সম্প্রতি ৫৩তম সমাবর্তনের তারিখ ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদেরও অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। তবে ঢাবি’র অধীনে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে আলাদা দুটি ভেন্যুর ব্যবস্থা। ডিজিটাল প্রজেক্টরের মাধ্যমে সমাবর্তনে অংশ নিতে হবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমাবর্তন নিয়ে কয়েকদিন ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের সর্ববৃহৎ ফেসবুক গ্রুপে ভার্চুয়াল ভোটের আয়োজন করলে সেখানে দেখা যায় ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সমাবর্তনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে ভোট দেন। মাত্র ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সমাবর্তনের পক্ষে ভোট দেন। আবার কেউ কেউ বলছেন এটা এক রকম প্রহসনের সমাবর্তন।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রজেক্টরে অনুষ্ঠান দেখে হাত তালি দেওয়ার কোনও মানে হয় না। ভালো ফলাফল করা কৃতি শিক্ষার্থীদের কোনও ধরনের পদক দেওয়া হয় না। সমপরিমাণ টাকা নিয়েও আমাদের সব আয়োজন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আলাদা দিনে অতিথি নিয়ে আলাদা সমাবর্তন করার দাবি জানান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একসঙ্গে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যেতে চান না ঢাবি'র শিক্ষার্থীরা। তারাও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আলাদা সমাবর্তনের দাবি জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সাত কলেজের আলাদা ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে। এছাড়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন থেকে চার গুণ বেশি হবে। সবাইকে এক সঙ্গে করে জগাখিচুড়ি না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাদের আলাদা সমাবর্তনের ব্যবস্থা করা।
ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাবি’র শিক্ষার্থীদের সনদের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সনদ আলাদা করার জন্য কলেজের নামের পাশে ব্র্যাকেটে এমনভাবে অ্যাফিলিয়েটেড শব্দ যুক্ত করা হয়েছে যা দেখতে মোটেও শোভনীয় দেখাচ্ছে না। আমরা চাই আমাদের সমাবর্তন আলাদা করা হোক। প্রজেক্টরের মাধ্যমে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন দেওয়া এক ধরনের বৈষম্য। স্বাধীনতার আগে পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সঙ্গে যেরকম বৈষম্য দেখাতো ঠিক তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাত কলেজ সমন্বয়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এর আগের (৫২ তম) সমাবর্তনও তো এভাবে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটা ভেন্যু আর সাত কলেজের জন্য আলাদা দুইটা ভেন্যু। তখনও তারা প্রজেক্টের মাধ্যমে অংশ নিয়েছিল। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তনেও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আলাদা ভেন্যুতে প্রজেক্টের মাধ্যমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। এ কারণে এক ভেন্যুতে আয়োজন করা সম্ভব নয়। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমাবর্তনের ফি বাড়ানোর কোনও সম্পর্ক আছে কিনা এর জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আছে। এখানে একটা বড় খরচ তো প্যান্ডেল খরচ। প্যান্ডেলের সঙ্গে যারা কাজ করবে তাদের খরচটাই তো সবচেয়ে বেশি। এজন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। অপরদিকে কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ ও ঢাকা কলেজের ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা কলেজ মাঠে। এদিকে ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজের ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়ে ইডেন মহিলা কলেজের মাঠে।
