X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ঈদ আনন্দ ২০২৩

হেরিটেজ ভূত

আশিক মুস্তাফা
২২ জুন ২০২৩, ০১:৫২আপডেট : ২২ জুন ২০২৩, ১৩:২৮

একেকটা ঝামেলা তৈরি করে মানুষ আর ভূতদের বাড়ে বিপদ! তা না হলে মানুষের ডেকে আনা করোনায় ভূতদের কেন ভুগতে হবে? বলবে, ভূতরাও কি কোভিড-নাইনটিনে আক্রান্ত হচ্ছে? তা-না বাপু। ভূতদের ইমিউনিটি সিস্টেম খুব ভালো। মানুষের রোগ-বালাই তাদের কাবু করতে পারে না। রোগের ভয়ে মানুষ ঘরে বসে থাকলেও ভূতদের বসে কাটানোর মতো সময় নেই। রাজ্যের কাজ তাদের। বাচ্চা ভূতদের তো নিঃশ্বাস ফেলারও ফুরসত নেই। দিনেও রাজ্যের ব্যস্ততা। এরমধ্যে আবার দুপুর আড়াইটায় প্ল্যানচেট বোর্ডে পূর্ব-ভূতদের আত্মাকে ডেকে আনতে হয়। করতে হয় নানান শলা-পরামর্শ। অথচ গত কয়েক মাস এই সময়টায় গন্ডগোল বাধিয়েছে মানুষ! বাড়ি থেকে এখন কেউই বের হতে চায় না। দুপুরে সূর্য বাড়ির উপরে এলেই ঘড়ি দেখা শুরু করে মানুষ। ঘড়ি দেখে আর বুকে থুতু দেয়। ঘড়ি দেখে আর বুকে হাত দিয়ে ধুকপুকানি অনুভব করতে থাকে। কারও কারও গায়ে জ্বর চলে আসে। টেনশনে। ওই যে, পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন যেমন টেনশন কাজ করে ওইরকম আরকি! তা মানুষের এই টেনশন কিসের? দুইটা ত্রিশ বাজার। দুইটা ত্রিশ বাজলেই রেজাল্ট ঘোষণা দিতে বসেন একজন। তিনি রেজাল্ট ঘোষণা দেন আর তা টিভি-ফেসবুক সব জায়গায় লাইভ দেখানো হয়। রেজাল্ট পেয়ে কেউ খুশি কেউ মন খারাপ করে কীসব বলাবলি করে। অথচ এই সময়টায় বাচ্চা ভূতরা প্ল্যানচেট বোর্ডে পূর্ব-ভূতদের আত্মাকে ডেকে আনে। রাতে তাদের সুযোগ দেওয়া হয় না। বড়রা প্ল্যানচেট করে। বাচ্চা ভূতরা তাই খুব ক্ষেপে আছে মানুষের উপর। এই তো গত অমাবস্যায় তারা বড় ভূতদের একটা স্মারকলিপি দিয়েছে। তাতে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে যে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে পুরনো, জনমানুষশূন্য কোনো পোড়োবাড়িতে যদি তাদের না নিয়ে যাওয়া হয়; তবে তারা ভূতদের হ্যালুসিনেট করে লেখা ভূত গবেষণাপত্রগুলো মানুষের রাজ্যে ছড়িয়ে দেবে। শুধু তাই নয়, মানুষ এবং বিজ্ঞান নিয়ে তাদের যে সিউডো-ম্যান-সায়েন্স, মানে ভুয়া-মানুষ-বিজ্ঞান তাও ফাঁস করে দেবে!

এই আল্টিমেটামে নড়েচড়ে বসে ভূত নেতারা। তারা অনেক চিন্তা-ভাবনা করে একটি পোড়োবাড়ি ঠিক করে। সিদ্ধান্ত হলো, ভোরের আলো ফোটার আগেই বাচ্চা ভূতদের নিয়ে যাওয়া হবে সেই বাড়িতে। এতে তারা কোনো ঝামেলা ছাড়াই দুপুর আড়াইটার প্ল্যানচেট বোর্ডে পূর্ব-ভূতদের আত্মাকে ডেকে এনে কথা বলতে পারবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক রাতে তাদের নিয়ে যাওয়া হলো সেই পুরনো বাড়িতে। কিন্তু তারা ঢুকতে পারে না বাড়ির ভেতরে। বাড়ির আদি ভূত বাসিন্দারা ভূত দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে আছে। কেন? এই বাড়িতে বহিরাগত ভূতদের ঢুকতে দেওয়া হবে না। কেন দেওয়া হবে না তাও বলতে রাজি নয় তারা। শেষমেশ সাদা শাড়ির আঁচল ওড়ায় পোড়োবাড়ির এক বুড়ো ভূত। এদিক থেকেও ওড়ানো হয় সাদা শাড়ির আঁচল। মানে পতাকা বৈঠক। সীমান্তে যেমন দুই দেশের সৈন্যরা পতাকা বৈঠক করে তেমন। পতাকা বৈঠক বসে পোড়োবাড়ির চিলেকোঠায়। বাড়ির আদি বাসিন্দা বলেন দেখো, এই বাড়ি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ। ইউনেস্কোর নীতি অনুযায়ী এই ঐতিহ্যবাহী বাড়ির নম্বর এগারো হাজার এগারো শত এগারো। আর এই বাড়ির ভূতদেরও একেকজনের একেকটা নম্বর আছে। সেই নম্বরই তাদের পরিচয়। আর এই পরিচয়ে নতুন কেউ ভাগ বসাক সেটা তারা কেউ চায় না। তবে আমি একটা সুযোগ দিতে পারি। তা হচ্ছে, বাচ্চা ভূতদের একজনকে ডাকো। আর এই বাড়ির একজন থাকবে। বাচ্চা ভূতদের প্রশ্ন করেও তাকে আটকাতে পারলে তবেই এই বাড়িতে কিছুদিন থাকার সুযোগ পাবে।

বাচ্চা ভূতরা তখনও অপেক্ষা করছে পোড়োবাড়ির সামনের ভাঙা ওয়ালের শেডের নিচে। হঠাৎ ডাক পড়ে ইগলুতিয়ার। ছোট্টমোট্ট বুদ্ধিমতি ভূত। ‘ম্যান হান্টার্স’ নামে তার বানানো একটি অ্যাপ ভূতরাজ্যে পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। বহিরাগত ইগলুতিয়ার সঙ্গে চিলেকোঠায় ডাকা হয় এই বাড়ির বাসিন্দা ওকোলাকু তুকবুককে। সে অবশ্য বড় ভূত। এই বাড়িতে ছোট ভূত নেই। বাড়ির সদস্যরা ছোটোদের সহ্য করতে পারে না। কথায় কথায় প্রশ্ন করে দুষ্টুগুলো। শুধু কি তাই, দিনে-দুপুরে মানুষ ধরে এনে ভয় দেখানোর রিহার্সেল করে। এমন নানা অভিযোগের আঙুল ছোটদের দিকে। আঙুল যতোই উঠাক এখন কিন্তু সেই ছোট্ট ইগলুতিয়ার মুখোমুখি হতে হবে ওকোলাকু তুকবুককে। ইগলুতিয়া প্রশ্ন করবে আর তার উত্তর দিবে ওকোলাকু তুকবুক। উত্তর দিতে পারলে এই বাড়ির সামনে থেকেই বিদায় নেবে তারা। আর উত্তর দিতে না পারলে সে সময় নেবে। যতদিন উত্তর দিতে না পারবে ততোদিন ছোট্টমোট্ট ভূতরা এই বাড়িতেই থিতু হবে। ইগলুতিয়া পকেট থেকে একটা কাগজ আর পেন্সিল ওকোলাকু তুকবুকের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে, অংকে লিখুনএগারো হাজার এগারো শত এগারো। সে চিন্তায় পড়ে যায়। কিছুক্ষণ ভেবে লিখে ১১১১১১। ছোট্ট ভূতের ছানা বলে, হয়নি। এতো লাখ ছাড়িয়ে গেছে! চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে বুড়ো ভূত ওকোলাকু তুকবুকের। তোমাদের মধ্যে কেউ আছে তাকে উদ্ধার করার মতো? চেষ্টা করো। আর সেই পর্যন্ত ছোট্টমোট্ট ভূতরা হেরিটেজ ভূত হয়ে পোড়োবাড়িতেই নাহয় থাক!

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হেরে গেলো ছোটনের দল
নারী ফুটবল লিগহেরে গেলো ছোটনের দল
‘আমলানির্ভরব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গণমুখী বাজেট তৈরি করতে হবে’
‘আমলানির্ভরব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে গণমুখী বাজেট তৈরি করতে হবে’
ভারতের জাসিয়ার সেঞ্চুরি, সাবেকুনের ৪ রানে ৫ উইকেট
নারী প্রিমিয়ার লিগভারতের জাসিয়ার সেঞ্চুরি, সাবেকুনের ৪ রানে ৫ উইকেট
টানাপড়েন মিটমাট করতে আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের
টানাপড়েন মিটমাট করতে আগ্রহ যুক্তরাষ্ট্রের
সর্বাধিক পঠিত
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
ব্রিটেনে আশ্রয় আবেদন বাতিল বাংলাদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে চুক্তি
ব্রিটেনে এক পাউন্ডে ১৫০ টাকা, আবার দরপতন
ব্রিটেনে এক পাউন্ডে ১৫০ টাকা, আবার দরপতন