X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সুন্দরগঞ্জের সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডেই জামায়াত জড়িত!

জামাল উদ্দিন ও জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা থেকে
০৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১২:০৭আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩০

গাইবান্ধার এমপি মনজুরুল ইসলাম লিটন

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সন্ত্রস্ত এক জনপদের নাম। বছরের পর বছর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র জামায়াত-শিবির এ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে বলে অভিযোগ আছে। সুযোগ পেলেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, হত্যা ও নির্যাতন চালায় তারা। এমনকি পুলিশের ওপর হামলা চালাতেও তারা পিছপা হয়নি। তাদের হাতে আহত ও নিহত হয়েছেন অনেক লোক। তবে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে তাদের প্রধান টার্গেট আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীরা। স্থানীয় জনগণ ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জে এ পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে সবকটিতেই জামায়াত-শিবিরের হাত রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেবল সুন্দরগঞ্জেই এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনসহ নিহত হয়েছেন সাতজন। এমপি লিটন হত্যাকাণ্ড ছাড়া বাকি সব হত্যাকাণ্ডই ‘শ ‘শ মানুষের সামনে প্রকাশ্যে ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির সমর্থিতরা। এক সময়ে ছাত্রনেতা ও পরে আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনই প্রথম প্রকাশ্যে জামায়াত-শিবিরের প্রতিরোধ শুরু করে। এতে স্বাধীনতাবিরোধী এ চক্রটির প্রধান শত্রুতে পরিণত হন তিনি। এজন্য লিটন হত্যাকাণ্ডের পর প্রথইে আঙুল ওঠে জামায়াত-শিবিরের দিকে। তবে রহস্যের জট খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে লিটন হত্যাকাণ্ড কারা ঘটিয়েছে।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরগঞ্জের শিববাড়ি মোড়ের ডাক বাংলার ভেতরের পুলিশের তদন্ত কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে চার নিরস্ত্র পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা। জীবন বাঁচাতে পুলিশ সদস্যরা টেবিলের নিচে ও বিভিন্নস্থানে লুকানোর চেষ্টা করেও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। সম্পূর্ণভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল তদন্ত কেন্দ্রটি।

চার নিরস্ত্র ও নিরীহ পুলিশ সদস্যকে হত্যার একদিন পর ১ মার্চ সকালে সুন্দরগঞ্জের শান্তিরাম ইউনিয়নের পরাণ গ্রামের আব্দুল মালেক মিয়ার ছেলে রিকশা চালক শরিফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে ‘শ ‘শ মানুষের সামনে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়। ঘটনার দিন বড় ভাই নুরুন্নবীর সঙ্গে স্থানীয় গংসার হাট বাজারে গিয়েছিলেন পুড়ে যাওয়া ভাইয়ের দোকান দেখতে। আগেরদিন জামায়াত-শিবিরের দুর্বৃত্তরা ওই বাজারের অনেক দোকান-পাট আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। যার মধ্যে শরীফুলের বড় ভাই নুরুন নবীর দোকানও ছিল। এ নিয়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে কথা বলায় ওইদিন তার চোখ উপড়ে ফেলা হয় এবং জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়। পরে পিটিয়ে ঘটনাস্থলেই  হত্যা করা হয় তাকে। শরিফুল ইসলাম (৩৫) ঢাকায় রিকশা চালাতেন। ঘটনার কয়েকদিন আগে বাড়ি গিয়েছিলেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শাহ মখদুম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম খলিলুর রহমান (২৫) পুলিশে যোগ দেওয়ার আগে সুন্দরগঞ্জের ডোমেরহাটের বাড়ি গিয়েছিলেন স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি তখন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় ডোমের হাট বাজারে গিয়েছিলেন চুল কাটাতে। পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা শিবিরের ক্যাডাররা ওই সেলুনে গিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। সেলুনের ক্ষুর দিয়ে প্রথমে তার গলায় পোঁচ দেওয়া হয়। পরে পিটিয়ে তাকে ঘটনাস্থলেই হত্যা করা হয়।

৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত এমপি লিটনের ওপরও ঢাকার বাড়িসহ বামনডাঙ্গার সাহাবাজ মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে তিন দফায় হামলা চালিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। ওইসব হামলায় হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে প্রায়ই তাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হতো।

এত হুমকি-ধামকি সত্ত্বেও এমপি লিটনকে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে কখনও উদ্বিগ্ন হতে দেখেননি কেউ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তার এলাকার লোকজন বলেন, ‘তিনি নিজেকে তৃণমূল মানুষের নেতা মনে করতেন। বিশেষ বরাদ্দের টাকায় তিনি সুন্দরগঞ্জ থানা, উপজেলা পরিষদ ও সুন্দরগঞ্জের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশের অনুরোধের পরও নিজের বাড়িতে সেটা লাগানোর প্রয়োজন মনে করেননি।’

সুন্দরগঞ্জ ছাড়াও ২০১৪ সালে জেলার সদর উপজেলার তুলসি ঘাটে বাসে আগুন দিয়ে ৯ জনকে ও বরুঙ্গিতে ট্রেনে নাশকতা চালিয়ে চারজনকে পুড়িয়ে হত্যা করে জামায়াত শিবির ক্যাডাররা। এছাড়াও গোবিন্দগঞ্জে দুই ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে এ দুই হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদেরও দায়ী করে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সুন্দরগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানর ওসি আতিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমপি লিটন হত্যা ছাড়া তারা সব হত্যাকাণ্ডেরই তদন্ত শেষে চার্জশিট দিয়েছেন। দুই-চারজন ছাড়া বেশিরভাগ আসামিকেও গ্রেফতার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়। যদিও বর্তমানে অনেকে জামিনে রয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সব মামলারই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে জানান গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল) রবিউল ইসলাম।’

তিনি বলেন, ‘আসামি গ্রেফতার ও চার্জশিট দেওয়ার পর পুলিশের আর কোনও কাজ থাকে না। তখন বিষয়টি আদালতের এখতিয়ারে চলে যায়।’ 

/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
মাধ্যমিকে ছেলেরা কেন পিছিয়ে?
মাধ্যমিকে ছেলেরা কেন পিছিয়ে?
সর্বাধিক পঠিত
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার