ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এরিয়া প্রায় ২৭৫ একর হলেও একটি ভবন থেকে আরেকটির দূরত্ব স্থানভেদে এক কিলোমিটারের ওপরে। এসব জায়গায় যেতে শিক্ষার্থীদের একমাত্র বাহন রিকশা। কিন্তু এই রিকশা ভাড়া পরিস্থিতি বুঝে স্বাভাবিকের তুলনায় দুই-তিন গুণ দাবি করে চালকরা। নতুন আসা শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় আরও সমস্যায়। জায়গা না চেনায় ভর্তি প্রয়োজনীয় কাজ সারতে এলে ২০ টাকার ভাড়া ৫০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে রিকশাচালকরা।
এসব নিয়ে প্রায়শই শিক্ষার্থীদের রিকশাচালকদের সঙ্গে তর্কে জড়াতে দেখা যায়। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাস এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেও রিকশাচালকরা তা মানেন না। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ক্যাম্পাসে শাটল সার্ভিস চালু করতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বাংলা ট্রিবিউনকে এমনটি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি জানান, এতে একটি স্টপেজ থেকে আরেকটি স্টপেজের সর্বোচ্চ ভাড়া হবে পাঁচ টাকা। এই সুবিধার ফলে শিক্ষার্থীদের আউটসোর্সিং করারও সুযোগ আসতে পারে।
তবে এটি অটো না হয়ে বাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ অটো মানেই ব্যাটারিচালিত রিকশা। সেখানে প্যাডেলচালিত রিকশাওয়ালারা আন্দোলন করতে পারে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের রাস্তাগুলো সিটি করপোরেশনের, তাদেরও অনুমতি লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিটি করপোরেশনের কাছে বিশেষ অনুমতি চাইতে এই সপ্তাহের শেষ দিকে তাদের সঙ্গে বসবে। অনুমতি পেলে অটোও চালু হতে পারে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্যাম্পাসে শাটল অটো সার্ভিসের দাবি তোলেন। তারা সেখানে এটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের আউটসোর্সিংয়ের ব্যবস্থা করার কথাও জানান।
বিষয়টি নিয়ে প্রক্টর বলেন, আমরা এটি আমলে নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করবো তাদের সংযুক্ত করার। তারা অটোর কথা বলেছে, কিন্তু যদি বাস হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ট্রেইনিং দিয়ে তাদের সংযুক্ত করা যায় কিনা আমরা ভাববো।
ইতোমধ্যেই সার্ভিস নিয়ে পাঁচটি কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এই সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবার সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত করবে। আগামী সপ্তাহে শাটল সার্ভিস চালু হতে পারে বলেও জানান তিনি।
সম্ভাব্য রুটগুলো জানিয়ে তিনি বলেন, শহীদুল্লাহ হল, সুফিয়া কামাল হল, পলাশী, কুয়েত মৈত্রী হল, শাহবাগসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় চলবে শার্টল। এক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা। অর্থাৎ এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজের ভাড়া হবে পাঁচ টাকা।
শিক্ষার্থীদের প্রশংসা, ক্যাম্পাসে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের দাবি
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শাটল সার্ভিসের প্রশংসা করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত এটি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রণেও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নূপুর আক্তার বলেন, শাটল চালু করলে অনেক ভালো হবে। একদিকে যাতায়াত খরচ কমবে, অন্যদিকে ভোগান্তিও কম হবে। শহীদ মিনার থেকে কলাভবন যেতে ৪০ টাকা চায়, ভাড়া কমাতে চাইলে রিকশাচালকরা বাকবিতণ্ডা করে। শাটল চালু হলে আশা করা যায় এ ঝামেলা থেকে নিশ্চিন্ত হতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, ঢাবির শিক্ষার্থী ছাড়া যেন কেউ এই শার্টল ব্যবহার করতে না পারে, তা না হলে ক্যাম্পাস আরও পার্কে পরিণত হবে। এই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এবং শাটল যেন পুরা ক্যাম্পাস এলাকায় (কুয়েত মৈত্রী হল পর্যন্ত) চলাচল করে তা নিশ্চিত করতে হবে।
উর্দু বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অন্তরা তালুকদার বলেন, শাটল সার্ভিস অনেক ভালো হবে। সেই সঙ্গে ক্যাম্পাসকে বহিরাগতমুক্ত করতে হবে। বিভিন্ন পয়েন্টে গেট দিতে হবে, যেন শিক্ষার্থী, কর্মচারী, শিক্ষক ছাড়া কেউ ঢুকতে না পারে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হাফিজ বলেন, এমনটা হলে শিক্ষার্থীরা বেশ কিছু সুবিধা পাবে। কম খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকায় যাতায়াত, টিএসসিতে অনাকাঙ্ক্ষিত যানজট থেকে মুক্তি, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি করা যাবে। অনেক আশ্রয়হীন বা রিকশাচালক ক্যাম্পাসের আশেপাশে রাত পার করে। তাদের কথাও প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের ভাবা উচিত বলে মনে করি।