(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের ঘটনা।)
নয়াদিল্লিতে ভারত-পাকিস্তান চুক্তি সম্পাদনের পর এদিন থেকে আটক বাঙালিদের প্রথম দলটিকে দেশের মাটিতে পৌঁছানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। একইসঙ্গে বাংলাদেশে অবস্থানরত পাকিস্তানি নাগরিকদের একটি দল তাদের দেশে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানানো হয়।
রেডক্রস এই লোক বিনিময়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে অবসান ঘটবে বহুদিনের প্রতীক্ষা ও উৎকণ্ঠার। ঢাকা জেলা প্রশাসক সৈয়দ রেজাউল হায়াত দৈনিক বাংলার এক প্রতিনিধিকে জানান, আফগানিস্তান এয়ারলাইন্স-এর বিমানে করে আটক বাঙালিরা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করবেন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫ হাজার বাঙালি ফিরে আসবেন। তাদের জন্য ঢাকার উপকণ্ঠ মিরপুরে নুরানী একাডেমির কাছে একটি অস্থায়ী অভ্যর্থনা শিবির খোলা হয়।
৫ হাজার লোক ফিরে আসার পর ২৪ ঘণ্টা থেকে তিনদিনের মধ্যে প্রত্যাবর্তনকারী নিজ নিজ বাসস্থানে চলে যাবেন। অভ্যর্থনা শিবিরে তাদের প্রতিদিন মাথাপিছু ৫ টাকা খাবারের জন্য এবং নিজ বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার জন্য মাথাপিছু ৩০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ ছাড়া প্রতিটি পরিবারকে এককালীন একশ টাকা নগদ সাহায্য দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানিদের বিদায় দেওয়ার জন্য তেজগাঁও বিমানবন্দরে আরেকটি অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে। এই শিবিরেও ৫ হাজার জনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য প্রতিদিন মাথাপিছু ৫ টাকা খাদ্যে বরাদ্দ করা হয় এবং শিবিরের খাবারের অস্থায়ী দোকান খোলা থাকবে বলেও জানানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে আকাশ, সমুদ্র ও সড়ক পথে প্রত্যাবর্তনকারী বাঙালিদের যথাক্রমে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও যশোরে অভ্যর্থনা জানানো হবে। একইভাবে পাকিস্তানি নাগরিক তাদের দেশে ফিরে যাবেন। সমুদ্র সড়কপথে বাঙালিদের ফিরে আসতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ দেরি হতে পারে।
১৯৭৩ সালে সংবিধান সংশোধনী বিল আনার সম্ভাবনা
সংসদের চলতি অধিবেশনে সংবিধানের কতিপয় ধারা সংশোধনের উদ্দেশ্যে বিল উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। সংসদে দুটি অধিবেশনের মধ্যবর্তী বিরতিকাল ৬০ দিনের পরিবর্তে ১২০ দিন করার জন্য একটি সংশোধনী বিল উত্থাপিত হবে। এটাই হবে সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী। উক্ত মহলের মতে এই সংশোধনী বিল উত্থাপনের বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত এবং এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় বর্তমানে সংশোধনী বিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য, সংবিধানের বর্তমান বিধান অনুযায়ী সংসদের অধিবেশনের অন্তর্বর্তী সময়ের ব্যবধান হচ্ছে ৬০ দিন। অর্থাৎ সংসদের অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন আহ্বান করতে হবে। উক্ত সংশোধনী বিলে এই সময়ের ব্যবধান ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার ব্যাপারে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করে। সংবিধানের আরও দু-একটি বিধানের ওপর সংশোধনী বিল উত্থাপনের বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে সমাজবিরোধী কার্যকলাপের প্রবণতা প্রতিহত ও দুষ্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে সংবিধানে কয়টি ধারা ও সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দেবে। তবে এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
চিকিৎসার জন্য বেগম মুজিবের লন্ডনযাত্রা
১৯৭৩ সালের এদিন সকালে বেগম মুজিব চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, গত কয়েক দিন ধরে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভূমি প্রশাসন ও ভূমি রাজস্বমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবত তাকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান। বেগম মুজিবের সঙ্গে তার ছেলে শেখ জামাল ছিলেন।
আবার বন্যার কবলে দেশ
১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে মৌসুম শেষে কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। নেত্রকোনা থেকে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানা যায়, তিনদিনের প্রবল বর্ষণে মহাকুমার দশটি এলাকার মধ্যে ৯টি প্লাবিত হয়েছে। মহাকুমার তিনটি নদীর ওপর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। খবরে জানানো হয়, প্রবল বর্ষণে বগুড়ার কয়েকটি অঞ্চলের ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সেবছর এটি ছিল তৃতীয়দফা বন্যার আঘাত।