X
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১৩ বৈশাখ ১৪৩২

পুলিশের ইতিহাস

সিফাত আরা বাঁধন
০১ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:০২আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:০৫

পুলিশের ইতিহাস প্রাচীন কাল থেকেই পুলিশ শব্দটির সাথে মানুষের বহু রকম আবেগ-অভিজ্ঞতা জড়িয়ে আছে। রাগ-ক্ষোভ, দুঃখ-আহাজারি, ঘৃণা যেমন আছে একদিকে; তেমনি মুদ্রার উল্টো পিঠে গর্ব, ভালবাসা ও সম্মানও আছে। যুগে যুগে পুলিশ বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা যেমন দিচ্ছে, ঠিক তেমনই শৃঙখলা রক্ষার কাজও করছে । তবে এর বিপরীতে তাদের অন্ধকার দিকও রয়েছে। দেশে-বিদেশে পুলিশ নিয়ে অনেক মজার ঘটনা বা কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। আবার মাঝে মাঝে তাদের বর্বরতার গল্পও শোনা যায়।

পুলিশ শব্দটি খুব বেশি পুরাতন নয়। এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল ১৬৪২ সালে প্রকাশিত “দ্য সেকেন্ড পার্ট অব দ্য ইন্সটিটিউট অব দ্য ল’স অব ইংল্যান্ড” বইয়ে। তবে প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন নামে এই ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। অর্থগত দিক থেকে পুলিশ হচ্ছে এমন একটি বাহিনী যারা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গ। এরা দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয় এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত থাকে। তাদের হাতে আইনসম্মত ভাবে গ্রেফতার করার ক্ষমতাও আছে। পুলিশের কার্যক্রম নানা দেশে নানাভাবে পরিচালিত হয়। তাদের আইনি কর্মকান্ডগুলো নির্দিষ্ট এলাকা ভিত্তিক বন্টন করা হয়ে থাকে। যা হোক, পুলিশ বাহিনী মূলত জনসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, যা জনগণেরই ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হয়।

এবার জেনে আসা যাক পুলিশের ইতিহাস। খৃষ্টের জন্মের বহুবছর আগে থেকেই পৃথিবীতে পুলিশ ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। প্রাচীন চৈনিক সভ্যতায় ‘পার্ফেক্টস’ নামক একটি বাহিনী ছিল। যারা শাসকের নিরাপত্তা ও সাম্রাজ্যের ভিতরের শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়জিত ছিল। এই পার্ফেক্টের মধ্যে নানা রকম দায়িত্ব অর্পিত ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে এই যে, পার্ফেক্টদের মধ্যে নারীও ছিল।  

প্রাচীন গ্রিসে দাসদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল একটি বাহিনী যাদের কাজও ছিল পুলিশিং। এথেন্সে ইরানি তিন শত দাস নিয়ে এই বাহিনী গঠন হয়েছিল। এদের বলা হত ‘রড বেয়ারার’ বা লাঠি বহনকারী। এদের কাজ ছিল প্রায় বর্তমান পুলিশের ধাঁচেই।

অগস্টাসের রোমান সাম্রাজ্যেও ‘ভিজিল’ নামের পুলিশ বাহিনী ছিল।

মধ্যযুগেও নানান নামে ও নানান রূপে পুলিশি ব্যবস্থা দেখা যায়। মধ্যযুগে স্পেনে এদেরকে বলা হত ‘হলি ব্রাদারহুডস’। এরা ছিল সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী। ফ্রান্সেও ছিল পুলিশি ব্যবস্থা। এদেরকে ‘মার্শাল’ বলা হত। নরম্যান সাম্রাজ্যের পুলিশকে বলা হত ‘সেরিফ’।

প্যারিসে ১৬৬৭ সালে কিং লুইস’র সরকার সুসংগঠিত প্রথম পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলে। আর এর মাধ্যমেই আধুনিক যুগের শুরুতে পুলিশের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর ইতিহাস পরিবর্তনের ধারায় এলো ফরাসি বিপ্লব। নেপোলিয়ান ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৮০০ সালে প্যারিসের পুলিশ বাহিনীকে পুনরায় গঠন করেন। এরপর ১৮২৯ সালের ১২ই মার্চ প্রথম পোষাকধারী পুলিশের আবির্ভাব ঘটে যাদেরকে বলা হত সিটি সার্জেন্ট। এভাবেই ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে পুলিশের যাত্রা শুরু হলো। আবির্ভাব হলো আধুনিক পুলিশের।

পুলিশ সারা বিশ্বে মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। প্রচলিত ধারনা অনুযায়ী তাদের সব সময় সৎ সাহসী ও সহায়ক ভূমিকায় থাকা উচিৎ। কিন্তু ইতিহাস বলে সব সময় এমনটা হয় না। তাদের ভালো দিকের পাশাপাশি আছে অন্ধকার দিকও। বিশ্ব জুড়ে পুলিশের বর্বরতার অনেক হাড় হিম করা ঘটনা রয়েছে।

১৯৬১ সালে ফ্রেন্স পুলিশ আলজেরিয়ানদের এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালায়। এতে প্রায় দুইশো লোক প্রাণ হারায়। আসলে সংখ্যাটি সঠিক জানা যায় না, কারণ পুলিশ লাশগুলো গুম করে ফেলেছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। নব্বইয়ের দশকের ঘটনা— ৩৩জন ব্রাজিলিয়ান পুলিশ ও ২৮জন মিলিটারি অফিসার তাদের চারজন সহকর্মী হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রিও ডি জেনেরিও’র একটি আবাসিক এলাকায় হামলা চালায়। ওই হামলায় ২১ জন নিহত হয়। পরবর্তীতে ৬জন অফিসারের খুনের দায়ে সাজা হয়। ২০১৪ সালের ঘটনা— জ্যাক নামের সাতাশ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে পিঠে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখন সে তার মায়ের সাথে রান্নাঘরে সহায়তা করছিলেন। একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে অফিসার এ্যাশবের সাজা হয়। 

যুগে যুগে পুলিশ শুধু রাবণের ভুমিকাই যে পালন করেছে তা কিন্তু নয়। তাদের ঝুলিতে রয়েছে অগুনতি ভালো কাজের নিদর্শন। মানবতার সেবায় প্রাণ উৎসর্গ করার মত ঘটনাও আছে বিশ্ব পুলিশের ইতিহাসে।

বাংলাদেশে পুলিশের ইতিহাস খুব বেশি দিনের না। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে পুলিশ নামে কিছু না থাকলেও এই ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থার কথা জানা যায়। মোঘল যুগে এসে এই ব্যবস্থা আরো উন্নত হয় এবং সুসংগঠিত হয়। ব্যক্তি কোতয়াল এসময় প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয়। এরপর বৃটিশরা এদেশ শাসন করতে আসে এবং তাদের প্রচলিত পুলিশিং ব্যবস্থা এদেশে প্রচলন করে। ৪৭ পূর্ববর্তী সময়ে এদেশের পুলিশকে বলা হতো ‘ইস্ট বেঙ্গল পুলিশ’ আর দেশ ভাগের পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘ইস্ট পাকিস্থান পুলিশ’। দেশের মুক্তির সংগ্রামে ইতিহাসে এই ইস্ট পাকিস্তান পুলিশের অবদান অনেক। পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে তারা রাজারবাগে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর এই বাহিনীটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ পুলিশ’।  

অন্যান্য দেশের পুলিশের মত, এদেশের পুলিশের ইতিহাসে যেমন আলোকিত দিক আছে, তেমনই আছে অন্ধকার দিকও। বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব করার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সফলতার সাথে অংশগ্রহন অন্যতম বিষয় হতে পারে। এছাড়াও ব্যক্তি পর্যায় থেকে বহু পুলিশ তাদের সাহস ও সততার পরিচয় দিয়েছে, দিচ্ছে। 

//জেডএস//
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৫)
‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে’ গুলি এনে ফাঁসলেন নিজেরাই
‘প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে’ গুলি এনে ফাঁসলেন নিজেরাই
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
মেলার প্যান্ডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে আগুন দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা
ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্র হাতে মিছিল, কুমিল্লা নগরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক
ককটেল বিস্ফোরণ ও অস্ত্র হাতে মিছিল, কুমিল্লা নগরে কিশোর গ্যাং আতঙ্ক
সর্বাধিক পঠিত
তরমুজের খোসা ত্বকে ঘষলে যেসব উপকার পাবেন
তরমুজের খোসা ত্বকে ঘষলে যেসব উপকার পাবেন
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি
‘২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে ৭০ মামলার ভয় দেখায় ডিজিএফআই’
‘২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে ৭০ মামলার ভয় দেখায় ডিজিএফআই’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
১৬ বছর পর রাঙামাটি টেক্সটাইল মিলস চালুর উদ্যোগ
১৬ বছর পর রাঙামাটি টেক্সটাইল মিলস চালুর উদ্যোগ