X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়তিবৃত্ত

পলি শাহীনা
০৪ মার্চ ২০২৩, ১৭:০৩আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৩, ১৭:০৮

এরিকের বাসায় এর আগেও বহুবার এসেছি। কিন্তু আজকের আগে এমন ভরদুপুরে এতো তীব্র ক্ষুধা পেটে নিয়ে সম্ভবত আসিনি। আমার মায়ের হাতের রান্না কিংবা বাংলাদেশি খাবারের পর এখন আমার খাদ্য তালিকায় পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ইটালিয়ান খাবার। গত কয়েক বছর ধরে এরিকের মা ইতালীয় বংশোদ্ভূত হেলেনের হাতের খাবার গ্রহণের কল্যাণে আমার খাদ্যাভাসে এ পরিবর্তন এসেছে। বাঙালি ভোজন প্রিয় জাতি। আমার মা বলেন, রান্না আসলে একটা ভালোবাসা। রান্নার সময় ভালোবাসার সঙ্গে সময়ও দিতে হয়। স্বচক্ষে দেখেছি, এরিকের মা ভীষণ ভালোবেসে সময় নিয়ে যত্ন সহকারে রান্না করেন। আমার মায়ের রান্নার মতো তাঁর রান্নার সুঘ্রাণও আমার ঠোঁট, জিহ্বা ডিঙিয়ে প্রাণ স্পর্শ করে। পাস্তা আমার পছন্দের খাবার বলে মা প্রায়শই এটি রান্না করেন, কিন্তু হেলেনের রান্না করা পাস্তায় কী যেন একটা ম্যাজিক থাকে। অন্যরকম স্বাদ, অন্যরকম ঘ্রাণ, এ স্বাদ এবং ঘ্রাণের সমন্বয়টা ঠিক আমার মায়ের রান্নায় পাই না। ইতালির ঐতিহ্যবাহী খাবার পাস্তা বলেই হয়ত এরিকের মায়ের তৈরি পাস্তা এত সুস্বাদু হয়। তাঁর হাতের পাস্তা আমি ডাল-ভাতের মতো গোগ্রাসে খেলেও এরিকের খাওয়ার সময় ঠিক উল্টো চিত্র চোখে পড়তো। লক্ষ্য করি, খাওয়া শেষে সবসময় ওর প্লেটে কিছু পাস্তা অবশিষ্ট থাকে, যা আমার থাকে না।

নতুন সেমিস্টার শুরুর প্রথম দিনটিতেই এরিককে ক্লাসে অনুপস্থিত দেখে এ ভরদুপুরে ওর বাসায় এসেছি। ক্লাস শেষে ক্ষুধায় পেট চুঁ চুঁ করছে। আমাকে দেখেই সম্ভবত ওর মা দুপুরের খাবারে পাস্তা রেঁধেছেন। এরিক কিছু সময় আমার সঙ্গে ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করে ভেতরের ঘরে চলে যায়। আমি সোফায় বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। নিউইয়র্কে ম্যানহাটন শহরের ১১ তলার এপার্টমেন্ট থেকে দূরের মায়াবী নীলচে আকাশ হতে চোখ সরাতে পারি না। মনে মনে ভাবি, কোন চিত্রকর এঁকেছেন এমন ছবি। নীলের গায়ে ছোপ ছোপ সাদা মেঘের চলমান দৃশ্য মনে করিয়ে দেয় কাশবনের কথা। যেন নীল ক্যানভাসের গায়ে সারি সারি সাদা কাশফুল দুলছে। ভালোলাগার ঘোরে বুঁদ হয়ে থাকা আমি সম্বিৎ ফিরে পাই হেলেনের ডাকে।

টেবিলে খাবার পরিবেশন করে হেলেন বার কয়েক এরিককে ডেকেছে। ওর কোন সাড়াশব্দ নেই। আমরা খাবার সামনে নিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। অপেক্ষার আনন্দ ইতিমধ্যে ক্ষুধার রাজত্বের কাছে বিরক্তিতে রুপান্তরিত হয়। এরিকের মায়ের অনুরোধে আমি ওকে ডাকতে ভেতরের ঘরের দিকে দ্বিগুণ আনন্দে পা বাড়াই। দ্বিগুণ আনন্দের কারণ, ওকে ডাকাও হবে সঙ্গে ওর জন্য আনা চিঠিটাও রেখে আসা হবে। চিঠি লেখা আমার অন্যতম শখ। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এদেশে আসার পর চিঠি লেখার মত প্রিয় শখটি হারিয়ে যায়। একদিন গল্পচ্ছলে এরিককে প্রিয় শখের কথাটি জানাতেই ও বলে, চলো আমরা দু'জন দু'জনকে চিঠি লিখি। সে হতে আমরা প্রায়শই একে অপরকে চিঠি লিখি। চিঠির আদান-প্রদান প্রক্রিয়াটিও ছিল বেশ আনন্দময়। আমরা কখনো নিয়মমাফিক ডাকটিকেট লাগিয়ে পোষ্টঅফিসে গিয়ে চিঠি পাঠাতাম না। কেউ কাউকে না জানিয়ে বইয়ের ভাঁজে কিংবা ব্যাগে, উপহারের বাক্সে চিঠি পাঠাতাম। আজ ওর জন্য লেখা চিঠিটি সুযোগ পেয়ে ওর ঘরের কোথাও বা পড়ার টেবিলে রাখতে পারবো ভেবে দ্বিগুণ আনন্দে মন প্রজাপতির মতো নেচে উঠে। এরিকের ঘরে গিয়ে দেখি ও পাহাড়ের মতো স্থবির হয়ে জানালার গ্রীল ধরে বাইরে তাকিয়ে আছে। ঋষির মতো এতটাই কোন গভীর ধ্যানে ও নিমগ্ন যে দরজা খোলার ঝনঝন শব্দ কিংবা আমার অবস্থান, কোনটাই সে টের পেল না। টের পেলে তো পাথরের মত এমন নির্বিকার হয়ে থাকতো না। অন্যমনস্ক কিংবা দেখতে আত্মভোলা এরিকের পেছনে কিছু সময় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করি, কীসের মধ্যে ও এমন স্থাণু হয়ে ডুবে আছে? কিছুই বুঝতে পারি না। অবশেষে নীরবতা ভেঙে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম, মা অনেকক্ষণ ধরে খেতে ডাকছেন, অপেক্ষা করছেন, চলো, খাবে। ওহ, বলে এরিক খাবার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই আমি তড়িঘড়ি করে চিঠিটি ওর বালিশের নিচে রাখতে গিয়ে দেখি,  আমার মায়ের কিছুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া কাশ্মীরি চাদর খানা। মায়ের চাদর ওর ঘরে এলো কেমন করে? এরিক কেন মায়ের পুরাতন এ চাদর খানা চুরি করলো? চাদরটি হতে মায়ের গায়ের ঘ্রাণ এসে আমার নাকে লাগছে। প্রশ্নবাণে জর্জরিত আমি কোন উত্তর খুঁজে পাই না। আমার মাথা লাটিমের মতো ভোঁ ভোঁ ঘুরছে। ক্ষুধার কথা ভুলে নিঃশব্দে মায়ের হালকা সবুজ রঙের চাদরটির দিকে তাকিয়ে থাকি। বুকের গহীনে যেন গোরস্থানের নিস্তব্ধতা বইছে। টিভির রিমোটে আঙুলের চাপে যেমন করে নিমিষেই চ্যানেল বদলে যায়, মায়ের চাদরখানা তেমন করে মুহূর্তের মধ্যেই আমার মুড বদলে দেয়। হলওয়ে হতে এরিকের পায়ের শব্দ কানে ভেসে এলে দ্রুত চাদরখানা আগের মতো বালিশের নিচে রেখে ডাইনিং রুমে চলে আসি।

খাওয়ার টেবিলে এরিককে খুব নির্লিপ্ত মনে হলো। অবশ্য আজ বাসায় এসেও ওর মধ্যে রোজকার মত উচ্ছ্বাস দেখিনি। সবকিছুতে কেমন মনমরা মনে হলো। আমার মায়ের চাদরখানা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করে ওর মায়ের সামনে ওকে কোনো অপ্রীতিকর অবস্থায় ফেলতে চাই না। গত কয়েকবছর ধরে আমরা দু'জন ব্যক্তিগতভাবে এবং পারিবারিকভাবে এতটা কাছাকাছি চলে এসেছি যে, আমরা একে অপরকে যেমন খুব ভালোবাসি তেমনি সম্মানও করি। আমরা একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতেও পারি। এই প্রথম আজকেই এরিককে আমার কাছে অচেনা ঠেকছে। ওর মনের সঙ্গে আমার মনের যোগাযোগটাও কিছুটা কষ্টকর ঠেকছে। ও আমার মায়ের চাদর চুরি করলো কেন? প্রশ্নটি ক্রমশ প্রখর হচ্ছে। এ প্রশ্নের উত্তরের জন্য মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তোলপাড় চলছে। এ রহস্য আমাকে উন্মোচন করতেই হবে।

আমি আর এরিক, আমরা দু'জন একই ডিপার্টমেন্টে একই সাবজেক্টে পড়ছি। আমাদের রোজ দেখা হয়। ক্লাস শেষে ও দ্রুত পায়ে বেরিয়ে পড়ে। ক্যাম্পাসে দেখা হলে কম কথা বলে।  একাকী ওকে আত্মমগ্ন, অন্যমনস্ক লাগে। বহু দিনের চেনা মানুষটার এমন অচেনা আচরণে মায়ের চাদরখানি নিয়ে প্রশ্ন করার কথাও ভুলে যাই। দূর হতে ওর চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে বিহ্বল হয়ে ভাবতে থাকি, এ কী আমার সে এরিক, যে আমার ইউনিভার্সিটি জীবন শুরুর প্রথম দিকে আমার আশ্রয় হয়ে উঠেছিল, আমার মাথার উপর ছায়া হয়েছিল?

সদ্য অভিবাসন নিয়ে আসা আমি এ দেশের ইউনিভার্সিটিতে পা রেখে মনে হয়েছিল, কোন দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপিয়ে উঠেছি। আমার শরীরটা অবশ হয়ে আসছে, আমি আর দৌড়াতে পারবো না। ইউনিভার্সিটির শুরুর দিকটা, বিশেষ করে প্রথম বছরটা আমার কাছে দোযখ মনে হয়েছিল। সে সময়টায় এরিক যেন দেবদূত হয়ে এসেছিল আমার জীবনে। ওর সান্নিধ্যে আমি আত্মবিশ্বাস পেয়েছি, স্বস্তি পেয়েছি। ধীরে ধীরে ওর সাহায্যে আমি নতুন দেশ, নতুন ভাষা, নতুন সংস্কৃতি, নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে চলতে শিখেছি। ইউনিভার্সিটি জীবনের শুরুর দিনগুলোর কথা ভাবলে এখনও শিউরে ওঠে। এরিকের সাহায্য না পেলে হয়ত আমি ইউনিভার্সিটি হতে ঝরে পড়তাম নীরবে।

আমার কোনো বন্ধু ছিল না। একাকী ক্লাসে যেতাম, লাইব্রেরিতে যেতাম। বন্ধু বানানোর চেষ্টা করেও নানাবিধ কারণে একেক সময় একেক জায়গায় ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়তাম। ইউনিভার্সিটির ক্লাবে গিয়ে শ্বেতাঙ্গদের ভিড়ে বিড়ালের মতো গুটিয়ে বসে থাকতাম। ক্যাম্পাসে কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে পড়লাম মহা বিপাকে। ওদের সঙ্গে ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা দিতে গেলে সিগারেট, গাঁজা খাওয়ার আহবান আসে। ওদের আহবানে সাড়া না দেয়ায় বেমানান হয়ে পড়ি। ওরা আমার সম্পর্কে উৎসাহ পায় না। আমিও ওদের এড়িয়ে চলতে শুরু করি। আমার কারো সঙ্গে আর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে না। সেসব দিনগুলোতে প্রথম বুঝতে শিখি পিয়ার ফোর্সিং বিষয়টি। যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েও ক্লাসে ওরাল প্রেজেন্টেশনে খারাপ করি। আত্মবিশ্বাসের অভাব আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। অথচ, আমার রাইটিং এত ভালো ছিল যে প্রফেসর ইমেইল করে আমার অনুমতি নিয়ে সেগুলো সেইভ করতো, অন্য কোনো ক্লাসে ছাত্রদের সামনে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু বন্ধুত্ব, ক্লাব এবং স্পিচে গিয়ে আমি পিছিয়ে পড়তাম। পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বরও পেতাম। এ বিষয়গুলো এরিক খুব ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে। ক্লাস শেষে একাকী হাঁটার সময় বুনোফুলের সঙ্গে কথা বলতাম, ওদের আদর করে চুলে গুঁজতাম। এটিও যে এরিক খেয়াল করেছে বুঝতে পারি একদিন লাইব্রেরিতে গিয়ে। সেদিন হতেই ওর সঙ্গে আমার সখ্য গড়ে উঠে।

লাইব্রেরিতে গিয়ে সাধারণত আমি জানালার পাশে বসে নোট নিতাম। এসময় খোলা আকাশ আমার বন্ধু হতো। একদিন লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতেই এরিক আমার দিকে বেগুনি রঙের একটি বুনোফুল ধরে বলল, আমি কী তোমার বন্ধু হতে পারি? ওর এমন আয়োজন করা প্রশ্নে আমার ঘোর লাগে, মুখে কিছু সময় কোনো কথা থাকে না। কারণ, আমি মনে মনে শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলা শুরু করেছি ইতিমধ্যে। ওরা বেশীরভাগ রিচ, একটা সুপেরিয়র ভাব নিয়ে থাকে, এটি ভালো লাগতো না। এরিক তো তাদেরই দলের। ভাবলাম, ও কী আমার সাথে কোনো তামাশা করতে চাইছে? ক্লাসে তো দেখি ও খুব ভদ্র, নম্র। আমার এত এত ভাবনার ভিড়ে অনেক সময় কেটে গেলো। এবার সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি, সূর্যের প্রখর আলোয় ও আমার উত্তরের জন্য আকুল হয়ে আছে। মুচকি হেসে ওর হাত থেকে বুনোফুলটি গ্রহণ করে বলি, কেন নয়, নিশ্চয়ই। ওই দিনের পর হতে আমাদের যোগাযোগ আর কোনদিন বিচ্ছিন্ন হয়নি। ভালোলাগা হতে ভালোবাসার উম্মাদনা, একসঙ্গে পথচলা দিন দিন গাঢ় হয়েছে। পড়াশোনা, পরীক্ষা, ইন্টার্নশিপ, ক্যারিয়ার, কোন বিষয়ে আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র হতাশা জমলে ও আমাকে আশার আলো দেখিয়েছে, স্বপ্নের কথা বলেছে, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। শুধু বলেই ক্ষান্ত হতো না, সে পথে আমাকে হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে কেউ আমাদেরকে আলাদাভাবে দেখেনি। এরিক আমার ছায়া হয়ে, কিংবা আমি ওর ছায়া হয়ে বেঁচে থাকতে শুরু করি। বন্ধু হতে ক্রমশ এরিক আমার ফিলোসফার এবং গাইড হয়ে উঠে।

যে এরিক সদা আমার  ছায়ার মধ্যে দুলতো, তাকে আজ আমি খুঁজেই পাচ্ছি না। মায়ের চাদর ওর ঘরে কেন? এ প্রশ্নটি করার জন্যও না। ফোন করলে ধরে না, ধরলেও মেপে মেপে কথা বলে। আমার ভেতরটা অশান্ত হয়ে উঠে। আমার মনে ওর নিজেকে বপন করে কেন এমন এড়িয়ে চলছে? যে দিকে তাকাই ওকে দেখি। আজকের এই আমি সবটাই যে ওর তৈরি। আমার মুহূর্ত কাটে না ওকে ছাড়া। সর্বক্ষণ ওর সঙ্গে মনে মনে আমার কথোপকথন চলে। আমাকে অশান্ত করে এরিক কেন এমন শান্ত হলো? ভালোবাসা সৃষ্টি করা যায় শেষ করা যায় না। মন দেয়া যায় ফেরত নেয়া যায় না। এরিকের কী হয়েছে? এর হদিস আমাকে বের করতেই হবে।

মনের ভেতর অনেক তর্কাতর্কি শেষে সিদ্ধান্ত নিই, এরিকের বাসায় যাব, ওর সঙ্গে সরাসরি কথা বলবো। কিছু দিন ধরে আমাকে এড়িয়ে চলা ছাড়া ওর সঙ্গে আমার কোনো বেদনার স্মৃতি নেই। অতীতের আনন্দের স্মৃতিগুলো হাতড়াতে হাতড়াতে ওর বাড়ির সামনে গিয়ে উপস্থিত হই। উবার হতে নেমে স্বভাবসুলভ উপরে তাকিয়ে দেখি, এরিকের মা গাছের একা এক ডালে বসে থাকা পাখির মতো অন্যমনস্কতা নিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। বাসায় গিয়ে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে টের পাই এক ধূসর বিষন্নতা তাঁকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন -

- এরিকের কী হয়েছে, জানো?
- না, কেন?
- বেশ কিছুদিন ধরে ঠিকমতো খায় না। অন্যমনস্ক থাকে। রুমের দরজা বন্ধ করে রাখে। আগে ও এমন ছিল না।
- তাই না কি? কী হয়েছে জানতে চেয়েছেন?
- জিজ্ঞেস করেছি। এড়িয়ে যায়।

তাঁর কথা শুনে আমার ভেতর যেন ট্রাফিক সিগনালের সবুজ আলো নিভে গিয়ে লাল আলো জ্বলে উঠেছে। এরিকের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া এ লাল আলো নেভানোর অন্য কোনো উপায় নেই। ওর সঙ্গে কথা বলার জন্য রুমের দিকে হাঁটা ধরলে হেলেন জানালো, এরিক বাসায় নেই। কোথায় গিয়েছে, কিংবা কখন ফিরবে, কিছুই জানে না। কিছু না বলেই সকালে বেরিয়ে গেছে।

হেলেন আমাকে বসতে দিয়ে কফি বানাতে রান্নাঘরে যায়। এ ফাঁকে আমি এরিকের রুমে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দিই। আলো জ্বলা মাত্র আমার চোখ সোজা চলে যায় এরিকের বিছানায়, নকশিকাঁথার মতো ছড়ানো আমার মায়ের চাদরখানার দিকে। উত্তেজনায় আমার শরীর থরথর কাঁপতে থাকে। মায়ের চাদরখানার গায়ে আলতোভাবে হাত বুলাতেই মনটা বড় আকুল হয়ে উঠে। আমার মায়ের ঘ্রাণ ম ম করছে এরিকের পুরো ঘরজুড়ে। এরিক কেন এমন করছে? এর অর্থ কী? আমার মনের ঘরে অদ্ভূত এক এলার্ম বেজে উঠে। খুব ভয় লাগছে। আতঙ্কে আমার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। চোখের সামনে দিনের উজ্জ্বল আলো বিবর্ণ হয়ে আসে। ভেতরের হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে দেখে দ্রুত ওর রুম থেকে বেরিয়ে আসি।

হেলেন দুই হাতে দুই মগ কফি নিয়ে অপেক্ষা করছে টেবিলে। গরম কফি কাপ দু'হাতে দীর্ঘক্ষণ চেপে ধরে রাখতে দেখে হেলেন বলল, হাত পুড়ে যাবে, মা। সতর্ক হও। আমি মনে মনে বলি, হাত নয় আমার মন দাউদাউ পুড়ে যাচ্ছে। এ দহন দেখানোর উপায় নেই। কফি পান শেষে তাঁর থেকে বিদায় নিয়ে এলিভেটরে চেপে নিচে নেমে আসি। পেছন ফিরে দেখি পূর্বের মতো হেলেন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার দিকে চেয়ে আছে, হাত নাড়াচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমার এবং এরিকের পরিবারের মধ্যে একটা গভীর মমতা তৈরি হয়েছে। আমরা একে অপরের বাসায় আমন্ত্রিত হয়ে, এমনকি আমন্ত্রণ ছাড়াও বহুবার গিয়েছি সপরিবারে। আমার চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ হেলেন স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। বিপরীতে ছেলের জন্য তাঁর দুশ্চিন্তাও আমাকে গ্রাস করেছে। বাসা থেকে বের হওয়ার আগে হেলেন জড়িয়ে ধরে বলেছে -

- আমার ছেলেটার সঙ্গে কথা বলো।
কী হয়েছে ওর, দেখো মা।
হ্যাঁ, আজ ওর সঙ্গে কথা না বলে, দেখা না করে আমি বাসায় যাব না। যেখানে আছে ও, আমি সেখানেই যাব। ঘড়িতে পাঁচটা বেজে ১০ মিনিট। ডে লাইট সেভিংস টাইম শুরু হওয়ায় দিনের আলোর স্থায়িত্ব বেড়েছে। এ সময়ের বিকেলগুলো খুব লম্বা হয়। রাস্তায় এলোমেলো কিছু পথ হেঁটে একটি সবুজ বৃক্ষের তলে দাঁড়িয়ে এরিককে কল দিই। কয়েকবার রিং হতেই ও ফোন ধরে।

- কেমন আছো?
- ভালো।
- কোথায় তুমি?
- ফস্টার কেয়ার এজেন্সিতে।

ওর এমন উত্তর আমার কাছে অদ্ভূত লাগে। দেখা করার কথা ভুলে ও ফস্টার এজেন্সিতে কী করছে? মনে মনে এর পেছনের যুক্তি খুঁজতে শুরু করি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে ফোনের অপর প্রান্ত হতে এরিক জানায়, আজ রাতে ও আমার বাসায় আসছে। এসো, বলে ফোন রেখে আমি বাসার দিকে রওনা দিই। ফস্টার কেয়ার এজেন্সি - গোটা পথজুড়ে আমার মাথার ভেতর এ বাক্যটা বাজতে থাকে। ভাবনাটি বিবিধ চিন্তায় দুর্ভাবনায় রূপ নেয়। মাথার ভেতর টনটন ব্যথা অনুভূত হলে চুলের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে বিলি কাটতে থাকি।

আমার মায়ের চাদর ওর শোবার ঘরে কেন? আমার মা অপরুপ সুন্দরী, এটি ঠিক, তবে কী এরিক মায়ের প্রেমে...? আমি আর ভাবতে পারছি না। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমার মা আর এরিক- এ ভাবনার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করছি, পৃথিবীটা এখনই ধ্বংস হয়ে যাক। বড় রিক্ত বোধ করছি। আমার আপাদমস্তকজুড়ে এরিকের শ্বাস-প্রশ্বাস উড়ছে, আর এরিকের ঘরজুড়ে আমার মায়ের ঘ্রাণ ভাসছে। ছিঃ, এরিক এত বর্বর, নীচ ভাবতেই শরীর গুলিয়ে আসছে। ওকে আমার বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি। ইচ্ছে করছে ওর গলা টিপে ধরতে। আজ ওর সঙ্গে আমার শেষ বোঝাপড়া শেষে মাকে নিয়ে এ শহর ছেড়ে আমি অন্য কোনো দূরের শহরে চলে যাব।

দিনের আলো ফুঁড়ে রাতের অন্ধকার ফুটে উঠেছে। কোথা হতে বাতাসে উড়তে উড়তে একটা নির্মল সবুজ পাতা এসে ঝুপ করে আটকে যায় আমার জানালার কার্নিশে। বেদনা ও গ্লানিতে ভরা গভীর ভাবনা হতে বেরিয়ে আমি সবুজ পাতাটির দিকে তাকিয়ে থাকি। জীবন যখন ঝরাপাতার মত ধূসর হয়ে আসছে, তখন সবুজ পাতা উড়ে আসছে আমার ঘরের দিকে, নিয়তির কী নির্মম উপহাস - কচকচে পাতাটির দিকে তাকিয়ে আপনমনে এসব বিড়বিড় করতে থাকি। ঠিক তখনই বাসার কলিং বেল বেজে উঠে। সবুজ পাতা হতে চোখ সরিয়ে দরজা খুলে আবছা আলোয় এরিককে দেখতে পাই। ওকে খুব মনমরা এবং বিমর্ষ দেখায়, চোখজোড়া ধূসর হয়ে আছে।  ঝকঝকে মুখের চারদিকে খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্তর দেখে বুঝা যায়, অনেকদিন শেভ করেনি। ওর সদা উদ্ভাসিত মুখে অন্ধকারের ছায়া দেখে কিছুটা বিচলিত বোধ করি, পরক্ষণেই নিজেকে দ্রুত সামলে নিই। আমার দিকে হাই বলে হাত এগিয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক কর‍তে চায়, কিন্তু আমি গম্ভীর মুখে হাত গুটিয়ে রাখি। আমাকে পাশ কাটিয়ে পাখির বাসার মতো ঝাঁকড়া চুল ঠিক করতে কর‍তে ঘরের ভেতর চলে আসে। সোফায় বসে আত্মভোলা মানুষের মতো সামনের দেয়ালের দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে আমার মাকে ডাকতে থাকে।  আমি যে পাশে দাঁড়িয়ে আছি সেদিকে ওর খেয়াল নেই। মনে হয় ও আমার কাছে নয়, আমার মায়ের কাছে এসেছে।

- আমার সঙ্গে কথা না বলে মাকে ডাকছ কেন?

প্রশ্নটি ওর দিকে তলোয়ারের ফলার মতো তীর্যক ভাবে ছুঁড়ে দিই। আমার দিকে ফিরে উত্তর দেয়ার আগেই আমার মা এসে হাজির। মাকে দেখে এরিক সোফা হতে উঠে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে। এ দৃশ্য দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে পুনরায় সোফায় বসিয়ে জানতে চায়-
- কী হয়েছে? কাঁদছো কেন?
- আমি ইটালিয়ান নই, আমি বাংলাদেশি।

এই বলে ওর কান্নার শব্দ আরো বেড়ে যায়। মা ওকে আদর করে কান্না থামিয়ে জানতে চায়, কী বলছো, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। বুঝিয়ে বলো তো বাবা। আমি গভীর বিস্ময় নিয়ে মা আর এরিকের দিকে নির্বাক তাকিয়ে থাকি।

এরিক মায়ের কোলে মাথা রেখে বলতে থাকে- আমার মা বাংলাদেশি, বাবা ইটালিয়ান। মা পড়াশোনার জন্য এদেশে এলে বাবার সঙ্গে পরিচয় হয় একটা রেস্টুরেন্টে। পড়াশোনার ফাঁকে মা ওই রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। পরিচয় হতে প্রণয়, বিয়ে। আমার জন্মের পর বাবা-মায়ের সম্পর্কে ফাটল ধরে। বাবার স্বেচ্ছাচারিতা, সংসার এবং আমার প্রতি অমনোযোগ, অতিরিক্ত মদ্যপান মাকে অস্থির করে তোলে। মা অন্য ধর্মের একজন বিদেশীকে বিয়ে করেছে শুনে তাঁর পরিবার তাঁকে ত্যাজ্য করে। মাকে ছেড়ে বাবা চলে যাওয়ার পর মা অতিরিক্ত মানসিক চাপে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমার মা দীর্ঘশ্বাস টেনে  বলেন, বিধাতার কাছে মামলা করার উপায় জানা নেই আমাদের। জানা থাকলে তাঁর তৈরি অসম সংবিধানের ব্যবধানে বেশীরভাগ মানুষ রোজ মামলা করতো। তারপর কী হয়েছে?

- অতঃপর, মা চলে যান না ফেরার দেশে আর আমার জায়গা হয় ফস্টার হোমে। কয়েক মাসের ব্যবধানে সেখান হতে আমার ঠিকানা হয় বর্তমান আমার ইটালিয়ান বাবা-মায়ের কাছে। ফস্টার মায়ের অসীম আদর -যত্নে স্মৃতি পটে ঝাপসা আমার তিন/ চার বছর বয়সের জন্মের গল্প আরো ঝাপসা হয়ে আসে। একসময় আমার গভীর বেদনাদায়ক অতীত পরিচয় ভুলে তাঁদের সঙ্গে বেশ আনন্দেই বেঁচে ছিলাম। আমার ফস্টার বাবা-মা'র আকাশস্পর্শী ভালোবাসা আমার নাড়ি চেড়া শূন্যতা মুছে দিলেও মায়ের কথা মনে পড়তো। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মত মা আমার মনের শরীরে গেঁথেই ছিলো। ইউনিভার্সিটিতে এত এত মানুষের ভীড়ে বোধ করি নিয়তি- ই আমাকে নিয়ে এসেছে এমার কাছে। এমার সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে পরিচয়ের পর আপনাদের বাসায় এসে যখন দেখতাম আপনি ওকে লোকমা ধরে ভাত খাইয়ে দেন, তখন আমার সামনে মায়ের আবছা মুখ খানি ভেসে উঠতো। মা যখন মারা যায় আমার বয়স তখন চার বছর। আপনি যখন শাড়ির আঁচল দিয়ে এমার মুখ মুছে দিতেন আমার বুকে হাহাকার জাগতো। বাসার সামনের ওই খোলা মাঠে আপনি যখন এমার হাত ধরে হাঁটতেন, কিংবা ও দোলনায় বসলে পেছন হতে ধাক্কা দিতেন, এসব দেখে চোখের কোণে অশ্রু জমতো।

- আগে কখনো এসব জানাওনি কেন?

- খুব ছোট সময়ের ফেলে আসা স্মৃতির দূর্ভেদ্য প্রাচীরটি ডিঙাতে পারছিলাম না। যেন এক অন্ধকার টানেলের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছি, কিনারা খুঁজে পাই না। এমার মুখে শুনেছি, ঘুমের আগে আপনি ওকে  গান শোনান, গল্প বলেন। এসব শুনে আমার চোখের মণিতে মায়ের ছবি একটু-আধটু ভেসে উঠতে থাকে। কিন্তু ছবিখানা ঘনমেঘে ঢাকা। ঝুঁকে পড়া মেঘ সরিয়ে মায়ের মুখ খানা কোনোভাবেই আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে না। আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না, খেতে ইচ্ছে হতো না। চোখ বুজলেই শুনি মায়ের স্বর, মা আমাকে ডাকছেন। আমি অস্থির হয়ে উঠতাম। সেসব দিনে শুধুমাত্র আপনার কাছে এলে কী এক জাদুকরী আবেশে  আমার অস্থিরতা শীতল হয়ে আসতো। আপনার কাছে এলে আমার মায়ের মুখের চৌদিকে ঘিরে থাকা মেঘগুলো ধীরে ধীরে দূরে সরে যেত। আমি মায়ের মুখ খানা কিছুটা মনে করতে পারতাম। রাতে বিরাতে আপনার কাছে ছুটে আসতে পারতাম না বলে আপনার ব্যবহৃত চাদরখানা লুকিয়ে নিয়ে যাই। কষ্টে আমার দমবন্ধ হয়ে এলে আপনার ব্যবহৃত চাদরখানা বুকে, নাকে, মুখে চেপে ধরে যেন আমার মায়ের অস্তিত্ব টের পেতাম। আপনার চাদর চিবাতে চিবাতে রাতে ঘুমিয়ে পড়তাম। আপনার চাদরটি না বলে নিয়েছি, এজন্য মাফ চাইছি, আমাকে মাফ করে দিন দয়া করে।

- মায়ার এ চাদরটা তোমাকে ছায়া দিবে, ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত। তুমি শান্ত হও, বাবা।

ক্লান্ত এরিক মায়ের কোলে গুটিশুটি মেরে ছোট বাচ্চার মত শুয়ে আছে। আমার মায়ের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। মায়ের চোখের জলে এরিকের জামা ভিজে যায়। আমি সেদিকে তাকিয়ে ভাবছি, জীবন বিস্ময়কর এক রঙ্গমঞ্চ। জীবনের গল্প রহস্য ঘেরা সিনেমার গল্পের চেয়েও বৈচিত্রময়। মনে মনে আমি এরিকের কাছে ক্ষমা চাইতেই বেলি ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগে নাকে। এরিকের মত বেলি ফুলও যে আমার ভীষণ প্রিয়।

আমার মা চোখ মুছে রান্নাঘরের বেসিনে এরিককে নিয়ে নিজের হাতে ওর মুখ ধুয়ে শাড়ির আঁচলে মুছে দেয়। খাবার টেবিলে মা ওকে লোকমা ধরে ভাত খাইয়ে দেয়। আমি মুগ্ধ চোখে সে স্বর্গীয় দৃশ্যের দিকে অপলক তাকিয়ে রই।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া