X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি

রশিদ আল রুহানী
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:০৬আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:১৭

সেই আম গাছটি

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কলা ভবনের সামনে (বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগ প্রধান গেট) থাকা আম গাছের নিচে বসে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পরিকল্পনা করেন। ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটি এখন আর নেই। ওই স্থানে বেশ কয়েকবার আম গাছ লাগানো হলেও তা বাঁচেনি। এ নিয়ে ভাষা সৈনিকসহ সচেতন নাগরিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভাষা সৈনিকেরা জানান, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় প্রায়ই ওই আম গাছের নিচে মিটিং করতো ছাত্ররা। সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ছাত্ররা জড়ো হয়েছিলেন আমতলায়। পরে সেখান থেকে ছাত্ররা ভাষা সৈনিক গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভাঙার ঘোষণা দেন। সেখানে থেকে মিছিল নিয়ে বের হলে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হন বরকত, জব্বার, রফিকসহ বেশ কয়েকজন ভাষা সৈনিক।

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী ওই আম গাছটি এক সময় মারা যেতে শুরু করে। গাছটি বাঁচানোর চেষ্টাও করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম এই আম গাছের একটি চারা লাগানো হয় একই স্থানে। সেটাকেও বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখা যায়নি।

১৯৯৫ সালের ২১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর নজরুল ইসলাম ডাকসুকে চিঠি দিয়ে মৃত গাছটি কেটে আনার অনুমতি দেন। ২২ নভেম্বর গাছটি কেটে ডাকসু সংগ্রহ শালায় রাখা হয়। আজও গাছের গুঁড়ি সেখানে আছে।

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি  

২০০১ সালে ১৮ এপ্রিল তৎকালীন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র এবং তরুণ রাজনীতিবীদ ডা. মনিলাল আইচ লিটুর উদ্যোগে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত গাছটির কাছাকাছি (পুরাতন পিজি হোস্টেলের সামনে) আরও একটি গাছ লাগান। গাছটিকে অনেক পরিচর্চা করার পরও সেই গাছটিও বেশিদিন টিকেনি। কে বা কারা গাছটি দুমড়ে মুছড়ে উপড়ে ফেলে চলে যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিলাল আইচ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করে জানিয়ে একটি আম গাছের চারা ওখানে লাগিয়েছিলাম। কিন্তু সেটারও শেষ রক্ষা হয়নি। গাছটি লাগানোর পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়। এরপর কে বা কারা সেই গাছটি উপড়ে ফেলে। খবরটি শুনে বুকের মধ্যে খচ খচ করে উঠেছিল। কিন্তু তখন কিছুই করার ছিল না।’ 

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি

তিনি বলেন, ‘আমরা নিজের পকেটের টাকা খরচ করে অনেক কষ্টে প্রথমে ২৩০ টাকা দিয়ে একটি জীর্নশীর্ণ আমের চারাগাছ কিনেছিলাম শিশু একাডেমির সামনে থেকে। কিন্তু সেই গাছটি কারও পছন্দ না হওয়ায় ১২০০ টাকা দিয়ে গুলশানের একটি নার্সারি থেকে একটি ভালো চারা কিনে আনি। প্রধানমন্ত্রীর নিজে সেই গাছটি লাগান। তবে আমরা তা রক্ষা করতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আম গাছটি হয়তো রক্ষা করতে পারিন। তাই বলে আমি থেমেও থাকিনি। জাতিকে জানাতে চেয়েছি সেই আম গাছের কথা। আমি ২০১২ সালে ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ’ নামে একটি বই লিখেছি। সেখানেই একটি আম গাছের আত্মকাহিনী নামে একটি লেখা রয়েছে। সবাইকে আম গাছটির অবদান ও আজকের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে চেয়েছি।’ 

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি

এ বিষয়ে ভাষা সৈনিক রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আম গাছটিকে আমাদের আন্দোলনের অনেক প্রেরণা জুগিয়েছিল। কিন্তু সেই গাছটিকে রক্ষা করা যায়নি। তারপরও আমরা অনেকবারই চেষ্টা করেছি চারাগাছ লাগাতে। কিন্তু কোনোভাবেই সফল হতে পারিনি। কয়েকবার গাছ লাগানো হয়েছে কিন্তু টিকিয়ে রাখা যায়নি। নতুন করে একটি আম গাছ লাগিয়ে ভাষা শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার অনুরোধ জানাই।’

ওই আম গাছের জায়গায় নতুন কোনও আম গাছের চারা লাগানোর ভাষা সৈনিকেদের দাবিরে বিষয়ে জানতে চাইলে ভাষা অান্দোলন ও গবেষণা পরিষদের নির্বাহী পরিচালক এম অার মাহবুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ''সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভাষা সৈনিকদের পদযাত্রা হয়েছে তৎকালীন অামতলা এলাকায়। এরপর অালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানে একটি অামগাছ রোপন করার। ভাষা অান্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদ ও ভাষা অান্দোলন গবেষণা পরিষদ মিলে সরকারের কাছে দাবিটি উস্থাপন করবো। দেখা যাক সরকার সেটা বাস্তবায়নে এগিয়ে অাসে কি না।'

/এসটি/

আম গাছের ছবিগুলো নেওয়া ডা. মনিলাল আইচ লিটুর লেখা একটি আম গাছের আত্মকাহিনী থেকে নেওয়া।

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী