X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্ররোচনা ব্যক্তিকে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে!

উদিসা ইসলাম
২৫ মে ২০১৬, ১৪:৪৫আপডেট : ২৫ মে ২০১৬, ২৩:২২

আত্মহত্যার প্রতীকী ছবি

আত্মহত্যাকে পারিবারিক ইচ্ছায় ‘অপমৃত্যু’ হিসেবে নথিভুক্ত করায় পার পেয়ে যান প্ররোচনাকারীরা। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্ররোচনা ব্যক্তিকে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে বলে মনে করেন মনোচিকিৎসকরা। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দানকারীর অপরাধ প্রমাণিত হলে ১০ বছর পর্যন্ত শাস্তির বিধান আছে। পুলিশ বলছে, প্রমাণ রেখে কেউ আত্মহত্যা করে না এবং পরবর্তীতে পরিবারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট মামলা করতে না চাওয়ায় অপমৃত্যু হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আর মানসিক চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিটা আত্মহত্যার পেছনে কোনও না কোনও প্ররোচনা রয়েছে, যার বিচার হওয়া জরুরি। এবং আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

আত্মহত্যাকে অপমৃত্যু হিসেবে নথিভুক্ত করা প্রসঙ্গে আইনজীবীরা বলছেন, আইনে প্ররোচনার বিষয়টি সুস্পষ্ট আছে, কিন্তু তারপরও অপমৃত্যু হিসেবে নথিভুক্ত নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে যেকোনও আত্মহত্যা পুলিশ নিজের মতো করে তদন্ত করতে পারে, সেখানে কোনও বাধা নেই।

২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৭০টি সদস্যরাষ্ট্রের ওপর পরিচালিত গবেষণা ‘প্রিভেন্টিং সুইসাইড: এ গ্লোবাল ইমপারেটিভ’ থেকে জানা যায়, আত্মহত্যায় গোটা বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভারত, বাংলাদেশের অবস্থান দশম। আর গত একবছরে একের পর রহস্যজনক আত্মহত্যার কারণ জানা যায় না। কারণ ঘটনার পরে সেটাকে অপমৃত্যু নথিভুক্ত করে পরিবার আর এগুতে চায় না।

মঙ্গলবার আত্মহত্যার আগে প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনককে দায়ী করে এবং তার ছোট ভাই প্রত্যয়ের নাম উল্লেখ করে একটি ভিডিও আপলোড করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মডেল সাবিরা হোসেন। সাবিরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এর আগে গলায় ও পেটে ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সেই ভিডিও ক্লিপটিও তিনি নিজেই ফেসবুকে আপলোড করেছেন। এরপরই তিনি সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় সাবিরার মা নির্ঝর ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার পর নির্ঝরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু এধরনের ঘটনা কালেভদ্রে হয় বলে মন্তব্য আইনজীবীদের।

আরও পড়ুন: প্ররোচনা ব্যক্তিকে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে!  ঘোষণা দিয়ে মডেলের আত্মহত্যা, একজন গ্রেফতার

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) -এর ৯ক ধারায় নারীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনও নারীর সম্মতি ছাড়া বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনও ব্যক্তির ইচ্ছাকৃত কোনও কার্য দ্বারা সম্ভ্রমহানি হওয়ার প্রত্যক্ষ কারণে আত্মহত্যা করলে, ওই নারীকে অনুরূপ কার্য দ্বারা আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা দেওয়া হয়েছে বলা হবে। এ আইনেও ১০ বছর শাস্তির বিধান করা হয়েছে।

মানবাধিকার নেত্রী ও আইনজীবী এলিনা খান মনে করেন, আত্মহত্যার প্ররোচনার শাস্তি না হওয়ায়, যারা এসব ঘটনায় জড়িত থাকেন তাদের মধ্যে এক ধরনের বেপরোয়া ভাব থাকে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আত্মহত্যার যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, এতে স্বামীর বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এ ধারায় আনা যায় না। এখানেও আত্মহত্যার প্ররোচনার সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়। আইনে প্ররোচনার বিষয়টি সুস্পষ্ট নয় বলেই আসামিরা সহজেই অব্যাহতি পেয়ে যান। তিনি বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনও যুগোপযোগী করতে হবে।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আমাদের এখানে সামাজিকভাবে বিষয়গুলো শক্তভাবে মোকাবেলা করার নজির নেই। একটা সম্পর্কের টানাপোড়েনে আত্মহত্যা করতে হবে কেন, সেটা নিয়ে সামাজিক আন্দোলন হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, অপমৃত্যু হিসেবে নথিভুক্ত করলেও পুলিশ তার নিজের মতো করে তদন্ত করতে পারে। তদন্ত শুরু হতে বাধানিষেধ নেই। কিন্তু সামাজিকভাবে দ্বিগুন হেয় হওয়ার ভয়ে পরিবারের পক্ষ থেকেই পুলিশকে অনেক সময় বিরত করা হয়। তবে প্ররোচনার মাধ্যমে আত্মহত্যায় বাধ্য করার যদি বিচার হতো, তাহলে পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারতো। 

মনোচিকিৎসক মোহাম্মদ আসিফ বলেন, মানসিকভাবে হেয় হতে হতে যখন জীবনের মানে খুঁজে পান না বলে মনে করেন, তখনই তিনি জীবনবিমুখ হয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিকে ঠেলে দেওয়া হয় বেশিরভাগ সময়। যারা ঠেলে দিচ্ছেন বা কোনও পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাকে এমন জায়গায় যেতে হলো, তার দায় দায়ীদের নিতে হবে। শিশু বয়সে বাবা মাকে বিচ্ছিন্ন হতে দেখে যে সন্তান এবং পরবর্তীতে হেলাফেলায় বেড়ে ওঠেন তিনি, বেড়ে ওঠা যত সম্পদের ভেতর দিয়েই হোক না কেন, সুস্থ স্বাভাবিক মনন নিয়ে বেড়ে ওঠেন না। এবং তার যে বাবা মা তাকে এ পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছেন এবং যে সমাজ পরবর্তীতে তার দিকে তীর্যক দৃষ্টি দিয়েছে অনবরত, সবার দায় আছে। আর বিবাহিত নারীর শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের কারণে আত্মহত্যার ঘটনাতো অহরহ ঘটছে এবং এর পেছনের কারণ জানার পরও মেয়ের বাবা মা যদি সতর্ক না হন, তাহলে ওই মেয়ের মৃত্যুর জন্য দুই পরিবারই দায়ী থাকবে। সামাজিক বন্ধনকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনারও আহ্বান জানান মোহাম্মদ আসিফ।

আরও পড়ুন: প্ররোচনা ব্যক্তিকে আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে!  শিমুল বিশ্বাসসহ বিএনপির ২৭ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের নির্দেশ

/এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
মানুষকে স্বস্তি দিতে বিনামূল্যে শরবত খাওয়াচ্ছে ছাত্রলীগ
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারের’ কার্যক্রমের তদন্ত চায় মানবাধিকার কমিশন
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
বুন্দেসলিগায় গোলের রেকর্ডে চোখ কেইনের
শ্রমিকরাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখে: স্পিকার
শ্রমিকরাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখে: স্পিকার
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে