X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২
গুলশান হামলা

জঙ্গিদের লাশ নিতে যায়নি কেউ

জামাল উদ্দিন
০৫ জুলাই ২০১৬, ১৬:৫৫আপডেট : ০৬ জুলাই ২০১৬, ০৮:৪২


ঘটনার চারদিন পার হলেও সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির লাশ নিতে যোগাযোগ করেননি তাদের স্বজনরা। শনিবার বিকাল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মরচুয়ারিতে এই পাঁচটি লাশ রাখা হয়েছে।

যৗথ বাহিনীর অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি

অভিযানে নিহত যে পাঁচ জনের লাশ সিএমএইচ মর্গে রয়েছে তারা হলো, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, স্কলাসটিকার সাবেক ছাত্র মীর সামিহ মোবাশ্বের, মালয়েশিয়ার মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিবরাস ইসলাম, বগুড়ার বিগিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র খায়রুল ইসলাম পায়েল, বগুড়ার সরকারি আযিযুল হক কলেজের ছাত্র শফিকুল ইসলাম উজ্জল।

এ ছাড়া হলি আর্টিজানের কর্মচারি বলে পরিচিত সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশও সিএমএইচে রয়েছে। তার স্বজনরা দাবি করেছেন তিনি জঙ্গি নন,ওই রেস্টুরেন্টের শেফ। তার বাড়ি শরিয়তপুরে।সাইফুল ছাড়া নিহত অন্য পাঁচজনের ছবি আইএস-এর বাংলা ওয়েব সাইট আত তামকিনেও প্রকাশ করা হয়েছে। 

শনিবার সকালে গুলশানের হলি আর্টিযান রেস্টুরেন্টে অভিযানের সময় যৌথবাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় পাঁচ জঙ্গি। দুপুরের পর তাদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সিএমএইচ-এ নিয়ে যাওয়া হয়। নিহত প্রত্যেক জঙ্গির বিস্তারিত নাম ও পরিচয় পাওয়া গেলেও তাদের কোনও স্বজন লাশ নিতে সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ কিংবা পুলিশের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি।

অন্যদিকে, জঙ্গি হামলায় নিহত তিন বাংলাদেশির লাশ রবিবার সকালে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন ফারাজ হোসেন, ইশরাত আখন্দ ও অবিন্তা কবীর। তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে। এছাড়া ১৭ বিদেশির লাশও একইদিনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাদের পরিবার ও নিজ নিজ দেশের দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের মধ্যে ইতালির ৯ জন, জাপানের ৭ জন ও ভারতের একজনের লাশ রয়েছে।

পাঁচ জঙ্গির লাশের বিষয়ে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শাল জানান, তাদের লাশ সিএমএইচ-এ রাখা হয়েছে। লাশগুলো মূলত পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আমরা কেবল রাখার সুযোগ করে দিয়েছি। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে। পুলিশের সিদ্ধান্ত পেলেই তারা লাশ হস্তান্তর করবেন।

গুলশান থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সালাহ উদ্দিন জানান, সিএমএইচ-এর মরচুয়ারিতে রাখা পাঁচ জঙ্গির লাশের কোনও স্বজনই এখনও পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কেউ যোগাযোগ না করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জঙ্গি খায়রুলের বাবা আবুল হোসেন ও মা পিয়ারা বেগমকে বগুড়া গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে উজ্জলের বাবা বদিউজ্জামান ও ভাই আসাদুল ইসলামকে বগুড়ায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার ধুনট থানার ওসি মিজানুর রহমান। এই দুই জঙ্গির পরিবারই হতদরিদ্র। কৃষি কাজ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে। খায়রুল ও উজ্জলের লাশ শনাক্তসহ তাদের বিষয়ে আর কোনও তথ্য আছে কিনা সেটা জানতেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

খায়রুলের স্বজনরা জানতেন, বগুড়ার ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর খায়রুল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। কিন্তু ঢাকায় এসে খায়রুল সেখানে ভর্তি না হয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। গত ছয়মাস যাবত তার সঙ্গে স্বজনদের কোনও যোগাযোগ হয়নি বলেও জানান স্বজনরা। আর উজ্জলের স্বজনরাও জানান, প্রায় ছয় মাস আগে ধুনটের বাড়ি থেকে তাবলিগের চিল্লায় যাচ্ছে বলে উজ্জল বেরিয়ে যায়। সে বগুড়ার আযিযুল হক ডিগ্রি কলেজের মাস্টার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে এক বছর আগে ঢাকায় আসে।

এদিকে, বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জঙ্গি মীর সামিহ মোবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবীর এ হামলার সঙ্গে তার ছেলের জড়িত থাকার বিষয়ে সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেন, রবিবার পুলিশ তাকে ফোন করে জানায়, সিএমএইচ-এ গিয়ে লাশ শনাক্ত করতে। কিন্তু সেখানে যাওয়াটা ছিলো খুবই কষ্টের।

গুলশানের হলি আর্টিযান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সোমবার রাতে গুলশান থানায় একটি মামলা হয়েছে। রাত ১১টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ মামলা (নং-১ (৪/৭/২০১৬) করা হয়। এতে নিহত পাঁচ হামলাকারীসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

এরমধ্যে মামলাটির তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটি)।ওই রেস্টুরেন্ট থেকে উদ্ধার পাওয়া মোট ৩১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা। এখনও তিনজন তাদের হেফাজতে রয়েছেন। ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআইসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরাও।

গত শুক্রবার রাতে গুলশান-২ এর ৭৯ নাম্বার সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। এতে ২ পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশি নাগরিক ও তিন বাংলাদেশি নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয় বলে শনিবার সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। অভিযানে জীবিত উদ্ধার করা হয় তিন বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জিম্মিকে। এছাড়া  এক জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব ছিল। নিহত সাত জাপানির মধ্যে ছয়জনই মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

জেইউ/এপিএইচ

আরও পড়ুন:

‘ও আমার ছেলে হতে পারে না’

দেশে ফিরলো ৭ জাপানির নিথর দেহ

নিহতদের লাশ নিতে ঢাকায় ইতালির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘জনগণের মতামত ছাড়া করিডোর-বন্দর চুক্তির সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না’
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির প্রতিবাদ‘জনগণের মতামত ছাড়া করিডোর-বন্দর চুক্তির সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না’
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ, ছাত্রদল-যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আটক
আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখল করলেন বিএন‌পি নেতারা
আওয়ামী লীগ কার্যালয় দখল করলেন বিএন‌পি নেতারা
ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, উন্নয়নে বরাদ্দ ৪ বছরে সর্বনিম্ন
ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, উন্নয়নে বরাদ্দ ৪ বছরে সর্বনিম্ন
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
এবার শাহবাগে অবস্থান নিলেন আহত জুলাই যোদ্ধারা
এবার শাহবাগে অবস্থান নিলেন আহত জুলাই যোদ্ধারা