তোমার নাম ভিজেছে আমার ঘামে
নদীগুলো দড়ির মতো শুকিয়ে যাচ্ছে
হিমালয়ে পাথর প্রস্রবণ
কোকিল সকাল কা কা
মহাকালের ঘর্ষণে ধূমায়িত জীবন
ঘুমহীন মাছের চোখ,
কচ্ছপের কানে দৌড়ের মন্ত্র ফুঁকে কেউ কেউ দৌড়ে যায় মায়াদ্বীপে!
আমাকেও ডেকে নাও যদি ইচ্ছে হয়
কিন্তু আমার প্রেমিকদের কী হবে,
যারা প্রতিদিন ফুল দেয়, মালা দেয়, প্রেম দেয়
প্রথম সংগম ভোলে না কুমারী
আষাঢ় ভোলে না বৃষ্টির কেচ্ছা
যার নাম ভিজেছে আমার ঘামে
তাকে কী করে ভুলি?
ফণা তুলে প্রস্তুত করোনা-সাপ
কামড় বসালেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করবে
থেমে যাবে ইন্দ্রিয়ের ছলাকলা, সমস্ত হজম করা এ জৈবিক দেহও মাটির রূপ নেবে
মৃত্যুর উলম্ব সত্যে শ্বাসকষ্টে ভোগে পৃথিবীর হাতিরাও,
পোকামাকড় ও পাখিরা তসবিহ গোনে
অনন্য তুমি অনম্য নও হে,
পৃথিবীর শ্বাসকষ্টে তোমার কি দম বন্ধ হয়ে আসে না?
সূক্ষ্মচাষ
আমার গভীরে তোমার সূক্ষ্মচাষ তোমার গভীরে রুক্ষতা ছড়িয়ে দিচ্ছে
সামুদ্রিক জলোস্ফীতির মতো তোমার অবহেলা ছড়িয়ে পড়ছে ঢেউয়ে ঢেউয়ে,
নিরবচ্ছিন্ন স্পন্দক
সমর্পণে নিষ্কাশিত বালুর মতো আমার ভিতর থেকে ঝুরঝুর করে ঝরছে রক্তরস
আমার শোবার ঘরে চষে বেড়াচ্ছে রাত্রির শিশুরা
এইসব অনাহূত-নগ্ন-কুহেলী আমাকে শেষ করে দিতে এদিকেই ছুটে আসছে
আমি ঢুকে যাচ্ছি অন্ধকারের প্রসবযজ্ঞে…
বেচতে যাই হাসি
বেচতে যাই হাসি দুঃখের হাটে
অথচ দুঃখের হাটে দুঃখ বেচাকেনা করার কথা
তবু সবকিছু কেমন উলটো
এই যেমন প্রতিদিন সকালে আমার কবিতা লেখার কথা,
কবিতা লেখতে না পারলেও অন্তত অক্ষরের সাথে মেলোএলো খুনশুটি আমার
রোজই হতো,
সেই আমি প্রতিদিন যাই
মতিঝিল থেকে মাইল মাইল দূর
যাওয়ার পথে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার
গাড়ির ভিতর থেকেই দেখি—
পানখাওয়া গালে কেউ একজন এগিয়ে এসে পিঠ চাপড়িয়ে বলে—‘তোর দাম আর কত হবে, গা গতর তো গুলিস্তানের ফাঁকা স্টেডিয়াম কইরা রাখচিস’...
কোকাকোলার মোড় থেকে আরও একজন ভুড়িওয়ালা পেট চুলকাতে চুলকাতে এসে বলে—‘তোকে দিয়ে পোষাইবো না রে’...
ওরা মানুষ এই শহরের, এই পৃথিবীর
অথচ ওরা বিক্রি হয় গন্ডায় গন্ডায়
মানুষ কেনা মহাজন ওদের দিনহাজিরা কিনে নেয়! এই শহরের ওরা মানুষ, কিন্তু দাম নেই জীবনের!
শুধু আমি নই, এই শহরে প্রতিদিন অনেক কঙ্কাল হা করে তাকিয়ে থাকে বিক্রি হবার জন্য
দুপুর গড়ায়, খরিদ্দার নেই, পেটের ভিতর কোনো এক মহাশয় মোচড় দিয়ে ওঠে!
খরিদ্দার চেনে শরীর, সুঠাম দেহ
ক্ষুধা কী চেনে হাভাত শরীর,
তবে কেন হাড্ডিসার দেহে তার আস্ফালন?
প্রোটন প্রণালীর নৌকা
শব্দের নতুন বউ ঘোমটা খোলো
আমি গড়াপেটা করি কবিতার মন
দর্প আর দর্পণের অদ্বিতীয় পৃথিবীতে
আকাশ একক অভিমান ভেঙে গড়ে তুলছে বাতানুকূলের নাগরিক লম্ফ
গড়ছে কেঁচো সংস্কৃতি, খেমটা নাচের ইতিব্যথা।
হাওয়াদের মিটিং শেষ না হতেই শুরু হয়ে যাচ্ছে কল বা তেলের পিছলানি
কণ্ঠস্বরের অবয়বে বেহালা কাঠ অনবরত ঢেঁকি গিলছে
কলম থমকে থাকলে
কী করে টানি অবাধ্য বৃত্ত
যতবার কলম ধরি চেনা পথ সামনে এসে আকাশ হয়, তাই আমি বারবার উঁচু
আকাশের নাম লিখি ‘রাস্তা’...
যেভাবে প্রোটন প্রণালীর নৌকা শব্দ-বিদ্যুতে ভেজে!
আধশোয়া ক্যালকুলাস
এত শরীর! থোকা থোকা মাংস
তবলাগুলো তাকিয়ে আছে হাড্ডির তেষ্টা!
আগে মানুষ মুখোশ পরত
তখন মানুষ মুখোশ খুলত
এখন মানুষ মানুষ পরে
এখন মানুষ মানুষ খোলে
মানুষ খসে পড়লে থাকে কী?
ষমে বিষমে এমন আধশোয়া ক্যালকুলাস যখন ধরা পড়ে আলোধরাদের জালে
গায়ে আগুন ঢেলে তখন মিছিলে নামে লাইলীর পায়রা
শূন্যদের প্রতিযোগিতায় শূন্যই প্রথম
শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে ফুটিয়ে তোলে কার্ভ, ছবিছায়া
দ্বিমুখী দৃশ্যে ডিসকোর্স
সবুজ কুহরে ফ্লোয়েম জাইলেম রসে বশ!
আলো হরকরাদের দিনক্লাবে
শান্তি-প্রবর্তকের জন্য মুহুর্মুহু হাততালি…