অনাবাদি জমিন
এমন করে দখলে নিলে যেন লাওয়ারিশ টুকরো জমিন
অনুর্বর, উচ্ছিষ্ট ভেবে অনাবাদি রেখে দিলে ফি-বছর
গাত্রদাহ সইতে সইতে কবে যে নিভে গেছে
ডুবে গেছে বেমরশুমি জলের ফাঁদে
ভেসে গেছে কূলের সীমানা অথই দূর্বিপাকে
স্মৃতির ওপার
অবাঞ্ছিত কোণে ঝুল, পরিশিষ্ট এক রাখি
অপরিণত দিনের ফাঁকে—
সর্ষে দানার মতো বুকের গহিনে ঝাঁঝালো নির্যাস
সময়ের ঘষা লেগে ক্ষয়ে গেছে কুঁড়েঘর
পোষ মানা স্বভাব নিয়েই যখন জন্ম, দেয়ালই স্বর্গ
নোঙর হয়েছে ভুল পোতাশ্রয়
দখলে চোরাবালি, শৈবাল আর ফার্নবর্গীয় উদ্ভিদ
চাইলেই, অন্তরাল ভেঙে বিদ্রোহ ঘোষণা করা যেত
শরীরে মাখা যেত নতুন রঙের আন্দোলন
কিন্তু
কেন যে অবচেতন অবগাহনে নিজস্ব বিস্তরণ
কেন যে অজস্র বর্ষণ শেষেও অনাবাদি জমিন
কেউ জানে না
ব্যবধান
ভাবনা আর হাত, ব্যবধান কমলেই
পেয়ে যাবে নদী—বয়ে চলেছে অবধি
উজানি নায়ের ধারায়
এক বুক নদী জলে নামবে বলে
সাঁতার শেখার বায়না ধরেছে প্রেমিক
চোরাবালি জলকেলি কাছে ডাকে তাকে
নিষিদ্ধ কোলাহলে হতে পারে পূর্তি
হাতের রেখায় রেখায় সন্ধ্যার গান
রাতের ঘ্রাণে তার প্রেমিক হওয়ার গল্প
শিরোনাম থাকতে নেই অতনু প্রেমিকের
খোলা বুক নহরে উন্মত্ত বিদ্যুৎ আহ্বান
শুধু তোলপাড়, বিচ্ছিন্ন ঝংকার
ব্যবধান কমে গেলে নিভে যায় পথ
জেগে ওঠে নিশাচর প্রাণ
অতন্দ্র প্রহরের উন্মুখর আলো
কানাগলি
এমন শহরে আমার বাস, যেখানে
হৃদয়ের প্রকাণ্ড দালানে
বাসা বেধেঁছে ঘুনোপোকার দল, নড়বড়ে
খসে পড়ছে বিস্তারিত স্মৃতির আস্তরণ
কান্নার নুনে হারিয়ে যাওয়া মানুষ—
অযথা কাপুনি জ্বর নেমে যাওয়া সন্ধ্যায়
ঝড়ে পড়ে উদাস বিকেল, অনামিকা হেমন্ত
অথবা কোনো এক কানাগলি—
এ শহর জাগে ঘোর অন্ধকারে—কামরাঙা ভোরে
ঘোর লাগা যাপিত জীবনে, বিস্মৃত দিনে
অশীতিপর ঠোঁটে, আর্দ্র আঙুল কোণে
সভ্যতার ক্ষয়ে যাওয়া পঙ্ক্তি প্রলাপে
অবচেতন আঁকে তীব্র শোকের গ্রাফিতি
অবশেষ দালানে, শ্রান্তির অভিযোজনে
চোরাগলি নেয়ে পথের কিনারে
জানালার নীলাভ কাচে নিজস্ব প্রতিবিম্ব
খসে পড়ে আলো মেঘেদের মতো
কালো মুখোশে ঢাকা কচি পাতাটির বুকে
হায় তুলে সমস্ত নাগরিক ঘুম
পরাজিত প্রেমের তীর্থে
কানাগলি শেষে—
নতুনে প্রণয়
আঙিনাভর্তি শূন্য ঝুলি, নেতানো সময় আলখেল্লা
ঘুরছে পরিণত দিন। এমনটাই কি না ঠিক
আপেক্ষিক নামে যা তাও সত্য নিদারুণ! অবশ্য
শূন্য যা কিছু তা একদমই শূন্য নয়, রং-বেরং
ফুৎকারে নকশা করা—যাপিত জীবন। শূন্যেই
বিয়োগের দালান, অস্ফুট ক্ষণ-ইট-সুরকি—অথচ
নতুনের মতো লাগে পাতায় পাতায়, বর্ণমালায়
অঙ্ক খাতায়, সূত্রের মতো লাগে সরল ধাঁধায়
দম ফুরানো ঘড়ি কেনা যায়—এবারের মেলায়, সঠিক
অন্তত দুবার অধ্যাস বেড়াজালে, সেও কম কীসে!
ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে বছর, দিন নিভিয়ে
রাত, রাত জ্বালিয়ে দিন, যেমন গভীর সমুদ্রে ডুব
জড়ায় না কিছুই। লেখা হবে কি না অনুক্ত অব্যয়
হেঁটে আসা দিন, কেননা, সেসব কেবলই ছিল দিন—
বিম্বিত প্রণয় নতুনে করে বরণ, তার বেশি পুরাতন
নতি স্বীকারের আলো চায় পুরাতন কালো, প্রিয়
হুংকারে বিদ্যুৎ মাগে মেঘ, তার বেশি জল—উচ্ছ্বল
প্রাণ স্পর্শ নতুন আকুল প্রার্থনায়—উচ্ছ্বাসে, নতুন
আনন্দ চায় দিকে দিকে আজ, নতুন ঊষায় জাগে
আলিঙ্গন স্পন্দন—আরও কাছে ডেকে নতুন সূর্যোদয়।
কপাট খুলতেই...
হিজলের স্নান, কদম ক্রন্দন, কোলাহল
কপাট খুলতেই বেরিয়ে আসে রাত
নিকষ রাতের মায়া, দুরন্ত নির্ঘুম
আষাঢ়ের মাঠ ছাপিয়ে ডুবো জল
শামুকের খোলস পেরিয়ে অবগাহন
এমন রাতের কাল বিবাগী হৃদয়
মুছে দেয় ফেলে আসা পথ
নিঃসংকোচ চুমুক
দুর্দমনীয় ঘ্রাণ
দুঃসহ নীরবতায়
আপন আলয়ে স্থির শিখায়
শান্ত প্রলয়, ভীষণ গভীরে, যেন
আগল খুলতেই মুখ তুলে নিভৃতচারে
হারানোর অপেক্ষারত এক কানাকুড়ো, যেন
এমনই অজস্র শ্রাবণ, হিজলের বন
চোখের আড়ালে গড়ে রাতের প্রাসাদ
দূর মালতির স্নানে টুকরো প্রাণ
কপাট খুলতেই জড়িয়ে নেয় আবেশ
বৃষ্টিরা ঝড়ে পড়লে মুগ্ধ স্মৃতিরা সাজে
নীরব বাতাসে, বিচ্ছিন্ন অবকাশে
এক অবসাদ ঘোরে
ছাদের শহর
ছাদের শহরে মাথা গোঁজা নিয়ে কথা হলে
চোখের পাশ দিয়ে ঝড়ে পড়ে বিবাগী স্বপ্ন
লোকে বলে, অকালে উচ্ছন্নে গেছে হাত
রাতের প্রচ্ছন্ন প্রয়াসে যত কানাকানি
প্রশ্রয় পায় সব গনগনে দিনের আলোয়
অথচ হতে পারত এক নিখাদ গল্প
‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’
বলছিলাম, ঝড়ে পড়া এক স্বপ্নের কথা
নেহায়েত ঘুমের আবেশে নয়, জাগ্রত দিনে
যতটা পাড়ি দিলে ওই স্বপ্ন ছোঁয়া যায়, তার
হিসাব আঙুলে কষে, উদয়াস্ত নির্ঘুম ভালোবেসে
তবুও বলে, খসে গেছে তারা সত্যি হবে বলে
ছাদের শহরে মেঘের গন্ধে যত কথাই হোক
যতই বৃষ্টি হোক, চোখ বুজে, কাক-শালিকের বনে
বৃষ্টি একাই থাকে দূর দেশে স্বপ্নের পাশে
ছাদের শহরে রোজ কথা হয় মাথা গোঁজা নিয়ে