X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ জানুয়ারি ২০২২, ২১:০৬আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০২২, ২২:১৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০০৯ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৩ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আর্থ-সামাজিক এবং অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ বিস্ময়কর উন্নয়ন করেছে। গত ১৩ বছরে আমরা আপনাদের জন্য কী কী করেছি তা আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, যেসব ওয়াদা দিয়েছিলাম আমরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’ বর্তমান সরকারের তৃতীয় বর্ষপূতি উপলক্ষে শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে, ‘২০২১ সাল ছিল আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক অভূতপূর্ব স্বীকৃতির বছর। গত বছর আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত যোগ্যতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষে এই অর্জন বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের।’

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে ২০২০ এবং ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, ‘সেই সংকট এখনও কাটেনি। করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। নেমে এসেছিল স্থবিরতা। তবে, আপনাদের সহায়তায় আমরা তা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এরমধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৫৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে।’

করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা করে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী তিনি তুলে ধরেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১-এ বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে জানান– দ্য ইকোনমিস্ট ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বলেছে, ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ।

দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুনভাবে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তাই দেশবাসীকে সাবধান হওয়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এখন পূর্ণোদ্যমে কোভিড-১৯ টিকাকরণের কাজ চলছে। চলতি মাস থেকে গণটিকা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ আর দুই ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার। গত মাস থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে সরকারের কাছে সাড়ে ৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা মজুত আছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ সম্মুখ সারির যেসব যোদ্ধা মারা গেছেন এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর যেসব রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মারা গেছেন, তাঁদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাস্থ্য খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি জানান, সারা দেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউ

নিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামীণ নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।

শেখ হাসিনার মন্তব্য, ‘আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং গুণগত মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু ২০১৯-২০ সালে ৭২ দশমিক ৮ বছরে উন্নীত হয়েছে। ৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ ও অনূর্ধ্ব ১ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৫-তে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃ মৃত্যুহার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে।’

শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি
করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিল বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে এবং স্কুল পর্যায়ের জন্য টেলিভিশন মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। মহামারির প্রকোপ কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় ইতোমধ্যে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর তথ্যানুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার বৃত্তি-উপবৃত্তি বিতরণ করা হয়েছে। ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় স্নাতক ও সমমান শ্রেণির আরও ২ লাখ ১০ হাজার ৪৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ১১১ কোটি বিতরণ করা হয়। 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ভাষণে আরও জানান, দেশের ৭ হাজার ৬২৪টি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬১ জন শিক্ষক-কর্মচারীকে প্রতি মাসে ২৭৬ কোটি টাকা বেতন ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ২০২০ সালে নতুনভাবে ৪৯৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ১ হাজার ৫১৯টি এবতেদায়ি মাদ্রাসার ৪ হাজার ৫২৯ জন শিক্ষককে ত্রৈমাসিক ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। দাওরায়ে হাদিস পর্যায়কে মাস্টার্স সমমান দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের সুফল
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণের ফলেই করোনাকালে ডিজিটাল প্রযুক্তি ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশের ১৮ হাজার ৪৩৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের নবম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গত মাসে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক যুগে প্রবেশ করেছে। আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে দেশের সব টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠান সম্প্রচার ছাড়াও প্রত্যন্ত ৩১টি দ্বীপে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কয়েকটি ব্যাংক এবং সেনাবাহিনী স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর সেবা গ্রহণ করছে।’

করোনাকালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটিতে উন্নীত হয়েছে বলে ভাষণে জানান শেখ হাসিনা। তার মতে, ‘অনলাইনে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং লেনদেন সুবিধা গ্রহণ করে সাধারণ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে পেরেছেন।’

ইন্টারনেট বিপ্লবের পর বিশ্ব এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তেমনি খুলে দেবে সম্ভাবনার দুয়ার। তিনি বলেন, ‘আমাদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী সুদক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের রয়েছে বিপুলসংখ্যক তরুণ। তরুণ প্রজন্মকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তোলার যাবতীয় উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করছি। আমাদের প্রায় ৬ লাখ তরুণ-তরুণী আজ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। আমরা এই খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে পুঁজি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছি।’

খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ
প্রধানমন্ত্রী গর্বের সঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।

উন্নয়নের মূলধারায় গ্রামোন্নয়ন
আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার আগের সরকারগুলোর আমলে দেশের গ্রামগুলো বরাবরই উন্নয়ন ভাবনার বাইরে ছিল বলে মন্তব্য প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বলেন, ‘আমরাই প্রথম গ্রামোন্নয়নকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করি। ২০১৮ সালে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করি।’

এরপর শেখ হাসিনা গ্রামীণ উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি জানান, দেশের প্রায় সব গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত পল্লি এলাকায় ৬৬ হাজার ৭৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩ লাখ ৯৪ হাজার ব্রিজ-কালভার্ট, ১ হাজার ৭৬৭টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ১ হাজার ২৫টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ৩২৬টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য এর আগে আমরা ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ শীর্ষক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এর আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় ৪ হাজার ৪৩৯ কিলোমিটার নদী, খাল ও জলাশয় খনন করা হচ্ছে।”

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতক খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের খুরুশকুলে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবনে ৪ হাজার ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ফ্ল্যাট জলবায়ু উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে ১৯টি ভবন বরাদ্দকারীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত বছরের মাঝামাঝি ৩০০ পরিবারের মধ্যে ফ্ল্যাট বিতরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। সেজন্য সরকার নারী সমাজকে উৎপাদন এবং সেবামূলক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ব্যবস্থা নিয়েছে। নারীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি উপজেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্বল্প সুদে বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, চা শ্রমিক, বেদে সম্প্রদায়, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীসহ দুরারোগ্য ব্যক্তিদের চিকিৎসা ইত্যাদি খাতে মোট ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার তথ্যানুযায়ী, মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২ লাখ ৮৭ হাজার। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। 

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন
ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে ভাষণে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৪৫৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চতুর্থ বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করেছে সরকার। আরও ৮৮৭ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। 

এরপর রেল ও আকাশপথের উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ রেলওয়েকে যুগোপযোগী এবং আধুনিক গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমানে ১৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৭টি প্রকল্পের কাজ চলছে। ঢাকার চারদিকে সার্কুলার রেললাইন স্থাপনে সমীক্ষার কাজ চলছে। ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং ১ হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর ওপর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে ১২টি নতুন অত্যাধুনিক বোয়িং ও ড্রিমলাইনার এবং ৩টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ সংযোজিত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীকে স্মরণ
ভাষণের শুরুতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই তিনি স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানান সশ্রদ্ধ সালাম।

শেখ হাসিনা স্মরণ করেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নিহত বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ জামাল, ১০ বছরের শেখ রাসেল, কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের সহধর্মিণী রোজী জামাল, চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, মুক্তিযোদ্ধা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, মুক্তিযোদ্ধা কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ব্রিগেডিয়ার জামিল এবং পুলিশের এএসআই সিদ্দিকুর রহমানসহ সেই রাতের সব শহীদকে। 

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। 

এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভী রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী, ২০০১ সালের পর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ.এম.এস কিবরিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আহসানউল্লাহ মাস্টার, মঞ্জুরুল ইমাম, মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার নেতাকর্মীকে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাস এবং পেট্রোলবোমা হামলায় মৃত্যুবরণকারীদের স্মরণ করেন এবং আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। 

/ইএইচএস/জেএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
ভারতীয় শাড়ি দিয়ে কাঁথা সেলাই করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী
বিএনপির নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী‘বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ালে বর্জনের কথা বিশ্বাস করবো’
সর্বশেষ খবর
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
পানিতে ডুবে ভাইবোনসহ ৩ শিশুর মৃত্যু
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উন্নয়ন ফোরামের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নারী উন্নয়ন ফোরামের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা