সরকারি চাকরির কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলনে শুরু, তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে ৫ আগস্ট পতন হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যারা দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রে সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, নিরাপত্তা বাহিনী, আর্থিক খাতসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কমিশনগুলোকে সহায়তা করার বিষয়ে এরইমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। তারা জানতে চায় কীভাবে বাংলাদেশের সংস্কারে অবদান রাখতে পারে।
বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মাদ জসীম উদ্দিন। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক দেশ সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা করতে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে আমাদের আলোচনায় তারা আগ্রহের কথা জানিয়েছে।’
কোন কোন দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ডেনমার্ক, কানাডাসহ কয়েকটি দেশ আছে এই তালিকায়। জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থাও এ বিষয়ে আগ্রহী বলে তিনি জানান।
কোন কোন খাতে সংস্কার
গত ১১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন হয়েছে; পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান হয়েছেন সফর রাজ হোসেন; বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হয়েছেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান; দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হয়েছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান; জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হচ্ছে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
এই অক্টোবরেই কাজ শুরু করে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা রয়েছে কমিশনগুলোর। তাদের সহায়তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সরকারের মনোভাব
বিভিন্ন খাতে সংস্কার বিষয়ে সরকার স্বচ্ছ অবস্থান নিয়েছে। কমিশনগুলো স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এসব কমিশন কোনও বিদেশি সহযোগিতা চাইলে সে বিষয়ে সহায়তা করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা কমিশনগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে কাজ করবো। তারা যদি বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়, আমরা তাদের সহায়তা দেবো। তবে বিষয়টি নির্ভর করবে কমিশনগুলোর ওপর।’
তুরস্কের প্রতিনিধি দল
সেপ্টেম্বরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ হয় প্রধান উপদেষ্টার। ওই আলাপে মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য তুরস্ককে অনুরোধ করলে তারা একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে।
এ বিষয়ে তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আমানুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তুরস্কের প্রতিনিধি দল কর্মকর্তা পর্যায়ের এবং তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন জনের সঙ্গে আলোচনা করবে। এটি মূলত একটি মূল্যায়ন দল, যারা পরিস্থিতি বোঝার জন্য আসবে।’
অন্যান্য দেশ
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাও সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা করতে আগ্রহী। অন্যদিকে চীন বুঝতে চায় বাংলাদেশ কী ধরনের সংস্কার কার্যক্রম করছে। ইতালি বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে অনেকের আলোচনা হচ্ছে। আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কমিশনগুলোর চাহিদার ভিত্তিতে আমরা আমাদের পদক্ষেপ ঠিক করবো।’