X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতচিহ্নিত হাড়মাংস অথবা নিছকই আত্মজনের কথা

গৌতম গুহ রায়
২৬ মার্চ ২০২৪, ১৩:০০আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২৪, ১৩:৫৭

১০ম পর্ব

‘চণ্ডাল ক্রোধের কুসুম’

মধ্যখানে প্রশস্ত কালো মাটির চৌকো উঠান আর চারদিকে ঘর, এই আমাদের দেশবন্ধুনগর উদ্বাস্তু কলোনির ১০ কাঠা জমির বসতজমি। পশ্চিম দিকের ঘরে থাকেন আমার বড় জ্যাঠামশাই ও তাঁর পরিবার। আমাদের সেই যৌথ পরিবারের বড় ছেলে জীবনকৃষ্ণ, বড় জ্যাঠার বড় ছেলে। ভয়ানক মেজাজি, কাজ পাগল ও পরিশ্রমী এই দাদা সম্পর্কে প্রত্যেকেরই অভিযোগ—মাথাগরম ও চণ্ডাল মেজাজের জন্য নানা বিষয়ে দক্ষতা ও জ্ঞান নিয়েও জীবনটাকে কোনো দিশা ধরে এগোতে পারলেন না। আমাদের কাছে ‘দুলাল দা’, পোশাকি নাম জীবনকৃষ্ণ। আদরের দুলাল নয়, গোটা ‘জীবন’ তীব্র অনটনকে সঙ্গী করে জীবনযুদ্ধে সমর্পিত এই জীবনকৃষ্ণ বহুমুখী প্রতিভা অপচয়ের এক জীবন্ত উদাহরণ ছিলেন। ১৯৪৭-এর দেশভাগের সময় তার বয়স মাত্র ১১ বছর। পূর্ব থেকে পশ্চিমে আসা অগুনতি ছাত্রের মতো তাকেও পড়াশোনার পাঠ অসমাপ্ত রেখেই ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসতে হয়। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সময়ে অসাধারণ সমস্ত নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় রাখতেন তিনি। সেই কাজের পেছনে ধৈর্য ধরে তাঁর লেগে থাকাটাও ছিল অনুকরণীয়। কিন্তু এই মেধাবী ছাত্রটিকে যাবতীয় স্বপ্নের আলো দেশভাগের আগুনে পুড়িয়ে ছাইভস্ম নদীর জলে ভাসিয়ে চলে আসতে হয়, উদ্বাস্তু জীবনে ভেসে যায় সম্ভাবনার শেকড় চ্যুত কুসুম। এপাড়ে এসে দুমড়ে-মুচড়ে যায় তার কৈশোর, বড় জ্যাঠার রঙের কাজে যুক্ত হয়ে যান ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য। এর মাঝেও নিজের আগ্রহে শিখেছিলেন সিনেমার প্রজেক্টর অপারেটরের কাজ, ফটো বাঁধাইয়ের কাজ, লেটার প্রেস বা ছাপাখানার যাবতীয় কাজ—মেশিন চলানো থেকে টাইপ কম্পোজ, দপ্তরির কাজ। একসময় ফটোগ্রাফারের নেশাকে পেশা করে বাড়িতেই স্টুডিও বানালেন। টিনের ছোট্টো ঘরের ভেতরটাকে কালো মার্বেল পেপারে মুড়ে নিশ্ছিদ্র করলেন। তখনো সাদাকালো ছবির যুগ। যন্ত্রপাতি কিনে বা বানিয়ে তাঁর শখের ফটোস্টুডিও। আমি মাঝে মাঝে সেই অন্ধকার ঘরে ঢুকতাম, একটা লাল আলো ঘরের ভেতর জ্বলে থাকতো। একটা ট্রের মধ্যে সিলভার নাইট্রেট তরলের মধ্যে হতো ছবি ‘ডেভেলপারের’ কাজ, সাদা কাগজ ধুয়ে ধুয়ে দাদা তাতে ফুটিয়ে তুলছেন দৃশ্যপটের ছবি, বা মুখের ছবি, বিয়ের, অন্নপ্রাশনের ছবি। সবটাই সাদা-কালো। আর উপরের দিকে দড়িতে ক্লিপে আটকে ঝোলানো ফিল্ম শুকোচ্ছে, সাদা কালো নানা মাপের ছবি ক্লিপে আটকে ঝুলতো। সেই সাধের স্টুডিওটাও একদিন বন্ধ হয়ে গেল। উন্নত প্রযুক্তি ও অর্থের সঙ্গে লড়াইতে পেরে উঠতে পারছিলেন না তিনি। এরপর এক বোটানিস্টের কাছে তালিম নিয়ে বাগান পরিচর্যা শিখেছিলেন, বাড়িতেই বানিয়ে ছিলেন ফুল গাছের নার্সারি। ছবি আঁকা ছিল তার জন্মগত প্রতিভা। এত কিছু শিখেও কোনো নির্দিষ্ট জীবিকায় স্থির হতে পারেননি। অস্থির ভাবে এ জায়গা ও জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন। শেষ জীবনের অনেকটা সময় আঁকড়ে ধরে ছিলেন একটা কাজই, সেটি সাংবাদিকতা ও পত্রিকা প্রকাশ। শেষ বয়সে, রোগাক্রান্ত দুলালদাকে দেখেছি ভাঙ্গা সাইকেল চালিয়ে ছাপাখানায় কাগজ পৌঁছে দিচ্ছেন, পত্রিকা ছাপা হলে সেই ডিমাই সাইজের চার পাতার ‘অজানা’ ঘুরে ঘুরে ফেরি করতেন। প্রতি মাসের প্রথম দিনে সবহারানো মানুষটা তাঁর চোখের সামনে মেলে ধরতেন ছেপে আসা সেই সংবাদ সাহিত্যের পত্রিকা। সেই মুহূর্তে তাঁর রক্তশূন্য হলদে চোখ, চামড়া কুঁচকে আসা মুখ, দাঁত বিহীন মুখের হাসি সব যন্ত্রণাকে পরাজিত করে সূর্যোদয়ের আলো হয়ে ওঠতো।

আমার বাবা যেমন রাজনীতির ব্যস্ততায় গৌণ করেছিলেন ব্যক্তিগত আর্থিক সঙ্গতি অর্জন প্রচেষ্টাকে—একের পর এক ব্যবসার চেষ্টা করেছেন আর ছেড়েছেন। অনেক সময় দুলালদা তাঁর সেই সমস্ত ব্যবসা প্রচেষ্টায় যুক্ত হতেন। বাবা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা অগ্রজ ওদলাবাড়ির চক্রবর্তী ব্রাদার্সের মধ্যমজন পাতু চক্রবর্তীর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে একাধিক ব্যবসায় নেমে ছিলেন—কাঠের ব্যবসা, বেতের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, চা বাগানে স্টেশনারি, যন্ত্রপাতি সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসা, ঠিকাদারি ইত্যাদি। তাঁদের যৌথ প্রচেষ্টার একটি ছিল সিনেমা হল। হলদিবাড়িতে সত্তরের দশকে একটি সিনেমা হল দেওয়া হল। শিবানী সিনেমা। সেই সিনেমা হলের প্রজেক্টর অপারেটর ও ম্যানেজার করে পাঠানো হল দাদাকে। ১৯৭৪, আমার বয়স তখন ১০ বছর। একদিন দাদা আমাকে নিয়ে গেলেন সেই সিনেমা হলে, আমার  প্রথম এবং শেষবার সেই সিনেমা হলে যাওয়া। কাঠের দোতলা বাড়ি, টিনের ছাউনি, প্রান্তিক শহরের সেই একমাত্র সিনেমা হল। অস্পষ্ট মনে আছে তখন সেখানে সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলছিল। কোনো সিনেমা হলে সেটাই আমার প্রথম সিনেমা দেখা। সংলাপ শোনা ও দৃশ্য দেখা ছাড়া গল্পের বাইরের গল্প তখন খুব একটা বুঝতাম তা নয়, তাই এর অনেক পরে আবার ‘অশনি সংকেত’ দেখেছি। এই বাংলার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর ওই বাংলার ফরিদা আখতার ববি বা ববিতার অভিনীত, বিভূতিভূষণের উপন্যাস নির্ভর সেলুলয়েড কাব্য। ‘অশনি সংকেত’ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, মহামারি, ক্ষুধার যন্ত্রণা, শহুরে নাগরিকের মধ্যে শ্রেণি অবস্থান ও আভিজাত্যের যে কুহুকি স্তর বিভাজন তা স্পষ্ট করে দেয়। সেলুলয়েডের সাদাকালোর ভেতর ক্ষুধার ও শোষণের বিগত ও আগামীর রক্তচিহ্ন লেগে ছিল। সেই সময়ের ক্ষত ও চিহ্ন বুকে নিয়ে দর্শকেরা বাসায় ফিরতেন। ছোটবেলায় দেখা আমাদের সিনেমা হলের বাইরে দেওয়ালে সেঁটে দেওয়া সিনেমার আট বাই বারো সাইজের পোস্টারটার ছবি মনে গেঁথে আছে।

ততদিনে দাদার বিয়ে হয়েছে। প্রায় চালচুলোহীন এই দাদার বিয়ে দেওয়া হয়েছিল ডুয়ার্সের অভয়ারণ্য সন্নিহিত শিশুবাড়িতে। বৌদি স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতেন না আবার বোবাও ছিলেন না। যখন আমাদের সেই সিনেমা হল পুড়ে গেল তখন বৌদি অন্তঃসত্ত্বা। এরপর কিছুদিন দাদা কর্মহীন, বেকার। অভাবক্লিষ্ট পরিবারের বড় বউ সন্তানের জন্ম দেওয়ার অপেক্ষায়। কিন্তু ক্রমশ দেখা দিতে থাকল তাঁর নানা শারীরিক অসুবিধা—অপুষ্টির সমস্যা। বৌদির কাকা শিশুবাড়ি থেকে এসে সবদিক বুঝে তাঁদের মেয়েকে নিয়ে গেলেন ‘বাপের বাড়ি’। সেখানে দাদা নিয়মিত গিয়ে খোঁজ নিয়ে আসতেন। নির্দিষ্ট দিনের আগেই বৌদিকে বীরপাড়া জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হলো। দাদা ও ছোটকাকা সেদিন দুপুরে হাসপাতালে গেলেন। রাতে কাকা দুঃসংবাদটা নিয়ে ফিরে এলেন। শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে বৌদি প্রসবকালীন অবস্থায় হৃদ্‌যন্ত্র স্তব্ধ হয়ে চিরশান্তিতে চলে গেছেন, এরপর জানালেন যে ‘বেবি ভালো আছে’। বৌদিকে শিশুবাড়িতেই দাহ করে পরদিন ফেরেন দাদা। সদ্যোজাত শিশু কন্যাকে কিছুদিন বৌদিদের বাসায় রাখা হয়, ওর দিদা ও মামিমার কাছে।

দাদা ফিরে এলেন। বেশ কিছুদিন বাড়িতেই আটকে রাখলেন নিজেকে। এরপর আমাদের বাসার সামনের ফাঁকা জমিতে ফুল গাছের নার্সারি করবেন ঠিক করলেন। নাম দিলেন প্রয়াত বৌদির নামে, ‘সুতপা নার্সারি’। একদিন ভোরবেলা সেই নার্সারি থেকে একাধিক মানুষের গুঞ্জন কানে এল। আমাদের শোয়ার ঘরের পাশেই সেই নার্সারি। ঘুম চোখে বেড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখি নার্সারির সমস্ত চারা গাছ কেউ কোদাল দিয়ে উপড়ে ফেলেছে। ঘটনাটা পরে জানলাম—জ্যেঠিমা ওই নার্সারির মধ্যে কয়েকটি লঙ্কা চারা লাগিয়েছিলেন। সেই দেখে দাদার মাথায় চণ্ডাল রাগ জেগে ওঠে।  রাগে নিজেই কোদাল দিয়ে গোটা নার্সারিতে লংকা কাণ্ড বাধিয়ে দেন। ভোরবেলায় একাই কোদাল দিয়ে উপড়ে ফেলেছেন সবকিছু, গোলাপ চারা, জুঁই ডালিয়া থেকে জিনিয়া ও পারিজাতের চারাগাছ সেখানে তালতাল উপড়ে ফেলা মাটির সঙ্গে লুটোপুটি খাচ্ছে। উপড়ানো বাগানের মাটিতেই দুহাতে মাথা চেপে বসে আছেন জ্যেঠিমা। রাগ মাথায় নিয়েই সেদিন দাদা বেরিয়ে যান। এরপর কিছুদিন তাঁর কোনো খোঁজ ছিল না। বেশ কিছুদিন পরে ফিরে এসে জানান মেটেলিতে সিনেমা হলে অপারেটরের কাজ নিয়ে কিছুদিন সেখানে ছিলেন। সব ছেড়ে আবার বাসায় ফিরে এলেন। এবার ফটো বাইন্ডিং-এর একটা দোকান দিলেন শহরে।

এহেন জীবনকৃষ্ণ রায় এই সময়ই তাঁর ‘অজানা সাহিত্য’ নামের সংবাদ সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের কথা ভেবেছিলেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সেই সময়ের মফস্বল শহরগুলোয় শুধুমাত্র পত্রিকা প্রকাশ নয় তাকে ঘিরে একটা সাহিত্যের আড্ডাও হতো। এখানে উল্লেখ করে রাখি যে ষাটের দশকে আমার বাবাও সেই সময়ের সোশ্যালিস্ট পার্টির লোকজনদের নিয়ে একটা সংবাদ সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতেন, নাম ছিল ‘উত্তরপথ’। ‘উত্তরপথ’-এর প্রকাশক ছিলেন বাবা, সম্পাদকমণ্ডলী থেকে একেক সংখ্যায় দায়িত্ব একেকজন নিতেন। সত্তরের দশকের শুরুতে সেই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। আমি যখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র তখন আমি ও আমার বন্ধুরা একটা পত্রিকা প্রকাশের কথা ভাবি তখন সেই ‘উত্তরপথ’ নাম নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বছর দেড়েক ‘উত্তরপথ’ নামেই কাগজ করার পর সেই ‘উত্তরপথ’-এর গর্ভেই জন্ম নিল আমাদের লিটল ম্যাগাজিন ‘দ্যোতনা’।

আমার দাদা জীবনকৃষ্ণ তাঁর সাহিত্য সংস্থার নাম করলেন ‘অজানা সাহিত্য আসর’। এই নামেই পত্রিকা প্রকাশ করলেন। নামকরণের পেছনের ভাবনায় ছিল বৌদি, যে নিজের জঠরে লালন করা শিশুর মুখ দেখার আগেই পৃথিবী থেকে চলে গেছেন। মাতৃত্বের স্বাদ যার কাছে অজানাই থেকে গেলো। পত্রিকার পক্ষ থেকেই আয়োজিত হতো মাসিক সাহিত্য আসর। সেখানে নতুনরা কবিতা পড়তো, বড়রা শুনতেন, শুধরে দিতেন। সেই আসর থেকেই আমার লেখালেখি শুরু।

‘অজানা সাহিত্য আসর’-এর আড্ডায় তখন আসতেন সেই সময়ের জলপাইগুড়ি শহরের অনেক প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। শুরুর দিন এসেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক ভবানী গোপাল স্যান্যাল, দেবব্রেত মজুমদার। পরে বিভিন্ন সময়ে এই সাহিত্য আড্ডায় এসেছেন ডাঃ চারু চন্দ্র স্যান্যাল, স্মরজিত বাগছি, মোহিত ঘোষ, রবীন বাগছি, দেবাশিস ঘোষ। সেই সাহিত্য আসরে পড়তে হবে বলেই আমার প্রথম কবিতা লেখা। ‘শীতের সকাল’ নামে একটা ছড়া লিখেছিলাম আমি, আমার প্রথম লেখা। কবিতাটি দাদার ‘অজানা’-তে ছাপা হল। দশ এগারো বছরের আমি, কাগজে ছাপার অক্ষরে আমার নাম! সেই অনুভূতি কোনোদিন ভুলতে পারব না। মা বুকের মধ্যে জড়িয়ে রেখেছিলেন সেই পত্রিকা, তাঁর প্রথম সন্তানের নামে ছাপা প্রথম লেখা। এরপরের অর্ধেক শতক জুড়ে আমার সাহিত্যের স্বপ্ন মায়ের বুকের তাপেই লালিত হয়েছে।

কবিতা, সাহিত্য আড্ডা আমাকে নেশার মতো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিলো তখন। বাবার সাথে মাঝে মাঝেই যেতাম ডি বি সি রোডে তাঁর বন্ধু দেবাশিস ঘোষের বাসায়। এখন যেখানে ভারত সেবাশ্রম সংঘ একদিন সেখানে ব্যারাকের মতো কয়েকটি ঘর ছিল—তাতেই থাকতেন তাঁরা। দেবাশিস কাকু একদিন আমাকে বললেন কয়েকটি ছড়া লিখে ‘বসুমতী’ পত্রিকায় ছোটদের পাতার জন্য পাঠিয়ে দিতে। বিষ্ণু শর্মা সেই সময় এই পাতার দায়িত্বে ছিলেন। আমি তিনটা কবিতা বসুমতী পত্রিকার কলকাতার অফিসের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম। এরপর অপেক্ষার উসখুস। একটার পর একটা বৃহস্পতিবার আসে আর আমার মন খারাপ বাড়ে। আমাদের বাসায় তখনও কোনো পত্রিকা রাখা হতো না। বাবা দেবাশিস কাকুকে বলে রেখেছিলেন কবিতা ছাপা হলে খবর দেবেন। অবশেষে একদিন উত্তেজিত বাবা হাতে করে নিয়ে এলেন বসুমতী পত্রিকা, শুধু ছোটদের পাতাটি। ডান মার্জিনে আমার কবিতা ‘জীবন রেখা’। কলকাতার দৈনিক কাগজে আমার প্রথম কবিতা প্রকাশ, ১৯৭৪-এর ডিসেম্বর সম্ভবত। এরপর একদিন সাহস করে ‘টাপুর টুপুর’-এর কবি মোহিত ঘোষের টেম্পল স্ট্রিটের বাসায় গেলাম। একদিন আমি ও ভোটন ডি বি সি রোডের ‘ডানপিটেদের আসর’-এ। ডাঃ স্মরজিত বাগছি ( তিনি এই বানানই লিখতেন) তখন শিশু কিশোরদের নিয়ে ডানপিটেদের আসর করছেন। ছোটদের পত্রিকা প্রকাশ ছাড়াও নিয়মিত নানা অনুষ্ঠান হতো। ডানপিটেদের আসর-এর পত্রিকায় ছড়া বের হল। সেই সময় ‘ডানপিটেদের আসর’ শিশু কিশোরদের পত্রিকা হিসাবে সম্ভ্রমের জায়গা করে নিয়েছিল। ডি বি সি রোডের সেই বাড়িতেই রবীন বাগচির উদ্যোগে ‘সুজন ছড়ার আসর’। সেখানে নিয়মিত ছড়া পাঠ ও আলোচনা হতো।আসতেন আলিপুরদুয়ারের নির্মলেন্দু গৌতম, ধুপগুড়ির পুণ্যশ্লোক দাসগুপ্ত, ময়নাগুড়ীর সতী সেনগুপ্তেরা। এভাবে ক্রমশ কৈশোরেই কবিতা আমাকে জড়িয়ে নিল। এবং পাহাড় প্রেম। এবং লাইব্রেরি। এবং নকশালবাড়ি। আমার চিন্তা-চেতনা অস্তিত্বে ক্রমশ তখন আগুনখেকো সর্বনাশের ঘোর।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
‘আমার স্ত্রী শুধু অন্যের পরামর্শ শোনে’
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
লিভারপুলের নতুন কোচ স্লট!
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের দাসত্ব করছে: ওবায়দুল কাদের
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!