X
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
বর্ষবরণে যৌন নিপীড়ন

অস্পষ্টতায় ঘিরে আছে মামলার তদন্ত

জামাল উদ্দিন
১৩ এপ্রিল ২০১৬, ২২:২৬আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০১৬, ০৭:২২

টিএসসিতে নারীর ওপর যৌন নির্যাতনকারী সন্দেহভাজনদের কয়েকজন অস্পষ্টতায় ঘিরে আছে বর্ষবরণে নারীর শ্লীলতাহানী মামলার তদন্ত। কয়েকজন অপরাধীকে শনাক্ত করে তাদের ধরিয়ে দিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে প্রত্যেকের জন্য এক লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিনেও কাউকে ধরতে না পেরে অনেকটা হতাশ হয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দীর্ঘ নয় মাস পর মো. কামাল (৩৫) নামে একজনকে গত ২৭ জানুয়ারি গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আবার মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করা হয় আদালতে। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর পুলিশ সদর দফতর থেকে নতুন করে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। কিন্তু দুর্বৃত্তদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য না থাকায় এবং ভিডিও ফুটেজ অস্পষ্ট হওয়ায় এ সংস্থাটিও হিমশিম খাচ্ছে মামলার তদন্তে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরান ঢাকার চকবাজারের বাসিন্দা মো. কামালকে (৩৫) গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও নারীর শ্লীলতাহানীর সঙ্গে জড়িত নন বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানান কামাল। কিন্তু তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তারা। তবে কামাল জড়িত কিনা সে ব্যাপারেও তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। একারণে তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছেন তদন্তকারীরা। বর্তমানে কামাল কারাগারে রয়েছেন।
গত বছরের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে হাজার হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে উচ্ছৃখল কিছু যুবক মেয়েদের শ্লীলতাহানী করেন। এ ঘটনায় পরদিন শাহবাগ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় অজ্ঞাতনামা কতিপয় যুবকের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়তে পারেন: দেশব্যাপী জমে উঠেছে বৈশাখী অর্থনীতি

পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগকে (ডিবি)। এরপর গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তে এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন এসআই দীপক কুমার দাস। দীর্ঘদিন তদন্ত করার পরও দুর্বৃত্তদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য না পেয়ে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর তিনি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। অস্পষ্টতায় ঘিরে আছে মামলার তদন্ত

আরও পড়তে পারেন:  পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবে না সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট

 

মামলাটির দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলেন, মামলা দায়েরের পর শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এ কে সাইদুল হক ভুঁইয়াকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। তিনি ব্যাখ্যাসহ ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচিপত্র তৈরি করেন। কিছু আলামত জব্দ ও মামলার বাদীসহ সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দি ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধ করেন। ভিকটিমের নাম-ঠিকানাসহ তার অবস্থানও বের করেন। আসামীদের গ্রেফতারেরও চেষ্টা করেন। সোর্স নিয়োগ করাসহ মামলাটি তিনি প্রকাশ্য ও গোপনীয়ভাবে তদন্ত করেন।

পরে মামলার মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব তার কাছে হস্তান্তর হলে তিনি মামলাটির তদন্ত পুনরায় শুরু করেন। তিনি আগের তদন্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। পেনড্রাইভের মাধ্যমে সংগ্রহ করে ভিডিও ফুটেজটি জব্দ তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত করে সাক্ষীদের স্বাক্ষর নেন।

আরও পড়তে পাপরেন: আলোচনার শীর্ষে পান্তা-ইলিশ, ভুভুজেলা ও বিকেল ৫টার বাধ্যবাধকতা

চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে গিয়ে আদালতকে দীপক কুমার দাস আরও বলেন, প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে আট-দশজন দুস্কৃতকারী মামলায় বর্নিত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে সাক্ষ্য প্রমাণ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। কিন্তু নারী লাঞ্ছনাকারী আটজনকে গ্রেফতার করতে না পারা, আসামীদের সঠিক নাম-ঠিকানা না পাওয়া এবং মামলার তদন্তের সময়সীমা নির্দিষ্ট হওয়ায় মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।

মামলাটির চলমান তদন্তের তদারকি কর্মকর্তা ও পিবিআই’র সদর দফতরের বিশেষ পুলিশ সুপার আহসান হাবিব পলাশ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ঘটনার যে ভিডিও ফুটেজ তারা পেয়েছেন সেটি স্পষ্ট নয়। সেজন্য তদন্তে কিছুটা সময় লাগছে। তবে তারা চেষ্টা করছেন দ্রুত মামলাটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করতে।

তিনি আরও জানান, মো. কামাল নামের একজনকে আটকের পর তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কামাল ঘটনাস্থলে  থাকার কথা স্বীকার করলেও নারী লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন। তবে তার কথায় তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা সকল দুস্কৃতকারীকে শনাক্ত করে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামী ১৭ এপ্রিল মামলাটির পুনঃতদন্তের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আদালতকে ব্যাখ্যা দিয়ে তারা সময় চাইবেন।

এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আদালতের সময় নষ্ট করায় সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলই থাকছে
আদালতের সময় নষ্ট করায় সেলিম প্রধানকে জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিলই থাকছে
জাবালিয়ায় ১২ ইসরায়েলি সেনাকে হত্যার দাবি হামাসের
জাবালিয়ায় ১২ ইসরায়েলি সেনাকে হত্যার দাবি হামাসের
‘জমি নিয়ে বিরোধে’ ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে বড় ভাইকে হত্যার অভিযোগ
‘জমি নিয়ে বিরোধে’ ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে বড় ভাইকে হত্যার অভিযোগ
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
সর্বাধিক পঠিত
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
রাজধানীর ফিটনেসবিহীন গাড়ি স্ক্র্যাপ করার সিদ্ধান্ত
রণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
উদ্বিগ্ন হোয়াইট হাউজরণক্ষেত্রে রুশ অগ্রগতি পাল্টে দিতে পারে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ
শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ