X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইভিএম প্রকল্প ফেরত: ব্যয় কমানোর পরামর্শ পরিকল্পনা কমিশনের

এমরান হোসাইন শেখ
০৮ নভেম্বর ২০২২, ২১:৩০আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১৩:৫৫

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্পে কয়েকটি খাতে খরচ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। জানা গেছে, কমিশন থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠিয়ে এর কয়েকটি খাতে ব্যয় কমিয়ে নতুন করে প্রাক্কলন করে কমিশনে দিতে বলেছে। তবে, কোন কোন খাতে কী পরিমাণ টাকা কমাতে বলেছে তা জানা যায়নি। এদিকে নতুন এই ইভিএম প্রকল্পটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এসেছে।

 আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে দুই লাখ ইভিএম কিনতে প্রকল্প গ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ‘নির্বাচনি ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ ২৩ হাজার টাকার এই প্রকল্প গত ১৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন অনুমোদন দেয়। পরে প্রকল্পটি প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা একনেকে অনুমোদনের জন্য ১৯ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরিকল্পনা কমিশন ইতোমধ্যে প্রকল্প যাচাই বৈঠক করে কিছু খাতে খরচ কমাতে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

ইসির প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, শুধু ইভিএম কেনায় খরচ হবে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ইভিএম সেন্টার স্থাপন, অঞ্চলভিত্তিক ওয়্যারহাউজ নির্মাণ, ইভিএম সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় খরচ হবে ৬৯০ কোটি টাকা।

 প্রকল্পে প্রতিটি ইভিএম কেনার দাম ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে যে মেশিন কেনা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা করে, সেটি এখন কেনায় অতিরিক্ত খরচ হবে ১ লাখ টাকার বেশি। বর্তমানে চলমান প্রকল্পে দেড় লাখ ইভিএম কেনা হয়েছে। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসির প্রস্তাবিত প্রকল্পে নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইভিএমে ভোটগ্রহণে দক্ষতা বৃদ্ধি, ভোটার শিখন, ইভিএম নিয়ে জনসচেতনতা ও দেশব্যাপী ইভিএমের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রচার চালাতে ২০৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে ইভিএমের নেতিবাচক কনটেন্টের বিপরীতে ইতিবাচক প্রচারণার কথাও বলা আছে। প্রচারের অংশ হিসেবে দেশে পাঁচটি আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করার প্রস্তাবও আছে ইসির অনুমোদিত ইভিএম প্রকল্পে। 

নির্বাচনে সিসিটিভি ক্যামেরা ও নিরাপত্তার সামগ্রী ভাড়া বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। এতে ২ লাখ ২৫ হাজার সিসিটিভি ক্যামেরার ভাড়াসহ সংযোগ সেট করার খরচ ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। সিসিটিভি স্থাপনে খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। সিসিটিভি ক্যামেরার জন্য আইএসপি সংযোগে ১০ কোটি ও কেবল সংযোগে ১১ কোটি টাকা খরচ হবে।

 এই প্রকল্পের আওতায় আউটসোর্সিংয়ের জন্য ১ হাজার ১৩৫ জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এজন্য বেতন ভাতা বাবদ ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব রয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় ২৬৪ কোটি টাকার যানবাহন কেনা, যানবাহন নিবন্ধন ও নবায়ন ফি ১৬ কোটি টাকা, পেট্রল খরচ  ৯১ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া আলাদা করে প্রশিক্ষণে ৫২ কোটি টাকা, ওয়্যারহাউজ নির্মাণের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ৪০ কোটি টাকা, ১০টি ওয়্যারহাউজ নির্মাণে ৩৭০ কোটি টাকা, কম্পিউটার সফটওয়্যারে ২২ কোটি, আসবাব ও ওয়্যারহাউজের র‌্যাক কেনায় ৫৬ কোটি টাকা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও থার্মাল কন্ট্রোল কেনায় ১১০ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

 ইসির চলমান ইভিএম প্রকল্পের  পরিচালক (পিডি) কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশন থেকে কিছু ব্যয় কমানোর পরামর্শ দিয়েছে।

 তিনি বলেন, আমরা বিদ্যমান ইভিএম প্রকল্প বিবেচনায় নিয়ে নতুন প্রকল্পটি তৈরি করেছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এরইমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে সরকারের নিয়মনীতির পরিবর্তন হয়েছে। যেমন, রক্ষণাবেক্ষণ, জনবল খাতের খরচ। আমাদের নতুন নিয়মনীতি অনুযায়ী সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া আমরা কিছু খাতে হয়তো খরচ ধরেছিলাম, কিন্তু তা দরকার নেই। সেই ধরনের কিছু বিষয়ও আছে। আমরা এগুলো সংশোধন করে শিগগিরই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়ে দেবো।

 প্রকল্প অনুমোদনের পথে একটি বাধা কেটে গেছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, একটি বিষয় হচ্ছে এই প্রকল্পটি নতুন। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে এটি অন্তর্ভুক্ত নেই। এক্ষেত্রে প্রকল্পটি চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি পাওয়া গেছে।

 এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পরিকল্পনা কমিশন থেকে কয়েকটি ক্ষেত্রে খরচ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। তারা যেসব খাতে কাটছাঁট করতে বলেছে সেটা প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনও সমস্যা হবে না। আমরা তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ডিপিপি সংশোধন করে দু-একদিনের মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাবো। শিগগিরই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা। 

ইভিএমে ভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলের পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের মধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ইসির কাছে এখন দেড় লাখ ইভিএম আছে। এরমধ্যে অনেক আছে অকেজো। বাকি ইভিএম দিয়ে ৬০-৭০টি আসনে ভোট করা যাবে। ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণ করতে আরও ২ লাখ ইভিএম দরকার।

 অবশ্য ইসির প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সরকারের সম্মতি নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছিলেন । গত ৪ অক্টোবর সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিশ্চয়তা নেই। কারণ, এটি ডিপেন্ড করবে  সরকার এই প্রকল্প অনুমোদন করছে কিনা তার ওপর। এর আর্থিক সংশ্লিষ্টতা যেটি আছে, সেটি যদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতে যথার্থ মনে না হয়, তাহলে সরকার এই প্রজেক্ট অ্যালাউ নাও করতে পারে।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
উপজেলা নির্বাচন: ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচনজেলা আ.লীগ সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতির ছেলে, আছেন ছাত্রলীগ সম্পাদকও
প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে বিএনপি নেতা বললেন ‘রিজভী ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন’
সর্বশেষ খবর
মোদি ও রাহুলের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, ইসির নোটিশ
মোদি ও রাহুলের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ, ইসির নোটিশ
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্যকে জিআই স্বীকৃতি
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
১৮ বছরের ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন বিসমাহ মারুফ 
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের