X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমে’ ঝুলে আছে লকডাউন

জাকিয়া আহমেদ
০১ জুন ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ০১ জুন ২০২১, ২০:০৫

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ভারত সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউন চলছে। সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলা লকডাউনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি। ওই সাত জেলায় লকডাউন জারি করতে দেরি হলে সঙ্কট বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সোমবার (৩১ মে) মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আলাপ করবো যে উনারা (মন্ত্রিপরিষদ) কবে থেকে লকডাউন দেবেন। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, যেসব জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী সেখানে লকডাউন দেওয়া।

তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, পুরো জেলা অবরুদ্ধ করা হবে নাকি জেলার নির্দিষ্ট কিছু এলাকা—তা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দেশে ভারত সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩০টি। এর মধ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রবণতা ৮ জেলায়। যা অন্যতম চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সংক্রমণ বাড়ায় এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় সেখানে বিশেষ লকডাউন চলছে। রবিবার (৩০ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে সংক্রমণের হার ৩৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, নওগাঁতে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ, সাতক্ষীরাতে ৩৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৫ শতাংশ।

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সম্প্রতি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন যাদের ভারত ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। তবে ভারত ভ্রমণের ইতিহাস নেই এমন রোগীও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম জানিয়েছেন , চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে, যারা কখনও সেখানে যাননি। অর্থাৎ দেশে ভারতীয় অতি সংক্রমণশীল ভ্যারিয়েন্ট বি.১.৬১৭ এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিক সংক্রমণ শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে ‘লকডাউন’ দিতে দেরি করলে ঝুঁকি থেকেই যাবে। তবে এখন যেহেতু রাজশাহীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে আম ও লিচুর মৌসুম চলছে, সে কারণে সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হচ্ছে বলে তার ধারণা। ‘সেখানে তিন চার হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। কঠোর লকডাউন দিলে চাষিরা সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ দিকটাও তারা (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ) মাথায় নিয়ে কাজ করছেন’— বলেন তিনি।

হাসপাতালে গত কয়েকদিনে রোগী ভর্তি বেড়েছে জানিয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ হাসপাতালে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে রোগী ছিল ১৩৬ জন, কিন্তু আজ ( সোমবার) পর্যন্ত সেখানে রোগী হয়েছেন ২০৫ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭ জন ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে রাজশাহী জেলারই রয়েছেন ১৯ জন আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রয়েছেন নয়জন। রোগীর চাপের কারণে সেখানে অতি সম্প্রতি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ( আইসিইউ) বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ১৮ বেড করা হয়েছে। সব বেডেই রোগী আছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী বলেন, মানুষ যত মুভ করবে, ততই ইনফেকশন ছড়াবে। তাই যদি আমরা ইনফেকশনকে কন্ট্রোল করতে চাই তাহলে লকডাউন কঠিন ও কঠোর করতে হবে।

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা সীমান্তবর্তী ৭ জেলায় লকডাউনের বিষয়ে সেখানকার জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা কাল এ বিষয়ে কথা বলবো। তবে এ এলাকাতে লকডাউন দিতে অন্যতম সমস্যা আমের মৌসুম। আমের কারণেই লকডাউন দিতে সবাই একটু সংশয়ে রয়েছে।

‘এখানে ইনভেস্টমেন্ট অনেক, এর সঙ্গে জীবিকার সম্পর্ক রয়েছে। চিকিৎসক হিসেবে আমরা লকডাউনের কথা বলছি কিন্তু নীতি নির্ধারকরা জীবিকার কথাও চিন্তা করছে, কেবল জীবনের কথা বলেন’— বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী। তার মতে, যদি বেশি দেরি করা হয় তাহলে কিন্তু ছড়িয়ে যেতে পারে, তাই একটা স্ট্রিক্ট লকডাউন দিলে ভালো হতো।

এদিকে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, অনেক পরিবার আমের বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই এই মৌসুমে আম কেনাবেচা করতে হবে।তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাগান থেকে আম কেনাবেচা নিশ্চিত করতে হবে। বাজারজাত করার ক্ষেত্রে স্বল্প পরিসরে খোলা জায়গায় বিক্রি করতে হবে। অনলাইন শপিংয়ে মাধ্যমে আম কেনাবেচা নিশ্চিত করতে হবে।

দেশজুড়ে ইতোমধ্যেই লকডাউন চলমান জানিয়ে রাজশাহী জেলার জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই লকডাউনের বাইরে রাজশাহী জেলার করোনা ব্যবস্থাপনা কমিটি এখনও পর্যন্ত কোনও চিন্তা করছেন না। তবে পরিস্থিতি যদি আরও বেশি খারাপ অবস্থায় যায় তাহলে পরবর্তীতে বিবেচনা করবো, আমরা আরও দুটো দিন দেখবো।

তিনি বলেন, একটি ছোট জেলা লকডাউন করা আর সিটি করপোরেশন বা মহানগর লকডাউন করা এক বিষয় নয়। ক্যাপাবিলিটির বিষয়টাও রয়েছে। আমি লকডাউন ডিক্লেয়ার করে দিলাম, কিন্তু এনফোর্স করতে পারলাম না, তখন সেটা নিয়েও কথা উঠবে।

আমের বিষয়টিকে একটা ইস্যু আছেই মন্তব্য করে তিনি আব্দুল জলিল বলেন, ইতোমধ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কৃষকের কথাও আমাদেরকে ভাবতে হবে। একজন চিকিৎসক তার পয়েন্ট অব ভিউ থেকে কথা বলেন, কিন্তু যখন অনেক বড় একটি সিদ্ধান্ত হয় তখন অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হয়

 

/এমআর/
সম্পর্কিত
প্রথমবার লকডাউন চীনের বাণিজ্যিক শহর সাংহাই
প্রথমবারের মতো লকডাউনে কিরিবাতি
একজনের ওমিক্রন শনাক্তের পর পুরো বিল্ডিং লকডাউন
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা