X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

৫০ বছর আগে যেদিন প্রথম দেখা মুজিব-ইন্দিরার

রঞ্জন বসু, দিল্লি প্রতিনিধি 
১০ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:০০আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:১৫

তারিখটা ছিল ১০ জানুয়ারি, সোমবার—অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগেকার একদিন। কনকনে ঠাণ্ডা আর ঝড়ো বাতাসের মধ্যেই দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে সকাল ৮টা নাগাদ নামলো ব্রিটিশ রয়্যাল এয়ার ফোর্সের জেটলাইনার–লন্ডন থেকে টানা ১৮ ঘণ্টা ওড়ার পর।

উড়োজাহাজের ভিভিআইপি আসনে ছিলেন এমন এক যাত্রী– যিনি ৯ মাসেরও বেশি বিদেশে জেলের ভেতর থেকেই নিজে দেশের মুক্তি-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বুঝতেই পারছেন, আমরা বলছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নায়ক ও জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কথা–যিনি দেশে ফেরার পথে ভারতকে কৃতজ্ঞতা জানাতে দিল্লিতে সংক্ষিপ্ত স্টপওভার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। 

তার পাশের আসনেই ছিলেন ভারতের কূটনীতিবিদ ও তখন লন্ডন হাইকমিশনে পোস্টেড শশাঙ্ক ব্যানার্জি। দীর্ঘ যাত্রায় ওই বাঙালি কূটনীতিবিদের সঙ্গে বিশুদ্ধ মাতৃভাষাতেই নানা প্রসঙ্গে কথাবার্তা হয়েছিল শেখ মুজিবের।

৫০ বছর আগে যেদিন প্রথম দেখা মুজিব-ইন্দিরার

ফ্লাইট দিল্লির মাটি ছোঁয়ার পর যখন বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে রেড কার্পেট বেয়ে নেমে আসছেন– পরনে তার কালো স্যুট ও বিখ্যাত ‘মুজিব কোট’। তখন দিল্লির আকাশ থেকে হলো গোলাপ আর গাঁদার পুষ্পবৃষ্টি। বাংলাদেশের জাতির জনককে ভারত বরণ করে নিলো ফুলেল শুভেচ্ছায়।

বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং-সহ ক্যাবিনেট সদস্যরা। শেখ মুজিব দিল্লির ভূমি স্পর্শ করামাত্র একুশবার তোপধ্বনিতে তাঁকে স্বাগত জানানো হলো– দেড়শ সদস্যের বাহিনী তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দিলো– যে অভিবাদন বরাদ্দ থাকে কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য।

ভারত যে শেখ মুজিবুর রহমানকে সেদিনই বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে– তার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবেই সে কথা স্বীকার করে নিলো ইন্দিরা গান্ধীর সরকার। সেদিন বিমানবন্দরে সোভিয়েত ব্লকের সদস্যরা ছাড়াও ব্রিটেন, বেলজিয়াম, পশ্চিম জার্মানি, ইতালি, ডেনমার্ক-সহ আরও অন্তত গোটা কুড়ি দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সেই দেশগুলোও একে একে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে– যদিও ১০ জানুয়ারি সকাল পর্যন্ত ভুটান ও ভারত ছাড়া আরও কোনও দেশের নামই সেই তালিকায় ছিল না।

পরে বিমানবন্দরেই পাঁচ মিনিটের সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিয়ে বঙ্গবন্ধু ভারতের জনগণকে ও ভারতের ‘ম্যাগনিফিসেন্ট’ প্রধানমন্ত্রীকে তার অন্তরের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।  

ঘটনাচক্রে সেদিনই কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে শেখ মুজিবের প্রথম দেখা। পরে আরও একাধিকবার দুজনের দেখা হয়েছে, কিন্তু সেদিনের প্রথম সাক্ষাতের গুরুত্বই ছিল আলাদা। বিমানবন্দরের পর তারা দুজনে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলেন দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনেও, দুই রাষ্ট্রনায়কের পরস্পরকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনাজানার সুযোগ হয়।  

এর আগে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ধরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ এবং ভারতীয় গোয়েন্দাদের সূত্রে ইন্দিরা গান্ধী নিয়মিতই শেখ মুজিবের খোঁজ-খবর রাখতেন, কিন্তু দুজনের প্রথম মুখোমুখি দেখা হওয়ার মধ্যে দিয়ে যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও আস্থার সূত্রপাত, দুই দেশই বহু দিন ধরে তার সুফল পেয়েছে।

৫০ বছর আগে যেদিন প্রথম দেখা মুজিব-ইন্দিরার

বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে শেখ মুজিবের কনভয় দিল্লির রাস্তা দিয়ে আট মাইল পথ পেরিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে রাইসিনা হিলসের রাষ্ট্রপতি ভবনে। প্রবল ঠাণ্ডার মধ্যেও দিল্লির স্কুল-কলেজের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী সেদিন রাস্তার দুধারে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন–তারা ঘন ঘন স্লোগান দিচ্ছিলেন ‘জয় বাংলা’ আর ‘জয় হিন্দ’।

দিল্লি ইউনিভার্সিটির সদ্য-সাবেক উপাচার্য পূরণ চাঁদ জোশী তখন কলেজে পড়া সদ্য যুবক, তিনিও সেদিন ছিলেন রাস্তার ধারেই। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলছিলেন, ‘সেদিনের দৃশ্য এখনও চোখ বুজলেই স্পষ্ট দেখতে পাই। গাড়ির ওপর দাঁড়ানো দীর্ঘদেহী বঙ্গবন্ধুর সহাস্য মুখ আর হাত নাড়া আমাদের সবার মন জয় করে নিয়েছিল।’

দিল্লিতে ভুটানের বর্তমান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল ভেতসপ নামগিয়েল তখন ভারতের দেরাদুনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির স্নাতক স্তরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তরুণ ওই সেনা কর্মকর্তা পরে এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘বিমান থেকে বঙ্গবন্ধু যখন দিল্লির মাটিতে নেমে আসছেন, সেই ছবি আমরা দেরাদুনে বসে টেলিভিশনে লাইভ দেখেছিলাম। তার সেই দৃপ্ত ক্যারিশমা ও অনন্য বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আজও আমি ভুলতে পারি না, পঞ্চাশ বছর পরেও।’

১১ জানুয়ারি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের দিল্লি সংবাদদাতা শেখ মুজিবের সফর কভার করতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘নতুন দিল্লিতে নেমে মুজিব ভারতের সঙ্গে চিরন্তন মৈত্রীর অঙ্গীকার করলেন।’

দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কে নানা ওঠাপড়ার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন কিন্তু অনেকাংশেই সফল হয়েছে।

৫০ বছর আগে যেদিন প্রথম দেখা মুজিব-ইন্দিরার

পাদটীকা: দিল্লিতে শেখ মুজিবকে স্বাগত জানাতে সেদিন ভারতে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা গেলেও মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ বি কিটিং যাননি। নিউ ইয়র্ক টাইমস পরদিন রিপোর্ট করেছিল, ওয়াশিংটন থেকেই কিটিংকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল তিনি যেন পালাম বিমানবন্দরে না যান!

/এমআর/এমওএফ/ইউএস/
সম্পর্কিত
রাঙামাটিতে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য
শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস, এসিল্যান্ডকে অব্যাহতি
গাজীপুর সিটি করপোরেশনবঙ্গবন্ধুর মাগফিরাত কামনায় চিঠি দিয়ে সচিব ওএসডি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা বরখাস্ত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক