X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

স্যালুট সেইসব মায়েদের

উদিসা ইসলাম
০৮ মে ২০১৬, ১১:৫৯আপডেট : ০৮ মে ২০১৬, ১১:৫৯

সন্তানদের সাহসী হয়ে বেড়ে ওঠা

নিজের জীবনের চড়াই উৎড়াই সত্ত্বেও সন্তানদের আগলে রেখে কেবল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে জীবন সংগ্রামে জড়িত সব মায়েদের স্যালুট। আজ ৮ মে,বিশ্ব মা দিবস। শহীদ সন্তানদের মায়েরা যেমন দেশের জন্য সন্তানকে বিসর্জন দিয়েছেন ঠিক তেমনই সমাজের তীর্যক দৃষ্টি সহ্য করে আজকের সিঙ্গেল মায়েরা সন্তানদের সামনে মেলে ধরেছেন বিশ্ব। তারা বলছেন, আমার সন্তানকে আমি সবচেয়ে ভাল মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু সমাজ আমার কাছে পরীক্ষা চায় সবসময়,আমাদের আপত্তি সেখানেই।

শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। তার ছেলে টগবগে যুবক রুমী কয়েকদিনের মাঝেই বিদেশে যাওয়ার সব প্রস্তুতি থাকলেও যেতে চাইল যুদ্ধে। একদিকে মায়ের বাধ্য ছেলে মায়ের বিনানুমতিতে যুদ্ধে যাবে না,আরেকদিকে সেই স্নেহময়ী মা। একসময় মা বললেন ‘যা, তোকে দেশের জন্যে কোরবানি করলাম’!!! শহীদ হন রুমী।

আরও পড়ুন: পোশাক শ্রমিক মা

আরেক শহীদ আজাদের মা। একমাত্র ছেলে আজাদকে পড়াশোনা করালেন নিজ শ্রমে, নিজ সঞ্চয় থেকে ব্যয় করে। ছেলে যখন লেখাপড়া প্রায় শেষ করে ফেলেছে,মায়ের সুখের দিন ফিরিয়ে আনার যখন সময় হয়েছে তখনই আজাদ মায়ের অনুমতি নিয়েই যুদ্ধে গেলো। এক পর্যায়ে ঘৃণ্য রাজাকারদের যোগসাজশে পাক সেনারা মায়ের চোখের সামনে দিয়ে ধরে নিয়ে গেলো তাকে। একদিন ছেলের খোঁজও পেলেন। মা থানায় ছুঁটে যান। তাকে বলা হয় তার ছেলে যদি সব মুক্তিযোদ্ধার নাম-ধাম বলে দেয় তবেই সে মুক্তি পাবে। ছেলে জিজ্ঞেস করেছিল ‘মা আমি কি করবো? বলে দেবো সব? তা হলেই নাকি ছেড়ে দিবে। মা বলেছিলেন ‘শক্ত হয়ে থাক বাবা, কিচ্ছু বলবি না’। আজাদ বলেছিলেন ‘মা, ভাত খেতে ইচ্ছে করে,এরপরে এলে ভাত নিয়ে এসো। কষ্ট করে ভাত জোগাড় করে পরের দিন জেলগেটে গিয়ে আর আজাদের দেখা পাননি মা। ছেলে তার ভাত খেতে পারেনি। তিনিও আর ভাত খাননি।

১৯৫৮ সালে স্বামী শরীফ এবং দুই পুত্র রুমী-জামীসহ জাহানারা ইমাম

মা দিবস সেইসব মায়েদের কথাই বলে,মা দিবস সব মায়েদের কথা বলে। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়,মা দিবসের শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে। সেখানে প্রতি বসন্তে দেবতাদের মা ‘রিয়া’র উদ্দেশে বিশেষ একটি দিন উদযাপন করা হতো। যুক্তরাষ্ট্রে এই দিবসটি প্রচলিত হয় শান্তিকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ড হোর হাত দিয়ে ১৮৭২ সালে। তিনি যুদ্ধের বিরুদ্ধে নারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হন। তবে দিবসটিকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করতে বড় ভূমিকা রাখেন সে দেশেরই অ্যানা জার্ভিস। ১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রথম মা দিবস পালিত হয়। আর ১৯১৪ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন।

আরও পড়ুন: যেভাবেই হোক একটা পরিচয় মা’দের দাঁড় করাতে হবে

মা দিবস যখন পালন হচ্ছে রাষ্ট্রীয়ভাবে তখনও এদেশে সিঙ্গেল মায়েদের পড়তে হয় নানা সামজিক সমস্যায়। সন্তানকে বড় করা নিয়ে আমাদের সমাজে এখনও ভেসে বেড়ায় নানা তীর‌্যক মন্তব্য। যেকোন কারণেই স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ হলে সন্তান মায়ের কাছে ঠিকভাবে মানুষ হচ্ছে কিনা, মা তাকে সময় না দিয়ে অন্য কোথাও বেশি সময় দিচ্ছে কিনা সেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় মাকে। কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী মা তার সন্তানকে ভাল রাখতে যে লড়াই লড়ছেন তা যায় পিছিয়ে।

শহীদ মাতা ননী বেওয়া

একা দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করার অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে উইমেন চ্যাপ্টারের সম্পাদক সুপ্রীতি ধর বলেন, আমার দুই বাচ্চা, তাদের মা আমি, মা হিসেবে তাদের লালান পালন করতে হবে এটুকুই জেনেছিলাম। জেনেছিলাম এটা এখন থেকে আমার দায়িত্ব। শুরু থেকে লড়াইয়ের বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, সমাজের তীর‌্যক দৃষ্টি, প্রতিকূলতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে, কখনও কখনও পরিবারের ভেতরেও। অনেক রকম মন্তব্য, গল্প তৈরি হতো বুঝতাম,কিন্তু আমি কেবল জানতাম আমাকে পথ চলতে হবে। আজ যখন সন্তানেরা বড় হয়েছে তখন বুঝতে পারি তারা এখন সব বোঝে,কিন্তু একসময় সবখানে সততার প্রমাণ দিয়ে চলতে হয়েছে। যে নারীরা সন্তান থাকার পরও বিচ্ছেদের মতো ঘটনার শিকার হচ্ছেন বা নিজে থেকে বিচ্ছেদ নিচ্ছেন তাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়া ভীষণ জরুরি, তা আমি আমার নিজের জীবন দিয়ে বুঝি।

সুপ্রীতি ধর

নারীনেত্রী আয়শা খানম বলেন, আমাদের সমাজে এখন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়েছে। এই এগিয়ে যাওয়া তাকে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে চুপ থাকতে বাধ্য করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে সন্তানকে নিজের কাছে রেখে কীভাবে মানুষ করবেন সেই সিদ্ধান্তটা অনেক মা এখন নিতে পারছেন,এটা ইতিবাচক। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়াটি সমাজ এখনও স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। ফলে সন্তানের বাবা তার সঙ্গে থাকে না এটা কেউ এমনি জানলে জানুক, নারী সহজে সেটা সাবলীলভাবে বলতে পারে না। সে সামাজিকভাবে অনিরাপদ বোধ করে।

 /এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
৩৫তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবজন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
খিলগাঁওয়ে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ