X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

অর্থ পাচারকারীদের নামগুলো দিন: অর্থমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ জুন ২০২১, ১৫:০০আপডেট : ০৭ জুন ২০২১, ১৭:১৭

আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আগামী এক বছরের মধ্যে ১৫টি আইন করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের অর্থপাচার সংক্রান্ত সমালোচনার জবাবে এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নামগুলো আমাদের দেন। এ কাজটি করলে আমাদের জন্য সহজ হবে। সোমবার (৭ জুন) সংসদে সম্পূরক বাজেট পাসের প্রক্রিয়ার সময় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে ছাঁটাই প্রস্তাব তোলার সময় বিরোধী সংসদ সদস্যরা বিদেশে টাকা পাচার, পুঁজিবাজারের অব্যবস্থাপনাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সমালোচনা করেন।

এসব সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের কষ্টে অর্জিত টাকা বিদেশে চলে যাবে, আপনাদের যেমন লাগে, আমারও লাগে। আমি অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে। আমরা সবাই চাই এগুলো বন্ধ করতে হবে। বন্ধ হচ্ছে। আগের মতো অবস্থা নেই। আগে সিমেন্টের নাম করে বালি আসতো। একটার নাম করে আরেকটা আসতো। আন্ডার ইনভয়েসিং, ওভার ইনভয়েসিং আগের মতো হয় না। একদম বন্ধ হয়ে গেছে বলবো না। পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই না।’

এসব অনিয়ম বন্ধে সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ছয় থেকে ১২ মাসের মধ্যে ১৫টি আইন দেখতে পারবেন। এগুলো বন্ধ করার জন্য। আমি নিজে জানি কীভাবে এগুলো হয়। কারা করে জানি না। অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, অকার্যকর সিস্টেমের জন্য এগুলো হয়। আমরা সংস্কারমুখী কাজ করবো। নতুন নতুন আইন করবো। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে দায় নিয়ে কাজ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দেবো। কোনও টলারেন্স নেই এখানে। টাকা এখন দেশে আসে।’

বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কারা বিদেশে টাকা নিয়ে যায়, তা আমার জানা নেই। লিস্ট আমার কাছে নেই।’

বিরোধী সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘নামগুলো আমাদের দেন। কাজটি করলে আমাদের জন্য সহজ হবে। এখনও অনেকেই জেলে আছেন। বিচার হচ্ছে। আগে যেমন ঢালাওভাবে চলে যেত, এখন তেমন নেই।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘১২ বছরে ঋণের সুদ হার ১২.১ ভাগ থেকে কমে ৭.৩ ভাগ হয়েছে। এখন ব্যাংকের শাখা দ্বিগুণ হয়েছে। চাহিদা বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে ব্রাঞ্চ হয়েছে। দেশের মানুষ সেবা পাচ্ছে। ২০০৬ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১৩.৬ শতাংশ। এখন আট শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে টোটাল লোন আউটস্ট্যাডিং ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। এটা এখন আটগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা হয়েছে।’

এর আগে মঞ্জুরি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ছাঁটাই প্রস্তাব তোলার সময় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্কুলে অঙ্কে ভালো ছাত্র ছিলাম। শিক্ষকরা আদর করতো। কিন্তু বাজেটের অঙ্কের হিসাব মেলাতে পারছি না। ঘাটতি কোথায়? কোথা থেকে টাকা আনবে? প্রবৃদ্ধির কথা বলছি। করোনাকালীন সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে করোনা নিয়ন্ত্রণে। না হলে প্রবাস আয়, গার্মেন্ট খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রবৃদ্ধির জন্য লাফাচ্ছি। সুচের ফোটা দিলে বেলুনের মতো চুপসে যাবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ না হলে গার্মেন্ট আর প্রবাস আয় কমে যাবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ না করলে ভয়ানক ধস নামবে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির কারণে আর্থিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা জিরো টলারেনন্স। অর্থমন্ত্রী বলেছেন অপ্রদর্শিত আয় নিয়ে। এটা সাংঘর্ষিক। দুর্নীতি, মাদক, অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে বিত্ত গড়ে তুললে তাকে সুযোগ দিয়ে ন্যায় করা হবে না। বেহাল দশা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে করোনা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মেগা প্রকল্প বাদ দেন।’

বিএনপির আরেক সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিবারের হাতে ব্যাংক তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জনগণের টাকার হরিলুট হচ্ছে। সংসদে ঋণখেলাপির তালিকা দেওয়া হলো। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো? বিদেশে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। ওভার আর আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যাচ্ছে। এর বাইরে হুন্ডির পরিমাণ ধরলে আল্লাহ মাবুদ জানেন কত টাকা বিদেশে গেছে!’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আর্থিক খাতে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্ব সঠিক। কর্তৃত্ব দুর্বল। ব্যাংকে কর্তৃত্ব নেই। কর্তৃত্ব না থাকলে অবাধে এসব হবে। এক ব্যাংকের পরিচালক আরেক ব্যাংকের টাকা নিচ্ছে। টাকা নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দুদকের একটি অফিস কানাডা, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় করুন। তাহলে দেখা যাবে কে কত টাকা নিয়েছে। পিকে হালদার এত টাকা নিলো। বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করলে চুরি করার সুযোগ থাকে না। অর্থমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ে বসে কী করবেন। দোষ হয় মন্ত্রীর। অডিট করলে টাকা পাচার হয় না। ৯ মিনিটের জন্য পিকে হালদারকে ধরতে পারেনি। তাহলে ৯ ঘণ্টা আগে ধরতে পারলেন না কেন?’

জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান নির্যাতিত এতিমদের মতো। দেখার কেউ নেই। লুটপাট হচ্ছে। দুর্নীতি হচ্ছে। কিছুই হয় না। শাস্তি হয় না।’

/ইএইচএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক
অন্যায় করে পার পাওয়া যায়, এমন সংস্কৃতি থেকে বেরোতে হবে: ড. সালেহউদ্দিন
কীভাবে ১২ মাসে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনবেন, অর্থমন্ত্রীকে হাজ্জাজ
সর্বশেষ খবর
বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হাসিবের পরিবারের অনুদান না পাওয়ার অভিযোগ
বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হাসিবের পরিবারের অনুদান না পাওয়ার অভিযোগ
কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাথার খুলিসহ গ্রেফতার ৪
কুষ্টিয়াসহ তিন জেলায় যৌথবাহিনীর অভিযান, অস্ত্র-মাথার খুলিসহ গ্রেফতার ৪
শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ বললেন এনসিপি নেত্রী সামান্থা
শেখ হাসিনাকে ‘বাংলার ইয়াজিদ’ বললেন এনসিপি নেত্রী সামান্থা
মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দলকে ‘হাস্যকর’ বললেন ট্রাম্প
মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দলকে ‘হাস্যকর’ বললেন ট্রাম্প
সর্বাধিক পঠিত
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে