X
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
২২ আষাঢ় ১৪৩২

‘আদর্শ ছেলে’র দায় কেউ নেবে না

উদিসা ইসলাম
০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:২৭আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৫২

তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’তে ছাপা কুসুমকুমারী দাশের ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতা তৃতীয় শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’তে ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতাটি ভুলভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও বাংলা একাডেমি মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। কুসুমকুমারী দাশের লেখা বহুলপঠিত কবিতাটি বদলে দেওয়া নিয়ে যতই সমালোচনা উঠুক, এনসিটিবি ছাপা সংস্করণকেই শুদ্ধ বলছে। তাদের দাবি, কবিতাটির আগের রূপকে বাংলা একাডেমির পরামর্শে পরিবর্তন করা হয়েছে। যদিও বাংলা একাডেমি বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের সাথে কেউ কখনও যোগাযোগ করেনি।
কুসুমকুমারী দাশের বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’র আদি সংস্করণের প্রথম লাইনটি হলো— ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইতে এই লাইনকে উল্টে লেখা হয়েছে— ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। কবিতার মধ্যেও রয়েছে নানা ধরনের শব্দগত পরিবর্তন।
কবিতার চতুর্থ লাইনে কুসুমকুমারী লিখেছেন, ‘মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ। বিকৃত রূপে ছাপা কবিতায় এই লাইনে ‘হইতে’ শব্দটিকে সম্পাদনা করে ‘হতেই’ লেখা হয়েছে। মূল কবিতার নবম লাইনে লেখা আছে, ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায় কথায়’। এই লাইনের ‘চায়’ শব্দটিকে বদলে দেওয়া হয়েছে ‘চাই’ শব্দটি দিয়ে। কবিতার একাদশ লাইনে কুসুমকুমারী দাশ লিখেছিলেন ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’। এই লাইনে ‘খাট’ শব্দটিকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে ‘খাটো’। আর ‘হাতে প্রাণে’র বদলে লেখা হয়েছে ‘মনে প্রাণে’।
কবির লেখা মূল চরণ ও বিভিন্ন চরণের শব্দ বদলে দিলেও এনসিটিবি দাবি করছে, এটাই শুদ্ধ। এর জন্য তারা বন্দুক রেখেছে বাংলা একাডেমির কাঁধে। ছাপা সংস্করণটি শুদ্ধ হলে এতদিন কবিতাটি ভুল পড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সদস্য ড. আবদুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলা একাডেমি আমাদের এই কবিতাটি সরবরাহ করেছে। প্রতিবছরের পরিমার্জনের অংশ হিসেবে এটি করা হয়েছে।’
মূল কবিতার চরণ বা শব্দ বদলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাপা সংস্করণে মূল সংস্করণের চারটি লাইন বাদও দিয়েছে এনসিটিবি। মূল কবিতার কবিতার একাদশ থেকে চতুর্দশ লাইনে ছিল— ‘সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ/মানুষ হইতে হবে মানুষ যখন/কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার/সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার’। মাঝখান থেকে এই চার লাইন বাদ দিয়ে মূল সংস্করণের শেষ দুই লাইনকে প্রথম ১০ লাইনের পরে যুক্ত করে ১২ লাইনে শেষ করা হয়েছে ছাপা সংস্করণের কবিতাটি।
কোনও কবির মূল কবিতা থেকে এভাবে লাইন বাদ দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে এনসিটিবি বলছে, ভুল থাকলে বাদ দেওয়া সমীচীন। বাংলা একাডেমি আমাদেরকে সঠিক রূপটি বের করে দিয়েছে। এ বছর বইতে যেটি প্রকাশিত হয়েছে সেটিই শুদ্ধ। বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলা একাডেমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকৃত কবিতাটি বের করে এনেছে। তবে কবির অনুমতি ছাড়াই এভাবে কবিতার কোনও অংশ বাদ দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সাবেক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কবিতার কোনও বিশেষ অংশ যদি রাখতে না পারা যায় তাহলে পুরোটাই না রাখা ভালো। মাঝামাঝি কোনও জায়গা নেই।’
এদিকে, ‘আদর্শ ছেলে’র ছাপা সংস্করণের জন্য এনসিটিবি বাংলা একাডেমির কাঁধে দায় চাপালেও সেই দায় নিতে অস্বীকার করছে বাংলা একাডেমি। একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দু’টি সরকারি প্রতিষ্ঠান পরস্পরের বিরুদ্ধে কথা বলছে। এটা শোভনীয় নয়। তবে এই কবিতাটির বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। বা আমরা কোনও কবিতাও সরবরাহ করিনি।’
এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ৭৮ পাতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ লেখায় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটি কোথাও ‘মুক্তিযুদ্ধ’ আকারে আবার কোথাও ‘ক’ ও ‘ত’ আলাদা করে লেখা হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধু’ বানানটিও ভেঙে ‘ঙ’ ও ‘গ’ আকারে ছাপানো হয়েছে এই বইতে। বানানের এই বিষয়টিকেও এনসিটিবি তাদের অবহেলা হিসেবে মানতে রাজি না। ড. মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশুদের কাছে সহজবোধ্য করে তুলতে যুক্তাক্ষরগুলো ভেঙে লেখা হয়েছে।’ যদিও একই পাতায় একই বানান দুই রূপেই লেখা হয়েছে। এসব ভুল দেখিয়ে দিলেও ড. মান্নান পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেন, কোনও ভুল পাওয়া যাবে না বইগুলোতে। বই বিষয়ে নেতিবাচক ভাবনা থেকেও সরে আসতে বলেন তিনি।
শিশুদের সুবিধা বিবেচনায় বানান ভেঙে দেখানোর সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে শামসুজ্জামান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আসলে কিছুই বলতে চাই না। তারাই ভালো বলতে পারবে।’

আরও পড়ুন-

প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ভুল বানান ও বিকৃতির ছড়াছড়ি

লিঙ্গ বৈষম্য শেখানোর পাঠ্যপুস্তক

বিনামূল্যের বই বাজারে!

 

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গভীর রাতে আগুনে পুড়ে ছাই ১৯ দোকান
গভীর রাতে আগুনে পুড়ে ছাই ১৯ দোকান
‘এত আনন্দ, বলে বোঝানোর মতো না’
‘এত আনন্দ, বলে বোঝানোর মতো না’
তিন মাস পর বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিলো বিএসএফ
তিন মাস পর বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিলো বিএসএফ
গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের দাবিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বললো  ইসরায়েল
গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের দাবিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বললো  ইসরায়েল
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল