১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধীদের বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ৫৩টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে। এবার ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী, যারা পাকিস্তানে ফেরত গিয়েছিল, তাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের একযুগ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ দাবি তোলেন।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ‘মরণোত্তর বিচার সম্ভব। ন্যায় বিচারের জন্য এটি প্রয়োজন। যারা এ ধরনের জঘন্যতম অপরাধ করেছে, যদি তারা মারাও গিয়ে থাকে, তাদের বিচার করা সম্ভব।’
বিচারে তারা যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তা হলে তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে না। কারণ, তারা মৃত। কিন্তু এটি রেকর্ডের জন্য এবং ন্যায় বিচারের জন্য দরকার বলে তিনি জানান।
সাবেক জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ ফউজুল আজিম বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ এর ৩ ধারায় ট্রাইব্যুনালকে নাগরিকতা নির্বিশেষে অভিযুক্তদের বিচারের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আইনের ১০-এ ধারায় ট্রাইব্যুনালকে অভিযুক্তদের অনুপস্থিতিতে বিচারের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কাজেই ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধপরাধীর মধ্যে যারা এখনও বেঁচে আছে, তাদের বিচার প্রক্রিয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা সমীচীন হবে।’
বীর প্রতীক ও পদ্মশ্রী লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, ‘১৯৫ জনের বিচার করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল ১৯৭২ সালে। বেশ কিছু দূর অগ্রসরও হয়েছিল সরকার। ঢাকার একটি স্থানে ক্যাম্প তৈরি করে তাদের রাখার কথা চিন্তা করা হচ্ছিল। সেখানে কাঁটা তারের বেড়াও দেওয়া হয়েছিল। সেই ক্যাম্পের কমান্ডার হিসেবে আমাকে নির্বাচন করা হয়েছিল। কারণ, আমি ভালো উর্দু জানতাম।’
সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরধীর বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আরও বড় রাজনৈতিক জোটের প্রয়োজন হবে এবং আরও মন্ত্রণালয়ের একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজন হবে।’
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের সহকারী অধ্যাপক ইমরান আজাদ বলেন, ‘১৯৭১ সালের জেনোসাইডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আনার প্রচেষ্টার পাশাপাশি পাকিস্তানে ফেরত যাওয়া যুদ্ধবন্দি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার এটাই সময়। এদের বিচার করা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং ট্রাইব্যুনাল একা এই কাজ করতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সম্মিলিত উদ্যোগের পাশাপাশি জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে নিয়মিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এতে করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ওপর চাপ তৈরি হবে— বাংলাদেশের জেনোসাইডকে স্বীকার করে নিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের কাছে ১৯৭১ সালের বর্বরতার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার জন্য। তেমনই দায়হীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার পথ আরও মসৃণ হবে বাংলাদেশের জন্য।