X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানিদের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বানচালের চেষ্টা করেছিল জামায়াত: জয়

বাংলা ট্রিবিউন ডেস্ক
১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:২৩আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৩১

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতে, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি দখলদার সেনাদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশে গঠন করা হয়েছিল রাজাকার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত এই বাহিনীর সদস্যদের পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীর পদে বসিয়েছিল জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে সেই ইতিহাস তুলে ধরেছেন তিনি। 

স্ট্যাটাসের শুরুতে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শেষের দিকে, বাঙালি জাতির বিজয় যখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র; পাকিস্তানিদের বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং মুক্তিকামী বাঙালি জাতির পক্ষে যখন বিশ্বজুড়ে জনমত তুঙ্গে, ঠিক তখনই নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পাকিস্তানিরা। তারা তখন জামায়াতের কয়েকজন নেতাকে বাঙালি জাতির প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের অধিবেশনে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়। উদ্দেশ্য, বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় বানচাল করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করা।’

এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে উল্লেখ করেন, ‘আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-ও পাকিস্তানিদের একটি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। এজন্য তারা খন্দকার মোশতাক, তাহের উদ্দীন ঠাকুর, মাহাবুবুল আলম চাষীদের সঙ্গে একটি ডানপন্থী বলয় গড়ে তোলে। তাদের লক্ষ্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পরাজয় রোধ করা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন চিরতরে মুছে দেওয়া। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি কনফেডারেশন রাষ্ট্র গঠন করা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে তাদের এই ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় প্রবাসী সরকারের নেতারা সতর্ক হয়ে যায়। ফলে তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে থেমে ছিল না জামায়াত। শেষ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বাসনা দমিয়ে দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। রণাঙ্গনে যেমন জামায়াতের নেতাকর্মীরা সরাসরি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেছে, বাঙালি নারীদের ধর্ষণ, লুটপাট ও জবরদখল করেছে; তেমনই কূটনৈতিকভাবেও বিভিন্ন রাষ্ট্রকে ভুল বুঝিয়ে মুক্তিযুদ্ধে তাদের সমর্থনদান থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে।’

সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘১৯৭১ সালের নভেম্বরে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি জান্তারা, ঠিক তখনই তাদের সমর্থনে এবং বাঙালির জাতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে কথা বলতে যায় জামায়াতের মুখপাত্র ও মুসলিম লীগ নেতা শাহ আজিজুর রহমান। সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে সে। পাকিস্তান কূটনৈতিক দলের বাঙালি নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা অস্বীকার করে এই শাহ আজিজ। এমনকি অন্যান্য মুসলিম দেশ যেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়, এজন্য আহ্বান জানায় সে। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এই ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসায়।

মুক্তিযুদ্ধকালে বাঙালি জাতির ওপর নির্যাতনের ব্যাপারে জামায়াতের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেছে তৎকালীন গভর্নর জেনারেল টিক্কা খানের উপদেষ্টা জেনারেল রাও ফরমান আলী। সজীব ওয়াজেদ জয় এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আত্মজীবনীতে সে (জেনারেল রাও ফরমান আলী) লিখেছে, ‘জেনারেল নিয়াজী বাংলাকে শত্রুভূমি হিসেবে আখ্যায়িত করে নিয়মিত বক্তব্য প্রদান করে সেনাদের ক্ষেপিয়ে তুলতো। তবে আমি কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করি। ফলে নুরুল আমীন, খাজা খয়ের, ফরিদ আহমদ, শফিকুল ইসলাম, গোলাম আযমরা টিক্কার সঙ্গে দেখা করতে আসে এবং শান্তি কমিটি গঠন করে। তাদের উদ্যোগে মুসলীম লীগ, পিডিপি, জামায়াতে ইসলামিসহ আরও কয়েকটি পাকিস্তানপন্থী দলকে নিয়ে সারা দেশে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। ৭ এপ্রিল যুদ্ধ চলাকালে তারা পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় একটি মিছিলও বের করেছিল। এরপর পাকিস্তানি সেনাদের যুদ্ধে সহযোগিতা করা, রাজধানীর বাইরে রাস্তাঘাট চিনিয়ে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত করাসহ সার্বিক কাজের জন্য রাজাকার নামে আরেকটি বাহিনী গঠন করা হয়। এমনকি যুদ্ধকালে নিয়াজীর তৈরি সশস্ত্র আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীও দারুণ সহযোগিতা করেছে পাকিস্তানি সেনাদের। এসব বাহিনীর প্রধান ছিল গোলাম আযম, শাহ আজিজ, নিজামী, মুজাহিদসহ শীর্ষ জামায়াত ও শিবিরের নেতারা।’ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ’৭১-এর ধর্ষক-খুনিদের এই কমান্ডারদের মন্ত্রী বানিয়েছিল– উল্লেখ করেন জয়।

বঙ্গবন্ধুর নাতি জয়ের মন্তব্য, মূলত পাকিস্তানি দখলদার সেনাদের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশে গঠন করা হয়েছিল রাজাকার বাহিনী। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এজন্য প্রায় ৫০ হাজার জামায়াত নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয় পাকিস্তানি সেনারা। একদিন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর জেনারেল এ কে নিয়াজী তার জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিককে ডাকে। সিদ্দিক সালিক তার আত্মজীবনীতে লিখেছে, ‘এরপর নিয়াজি তাকে বলেছিল, ‘আজ থেকে তুমি রাজাকারদের আল-বদর ও আল-শামস বলে অভিহিত করবে। তাহলে বোঝা যাবে না যে, এরা কোনও নির্দিষ্ট পার্টির লোক।’

সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের এই স্ট্যাটাসের শেষে ‘লিবারেশন ওয়ার ১৯৭১’, ‘বাংলাদেশ’ এবং ‘বাংলাদেশ ৫০’ হ্যাশট্যাগ তিনটি ব্যবহার করেছেন।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
‘বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উৎসাহিত করেছিল’
গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইলেন সজীব ওয়াজেদ
বঙ্গবন্ধুর আহ্বানেই আমরা প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
৭ বছর পর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়