একমাস আগে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন মো. জসিম উদ্দিন। বিদেশে প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে এক সপ্তাহের জন্য ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কে গুরুত্বপূর্ণ এই সফর করবেন তিনি।
ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউজ, ইউএসটিআরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে সচিবের। এছাড়া জাতিসংঘে বিভিন্ন কমিটির বৈঠক এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তিনি। বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গেও তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশই চায় এ সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং এ বিষয়ে বিভিন্নজনের সঙ্গে আমার আলোচনা হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের সফর অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর ধারবাহিকতা আমরা ধরে রাখবো।’
কী কী বিষয় নিয়ে ওয়াশিংটনে আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, রোহিঙ্গা, প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ধরনের সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে চায় এবং এ বিষয়েও ওয়াশিংটন কিছু বললে সেটি আমরা শুনবো, তিনি জানান।
উল্লেখ্য নিউ ইয়র্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে একান্ত বৈঠক হয়েছে। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টা। উভয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সব রকমের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
জাতিসংঘে বৈঠক
জাতিসংঘে বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা এবং একাধিক কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিষয়ক অফিস, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক অফিসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জাতিসংঘের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন সহযোগিতা নিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমার বৈঠক হবে।’
বাংলাদেশের বার্তা
কূটনীতিতে প্রথম যেকোনও ঘটনার গুরুত্ব অনেক বেশি। সেই অর্থে পররাষ্ট্র সচিবের প্রথম সফর ওয়াশিংটন হওয়াটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ বিষয়ে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, ‘ওয়াশিংটন সফরকে দুই ভাবে দেখা যেতে পারে। প্রথমত, প্রধান উপদেষ্টার সফল যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের সফর হওয়াটাই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, এর একটি ভূ-রাজনৈতিক বার্তা আছে। এর মাধ্যমে প্রছন্নভাবে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশকে বোঝানো ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার যে দূরত্ব ছিল, সেটি থেকে বের হয়ে এসেছে দুই দেশ। এরফলে হয়তো আঞ্চলিকভাবে কিছুটা সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশ।’
আরও পড়ুন-
বাংলাদেশের সংস্কারে সাহায্য করতে চান বিদেশিরা
ড. ইউনূসের যুক্তরাষ্ট্র সফরে টানাপড়েন কেটেছে, সুফল পাবে বাংলাদেশ