X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইনি জটিলতায় স্থবির কিডনি প্রতিস্থাপন

জাকিয়া আহমেদ
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৯:৪৫আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:০৫

কিডনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মেহেরুন্নেছা। বাবা নেই, তবে তাদের সংসারটা বেশ বড়। ছয় ভাইবোন ও মাকে নিয়ে মেহেরুন্নেছাদের সাত জনের সংসার। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মা। কিডনি বিকল হয়ে মেহেরুন্নেছার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। যত দ্রুত সম্ভব কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে ডোনার পেলেও অস্ত্রোপচার করাতে পারছেন না তিনি।

মেহেরুন্নেছার চিকিৎসার খরচ চালানো তার পরিবারের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। কিন্তু এটা অনেক খরচের ব্যাপার, খুব বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না।’

বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপন হলেও ডোনার হিসেবে নির্দিষ্ট কিছু স্বজনের নাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তার বাইরে অন্য কেউ কিডনি দিতে পারবেন না। মেহেরুন্নেছা তাই বেশ সমস্যায় পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমার খালাতো বোন আমাকে কিডনি দিতে চাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের আইন সেটি অনুমোদন করে না। শুধুমাত্র আইনি জটিলতার কারণে আমার জীবন এখন সংশয়ের মুখে। অথচ ভারত কিংবা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে বাংলাদেশের মতো এমন কোনও কমপ্লিকেশন  নেই। ভারতে অপারেশন করাতে প্রায় ২০ লাখ টাকা দরকার, কিন্তু আমাদের পরিবারের পক্ষে এতো টাকা ম্যানেজ করা সম্ভব না।’

মেহেরুন্নেছার মতো একই সমস্যায় পড়েছেন নাইম এবং তোহা। ডোনার থাকলেও আইনি জটিলতার কারণে কিডনি প্রতিস্থাপন করাতে পারছেন না তারা।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে জটিলতার কারণ ‘অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯’। এই আইনে শুধুমাত্র বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে, চাচা, ফুপু, মামা, খালা, স্বামী ও স্ত্রীকে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে কিডনি ডোনার হিসেবে। এই ১২টি সম্পর্কের বাইরে আর কারও কাছ থেকে কিডনি নিতে পারবেন না অসুস্থ ব্যক্তি। তবে কিডনি বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই আইন সংশোধন করে দাদা, দাদি, নানা, নানি, নাতি, নাতনি ও কাজিন ভাই-বোনদের ‘ডোনার পুল’ এ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা ১৭ শতাংশ মানুষ ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর প্রায় ৩৫ হাজার রোগীর কিডনি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ২০ ভাগ মানুষ রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির আওতায় এলেও বাকিরা চিকিৎসা সেবার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। ডায়াবেটিস জনিত কারণে শতকরা ৪১ ভাগ, উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে ৩৩ ভাগ, সংক্রমণ জনিত কারণে ২৫ ভাগ এবং অন্যান্য কারনে শতকরা ১ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। কিন্তু রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ছাড়া কিডনি দানে নিষেধাজ্ঞার কারণে কারও দুটি কিডনি বিকল হলেও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। কিডনি

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিডনি দানের ক্ষেত্রে ব্লাড রিলেটেড আত্মীয়র বিষয়টি আইনের মাধ্যমে রিল্যাক্স করতে হবে। কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তার কোনও আত্মীয়কে কিডনি দিতে চাইলে প্রশাসনের মাধ্যমে সম্পর্কটা খতিয়ে দেখে তার কিডনি নেওয়া যেতেই পারে, এতে অসুবিধার কিছু নেই। বরং  দেশে ডোনার পুল বেড়ে যাবে এবং এর ফলে কিডনি প্রতিস্থাপনে রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতাও কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘একজন রোগীর ছয় মাসের ডায়ালাইসিসের জন্য যে খরচ, তা দিয়ে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। আর কিডনি প্রতিস্থাপন করলে রোগী শারীরিকভাবে অনেক বেশি সুস্থ-সবল থাকবেন। তাকে ডায়ালাইসিসের মতো নিত্যদিনের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। তার কোয়ালিটি অব লাইফই বদলে যাবে। বর্তমান আইন একটু সংশোধন করলেই দেশে কিডনি ডোনেশনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বেড়ে যাবে সুস্থ মানুষের সংখ্যা।’

একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজন বাড়ালে কিডনি ট্রেডিং হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাবে, কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধান অনুযায়ী অরগান ট্রেডিং এবং ট্র্যাফিকিং হতে পারবে না। দেশে ক্যাডাভারিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট (মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে কিডনি নেওয়া), অ্যালট্রুইস্টিক ডোনার (স্বেচ্ছায় কিডনি দানে আগ্রহী), পেয়ার্ড কিডনি ডোনেশনকে (ভুক্তভোগী দুই পরিবারের মধ্যে কিডনি বিনিময়) বিশেষভাবে উৎসাহিত করতে হবে।’

/এএআর/আপ-এফএস/ 

আরও পড়ুন- 


‘সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং প্রবর্তন বিবেচনায় রয়েছে’

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ