মৌসুমী যাত্রা
বিন্দুর মোড়ে শ্বেতকাঞ্চনের ছায়ায়
শিঙাড়া ভাজার দুপুরগুলো আলগা হয়।
পুরনো ওড়নায় কানামাছি খেলা ভেসে উঠলে
আরও আর্দ্র হও, আরও জিওল হও তুমি,
যেন, ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা শরীরে হরিণ উচ্চারণ করলেই—
তোমার কোলে করুণাময় এক জঙ্গল পাঠ হয়।
আড়াইটার ট্রেন কোনোকালেই তোমাকে ঠিকঠাক বাড়ি পৌঁছে দেয়নি
তবু পুরো পথ যেন ঘরের বিষয়বস্তু;
আরও কাছ থেকে দেখলে বোঝা যায়, তখনও
ঢেকে রাখা গরম ভাতের ধোঁয়া সরপোষে আটকে আছে।
কুয়াশার ধারণা নিয়ে তুমি ফিরে আসো
তোমাকে উইটনেস ধরে আরও শীত ছড়িয়ে পড়ে।
কৈবর্ত চোখ নিয়ে বেরিয়ে আসে পঞ্চবটী ঘাটের বুড়ো মাঝি
আর আমরা মোজার ভিতর বিড়ালের ওম নিয়ে খিদিরপুর যাব, যেখানে—
কাশ্মীরি শালে অড়হর ডালের ঘ্রাণ লেগে যায়।
জ্বরসুতা
পিঁয়াজফুলের দিন চলে গেলে—
বৃষ্টির মহড়া নিয়ে আসে জৈমিনি নাম কির্তন।
অথচ, শুকনো কাঞ্চনডালের ফিসফিস পেরুতেই—
চোখের পাতায় ভর করে মার্চের এক রুক্ষ সন্ধ্যা।
(একটা সন্ধ্যা যতটা মেঘহীন থাকলে গলার কাছে থিতিয়ে ওঠে অ্যাসিডিটি, ততটাই)
চারদিকে নগরবাতির উচ্চারিত আলোরা
আলোর মুখোমুখি অচেনা, আরও বেশি ভাসাভাসা তুমি।
অমন ঘন রিকশায়
শ্যামলী স্কয়ার থেকে খানিক ঝুঁকতেই—
সন্ধ্যার শেষভাগে শুকিয়ে যাওয়া আমি
তোমার ভেজা হাতের কাছাকাছি খানিক আদ্র হয়ে উঠেছি।
তখন একটা বাওকুমটো বাতাসের কথা ভাবছিলাম কি?
সমস্ত তিরতির ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
রেইনকারনেশনের গুপ্তবীজ ছড়িয়ে পড়েছে,
তুমি আড়াল হতেই, টের পেলাম
ঠোঁটের বাম সাইডে ইবাদতের মতো ভেসে উঠছে জ্বরসুতাটি।
বিশ্বাস
আবহাওয়ায় বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল না
তবু বৃষ্টি এলো,
লিননের দড়িতে মেলে দেয়া কাপড় আবার ভিজে গেল।
কাপড় থেকে টুপটাপ মুমূর্ষু রং ঝরছে পৃথিবীর দিকে।
গণেশ হালুই একটা পেট মোটা বেলুন থেকে বেরিয়ে—
সেই সব রং কুড়িয়ে নিচ্ছেন।
এমন কাজলা মেঘের দিনে—
রঙিন নায়িকারা ডানা মেলে উড়ে যাবে বলে,
শরীরে সাদা শিফনের শাড়ি ভিজেছিল।
জলপাইয়ের আচার
ঈশ্বরদী জংশনের আলাপ তুলে—
তোমাকে রোদহীনতার কথা বললে
তেজপাতার ফোঁড়নে একটা দুপুর ঝিমোয়।
অথচ খানিক রোদের আন্দাজে
ছাদের কাছাকাছি কিচিরমিচির পড়ে থাকে,
আর কিছু আচারের বৈয়াম
যেখানে নাতিশীতোষ্ণ ভাব
কিংবা গ্রিনহাউজের চাতুর্যে—
জলপাই ও সরিষার তেল স্বমহিমা হারিয়ে,
আরও প্রত্ন হয়ে ওঠে ধীরে।
আঙুলের ডগায় রসুনের চিড়চিড় ঘ্রাণ তখনও
ঠিক দুপুর খুলে দেখবে—
ভাইবোনের মতো জড়াজড়ি করে আছে অনেক রঙের রোদের আয়ন।
অশ্বত্থের তলে জন্ম নেয় চাক চাক নির্জনতা
অতিদূর বিরান ভূমি
নক্ষত্রদের ফেলে রাখা আলোয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে
বিগত যাতায়াতের মগ্নতা।
অথচ, জ্বলজ্বলে চোখের শেষ অধ্যায়েরও কিছু আগে
কোথাও ওত পেতে বনবিড়াল নেই,
বনবিড়াল আছে শুধু গৃস্থালি মোরগের তটস্থতায়।
অশ্বত্থের পাতায় সালোকসংশ্লেষণের স্নেহ জমে
এ জনপদ ভূমিপুত্রের আয়ু নিয়ে জেগে থাকে।
সন্ধ্যার পায়ে মোম গলে পড়লে
নামগানের সুর ধরে কোথাও বা পৌঁছে যায়—
আধেক পাখিবেলা, আধেক নিরালাকাল।
মেঘদিবসে অবিরাম অবিরাম জলের তৎকার।
সমস্ত কলহ থেমে যাওয়ার পর—
রবিশস্যের মরসুমে নির্জনতার কারবারিরা
সাঁওতাল নেতা সিদু ও কানহুর পিছু হেঁটেছিল একদিন,
যেখানে শালপাতার আয়োজনে দ্রোহ লিপিবদ্ধ হয়।