X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নেই কেন?

এস এম আববাস
১৫ আগস্ট ২০২৩, ২০:৪০আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৩, ২১:১২

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবন, রাষ্ট্র গঠন, শিক্ষা ভাবনাসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রচুর লেখালেখি, বই প্রকাশ ও গবেষণা হলেও ব্যাপক অর্থে কোনও অ্যাকাডেমিক গবেষণা হয়নি বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত কেউ সেই ডিগ্রি অর্জন করেছেন এমন তথ্য জানাতে পারেননি তারা।

শিক্ষাবিদরা বলছেন— যেসব গবেষণা হচ্ছে তা গতানুগতিক, অনেক ক্ষেত্রে তা পুনরাবৃত্তি (রিপিটেশন)। অথচ এমফিল বা পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে গবেষক তৈরির উদ্যোগ ও ব্যবস্থা থাকা দরকার বলেও মনে করছেন শিক্ষাবিদরা।

২০২০ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর ওপর এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বঙ্গবন্ধুর নামে ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ পিএইচডি থিসিস হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদরা। যদিও এসব ইনস্টিটিউট হওয়ায় গবেষণা শুরুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে বলে জানান তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করেছে। তবে কয়টি এমফিল বা কয়টি পিএইচডি হয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বলতে পারবে।’  তিনি বলেন, ‘দেশে অনেক গবেষণা হচ্ছে, বিদেশেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন সবকিছু সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। এমফিল বা পিএইচডির ক্ষেত্রে রাজনীতি, দর্শন, শিক্ষাভাবনা বিভিন্ন বিষয় ভাগ করে নিয়ে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য, নবীন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরার জন্য গবেষণা প্রয়োজন। গবেষণা করে সেগুলো গবেষণাগারে থাকলে হবে না, প্রকাশ করতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর যে রাজনৈতিক জীবন, তার রাজনৈতিক আদর্শ ও জীবন দর্শন তা একাধিক পিএইচডি’র দাবি রাখে। আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুকে আমরা সেভাবে আবিষ্কার করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুর জীবন যে বিশাল ক্যানভাস, এটা রচনার ক্ষেত্রে ‘পিএইচডি’ গবেষণা দরকার। পিএইচডি করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলে দেওয়ার বিষয় না, ডিপার্টমেন্ট বা সংশ্লিষ্ট যারা আগ্রহী তারা এগুলো করেনি। আমার জানা মতে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চার বা পাঁচটি গবেষণা হয়েছে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বঙ্গবন্ধু গবেষক অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ পর্যন্ত পিএইচডি ডিগ্রি হয়েছে কিনা আমার কাছে তথ্য নেই। তবে আমি জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: হিজ পলিটিক্যাল থটস অ্যান্ড আইডিয়াস’ শিরোনামে ফেলো গবেষণা করেছি, সেটি হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ করেছে, এটি পোস্ট ডক্টরাল।’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পিএইচডি অনিবার্য উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে আমার একটি গবেষণামূলক বই বেরিয়েছে, যার নাম ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং ফিফটি ইয়ারস অব বাংলাদেশ পলিটিক্স স্ট্রাগল, অ্যাচিভমেন্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’। বঙ্গবন্ধুর শাসন আমল নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. আফসার আহমেদ ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ মেয়াদের ওপরে একটি থিসিস করেছিলেন। সেটা প্রকাশিত হয়নি, যদিও সেটি ভিন্নভাবে লেখা। অনেকে অনেক বই লিখেছেন। কিন্তু সেভাবে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়নি।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘এমফিল বা পিএইচডি কে কে করেছে সে তথ্য আমার কাছে নেই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে অনেক কাজ হচ্ছে। আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধুর নামে একাধিক ইনস্টিটিউট রয়েছে, সেখানে গবেষণা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র ও সমাজ ভাবনা শিরোনামে গত দুই বছর আগে একটি বই বের করেছি। সেটিও গবেষণা গ্রন্থ। তবে শুধু বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা করে কেউ পিএইচডি ডিগ্রি করেছে বলে মনে হয় না। অন্তত আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হয়নি।’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘গবেষক একদিনে তৈরি হয় না। তাছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু চর্চা বন্ধ ছিল। এই দীর্ঘসময় যে অ্যাকাডেমিশিয়ানরা তৈরি হয়েছেন, সে পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণার সুযোগ সীমিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা দেখেছি, অনেকে গবেষণামূলক লেখালিখি করেছে এবং এখনও করছেন। বঙ্গবন্ধুর কাজের আরও দিক রয়েছে— বঙ্গবন্ধুর লেখা তিনটি বই, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়া চীন। তারপর ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট’ যেসব বেরিয়েছে, এছাড়া ৭ মার্চের ভাষণ শ্রেষ্ঠ ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির কারণে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করার মধ্যদিয়ে দেশকে কোন ধরনের নতুন অর্থনীতিতে নিতে চেয়েছিলেন, সে বিষয়ে গবেষণার দাবি রাখে। বঙ্গবন্ধুর একটি লাইন— ‘বিশ্ব আজ  দুভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত, আমি শোষিতের গণতন্ত্রের পক্ষে।’ এই জায়গায় যে পলিটিক্যাল ফিলসফি বেরিয়ে এসেছে, সেটি তিনি কী বলতে চেয়েছেন, তখনকার পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থায় এই কথা বলা সহজ ছিল না যে, আমি শোষিতের গণতন্ত্রের পক্ষে।  আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে।’

শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, অভিনেতা, নাট্যনির্দেশক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক লেখা হচ্ছে। সিরিয়াস কাজের ইনফরমেশন নেই। যার স্বপ্ন বাস্তবায়নে একটি দেশের জন্ম হলো, তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ, তাঁর সাধারণ জীবনযাপন নিয়ে যথেষ্ট গভীরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। দেশের মানুষের প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা ছিল, সেগুলো নিয়ে খুব একটা কাজ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। যেগুলো হয়েছে সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই গতানুগতিক, রিপিটিশন।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইতিহাসবিদ ড. আবুল কাসেম বলেন, ‘ডিগ্রি অর্জনের জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা সেটি তো শুধু গবেষণা নয়, প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার প্রথম ধাপ। এমফিল বা পিএইচডি তো গবেষণার হাতেখড়ি। এটার ওপর ভিত্তি করে সামনের অগ্রসর হন গবেষকরা। পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়েছে কিনা, সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সামগ্রিকভাবে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। অনেক গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে।’

‘বঙ্গবন্ধুর ওপর গবেষণা চলতে থাকবে’ উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম আরও বলেন, ‘ইতিহাসে, সমাজ-সংস্কৃতিতে বঙ্গবন্ধু এত ভাস্ট একটি আসপেক্ট যে এর গবেষণার দিক নেভারএন্ডিং। হয়তো কেউ এগিয়ে আসছে, আবার কেউ আসছে না। তবে বঙ্গবন্ধুকে জানার প্রয়োজন আছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন, সংগ্রাম, আদর্শ, ত্যাগ, কন্ট্রিবিউশন, ডিপ্লোমেসি, রাষ্ট্রনীতি ও রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি— সার্বিকভাবে জানার প্রয়োজনে গবেষণা ও লেখালেখি করার প্রয়োজন আছে।’

/এপিএইচ/এমএস/
সম্পর্কিত
শেখ রেহানাকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা
বঙ্গবন্ধু-প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস, এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা
ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য উন্মোচন
সর্বশেষ খবর
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ দল
বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়লো বাংলাদেশ দল
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু, কেজি ৪০ টাকা
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
রাজস্থানের শীর্ষ দুইয়ে থাকা কঠিন করে দিলো পাঞ্জাব
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
লন্ডনে অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান, বাঙালিপাড়ায় উৎকণ্ঠা
সর্বাধিক পঠিত
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল