হাফ ভাড়া নিয়ে তর্ক, কলেজশিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ
হাফ ভাড়া নিয়ে তর্ক, কলেজশিক্ষার্থীকে বাস থেকে ফেলে হত্যার অভিযোগ
মঞ্চ থেকে হলো জুমার আজান,  নামাজের পর বক্তব্য দেবেন নেতারা
মঞ্চ থেকে হলো জুমার আজান, নামাজের পর বক্তব্য দেবেন নেতারা
সর্বাধিক পঠিত
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫৬ জনের পদত্যাগ, তুলেছেন দুর্নীতির অভিযোগ