X
সোমবার, ১৩ মে ২০২৪
২৯ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ু দূষণেও যানবাহন

ওমর ফারুক
২৫ মার্চ ২০১৬, ০৯:৪৬আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৬, ১০:৩০

ঢাকার রাস্তায় নিত্য দৃশ্য
যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি রাজধানীর পরিবেশ দূষণেও অন্যতম ভূমিকা রাখছে অধিকাংশ যানবাহন। বিআরটিএ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করা হলেও বাস্তবে এগুলোর ফিটনেস নেই। সারাক্ষণ ইঞ্জিনের বিকট আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে কালো ধোয়াও নির্গমন করে চলেছে এগুলো। পরিবেশ অধিদফতরের অভিযানে নিয়মিত ধরা পড়ছে এসব যানবাহন। কিন্তু দূষণমুক্ত হচ্ছে না। পরিবহন মালিকরা এজন্য ভেজাল জ্বালানিকে দায়ী করেছেন।

পরিবেশ অধিদফতরের এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট জানিয়েছে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন লাখ যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের বিরাট একটা অংশ বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। এসব মোটরযান থেকে ক্ষতিকর বস্তুকণা (কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং ওজোন) নির্গত হয়।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, মোটরযান চলাচলের প্রধান সড়কগুলো আবাসিক এলাকা সংলগ্ন হওয়ায় এসব এলাকার লোকজন উচ্চ হারে বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছে। সবচাইতে অরক্ষিত গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে পথচারী, ফেরিওয়ালা ও দোকানদার, ট্রাফিক পুলিশ এবং গাড়ি চালকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের প্রায় সবগুলো বাস-মিনিবাস লক্কর-ঝক্কর হয়ে পড়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশাও। টেম্পো, হিউম্যান হলার বা এ ধরণের একটা গাড়ির অবস্থাও ভালো নেই। বেশ কিছু প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসও রয়েছে দূষণের তালিকায়। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলেও প্রশাসনের নাকের ডগায় এগুলো দাবড়ে বেড়াচ্ছে গোটা নগরী। এসব যানবাহন থেকে নিঃসরিত বিষাক্ত পদার্থ বাতাসের সঙ্গে মিশে ঢুকে পড়ছে মানবদেহে।

জানা গেছে, যানবাহনগুলো এভাবে পরিবেশ দূষণ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরণের কোনও জরিপ বা সমীক্ষা করা হয়নি। তবে রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর ২০০১ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত নগরীর ১৩টি পয়েন্টে বিভিন্ন যানবাহনের ওপর বিস্তারিত সমীক্ষা পরিচালনা করে এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট।

এই সমীক্ষায় ৪৬.৬৭ শতাংশ একতলা বাস, ৫৫.৪৭ শতাংশ টাটা বাস, ৬০.২০ শতাংশ মিনিবাস, ৫০ শতাংশ মাইক্রোবাস ও জিপ, ৯০ শতাংশ ম্যাক্সি ও হিউম্যান হলার, ৭১ শতাংশ পিকআপ ও মিনি কাভার্ড ভ্যান, ৫০ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান, ২৩.৯৬ শতাংশ প্রাইভেটকার, ২৯.৭৩ শতাংশ মাইক্রোবাস ও জিপ বায়ু দূষণ করছে বলে মন্তব্য করা হয়।

ফিটনেসহীন গাড়ি এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনগুলো প্রধানত তিন ধরনের জ্বালানি- ডিজেল, পেট্রোল ও সিএনজি ব্যবহার করছে। ইঞ্জিনের ডিজাইন ত্রুটি, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করা, মানসম্মত জ্বালানি ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত যাত্রী ও পণ্য বোঝাই, নিম্নমানের লুব্রিকেন্ট ব্যবহার ইত্যাদি কারণে এগুলো বায়ু দষূণ করছে।

কোনও কোনও যানবাহনের ইঞ্জিনের ডিজাইন যথার্থ হলেও জ্বালানিতে সালফারের মাত্রা বেশি থাকায় এগুলোও সুক্ষ্ম বস্তুকণার মাত্রাতিরিক্ত নিঃসরণ করে বায়ু দষূণ করছে। তারা বলেন, সুক্ষ্ম বস্তুকণা নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি স্থায়ী গতিবেগের প্রয়োজন। কিন্তু যানজটের নগরীতে এই গতিবেগ অর্জন কিছুতেই সম্ভব না।

ডিজেল নিঃসরণে যেসব দূষক পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অতি সুক্ষ্ম বস্তুকণা, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, জৈব বিষ-পলিনিউক্লিয়ার অ্যারোমেটিক্স। পেট্রোল, অকটেন ও সিএনজিচালিত যানবাহন থেকে নিঃসরিত দূষণকারী পদার্থের মধ্যে রয়েছে- আইডল কার্বন মনোক্সাইড ও আইডল হাইড্রোকার্বন। এসব বস্তুকণার কারণে মানবদেহে ক্যানসার, হৃদরোগ, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের অকার্যকারিতা ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এমনিতেই দূষণ বেড়ে যায়। বৃষ্টি হলে কমে। এই দূষণ কমানোর জন্য দেশে লেড বা সীসামুক্ত পেট্রোল আমদানি করা হচ্ছে। এতে পেট্রোল ব্যবহারকারী যানবাহনে দূষণ কমেছে। এবার সালফার কম আছে এমন ডিজেল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যে ডিজেল আমদানি হয় তাতে সালফার থাকে ২৫০০ পিপিএম। আমরা ৫০০ পিপিএমের ডিজেল আমদানির সুপারিশ করেছি। বিএসটিআই এর স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দেবে। আর আমদানির ব্যবস্থা করবে জ্বালানি মন্ত্রণালয়।

পরিবহন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের (এবিসি) সভাপতি খন্দকার রফিকুল হুদা কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকার বেশির ভাগ গাড়ি এখন সিএনজিতে চলে। এ ধরনের গাড়ি পরিবেশ দূষণ করে না। তবে ডিজেলচালিত যানবাহন পরিবেশ দূষণ করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে ডিজেল পাওয়া যায় সেটা খুবই নিম্নমানের। এ কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে বাস বিক্রি করতে সহজে রাজি হয় না। তিনি বলেন, ইঞ্জিন অয়েল ও ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় অনেক গাড়ি মালিক কম দামে নিম্নমানের জ্বালানি ব্যবহার করেন। মূলত এসব যানবাহনই বায়ু দূষণ করছে।

পরিবেশ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজধানীতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সময় যতগুলো যানবাহন পরীক্ষা করা তার বেশির ভাগই পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে ধরা পড়ছে। এজন্য মামলাও হচ্ছে। এক কর্মকর্তা বলেন, গাড়ির বায়ু দূষণ পরীক্ষার ইউনিট হল-‘হার্টরিজ স্মোক ইউনিট’ (এইচএসইউ)। ২০০৫ সালের ১৯ জুলাই জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী যেকোনও গাড়ি থেকে নিঃসরিত বায়ুর সহনীয় মাত্রা হল ৬৫ এইচএসইউ’র নিচে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আমরা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে যখন বায়ুর মান ৬৫ এইচএসইউ’র নিচে দেখি তখন সেটাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর বেশি হলে নেওয়া হয় আইনানুগ ব্যবস্থা।

ওই কর্মকর্তা জানান, মোবাইল কোর্টের অভিযান যতগুলো যানবাহন পরীক্ষা করা হয়, তার অর্ধেকের বেশিরই বায়ুর মান থাকে ৬৫ এইচএসইউ’র ওপর। কোনও গাড়ির বায়ুর মান ৯০ এইচএসইউ কিংবা আরও বেশি পাওয়া যায়। তিনি জানান, গত ২৮ জানুয়ারি বনানী এলাকায় মোবাইল কোর্ট ১৬টি ডিজেল এবং ১০টি পেট্রোল ও সিএনজিচালিত যানবাহন পরীক্ষা করে। এতে ১৩টি ডিজেল এবং ২টি সিএনজি ও পেট্রোলচালিত যানবাহনের এইচএসইউ বিপজ্জনক মাত্রায় পাওয়া যায়।

/ওএফ / এএইচ/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুম দখল নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৭
রুম দখল নিয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৭
আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন মিরাজুল ইসলাম
আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন মিরাজুল ইসলাম
সন্তানের চিকিৎসা করাতে না পেরে মায়ের আত্মহত্যার অভিযোগ
সন্তানের চিকিৎসা করাতে না পেরে মায়ের আত্মহত্যার অভিযোগ
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও  জনগণের ক্ষমতায়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত: রাষ্ট্রপতি
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও  জনগণের ক্ষমতায়ন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত: রাষ্ট্রপতি
সর্বাধিক পঠিত
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সুপারিশ আর কার্যকর নেই: শিক্ষামন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে সুপারিশ আর কার্যকর নেই: শিক্ষামন্ত্রী
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
পাস করা ছাত্রছাত্রীদের ডিপ্লোমায় ভর্তির আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর
বোন রেহানাকে নিয়ে নিক্সন চৌধুরীর বাসায় শেখ হাসিনা
বোন রেহানাকে নিয়ে নিক্সন চৌধুরীর বাসায় শেখ হাসিনা
ঈদের পর শনিবার স্কুল খোলা থাকছে না
ঈদের পর শনিবার স্কুল খোলা থাকছে না
মধ্যপ্রাচ্যে এরদোয়ানের দ্বৈত খেলা: ফিলিস্তিনের প্রশংসা করে ইসরায়েলকে সহায়তা
মধ্যপ্রাচ্যে এরদোয়ানের দ্বৈত খেলা: ফিলিস্তিনের প্রশংসা করে ইসরায়েলকে সহায়তা