মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলকে তওবা পড়ানো হয়েছে। কারাগারের পেশ ইমাম হেলাল উদ্দিনের সহকারী হাফেজ মওলানা আবু নোমান তাদের তওবা পড়িয়েছেন। সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এই দুই আসামির ফাঁসি আজ রাতেই কাশিমপুর কারাগারে কার্যকর করা হবে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে, রাত ৮টার দিকে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কারাগারে পৌঁছান।
রাত সাড়ে ৯টার পরপরই কারাগারে প্রবেশ করেছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম আলম, সিভিল সার্জন আলী হায়দার খান ও পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
এর আগে, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সব প্রস্তুতি শেষ করে মুফতি হান্নান ও বিপুলের ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় আছি।’
মুফতি হান্নানের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করতে বুধবার সকাল ৭টার দিকে কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছান তার পরিবারের চার সদস্য। এরা হলেন মুফতি হান্নানের ভাই আলিমুজ্জামান মুন্সী, স্ত্রী জাকিয়া পারভীন রুমা ও দুই মেয়ে। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার আগ্রহ দেখিয়েছে মুফতি হান্নান। তবে মুফতি হান্নানের সহযোগী বিপুলের পরিবারের কোনও সদস্য তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি।
উল্লেখ্য, সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার প্রাঙ্গণে ২০০৪ সালের ২১ মে বাংলাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপরে গ্রেনেড হামলা করে হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা।এ ঘটনায় আনোয়ার চৌধুরীসহ ৭৬ জন আহত হন। ঘটনাস্থলেই পুলিশের এএসআই কামাল উদ্দিন নিহত হন। পরে পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আহমেদ ও হাবিল মিয়া নামে আরেক ব্যক্তি হাসপাতালে মারা যান।
পুলিশ ওইদিনই সিলেট কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ২০০৭ সালের ৭ জুন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, তার ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ ওরফে অভি, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
যথাযথ ঠিকানা না থাকায় মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ ওরফে খাজার নাম প্রথমে বাদ দেওয়া হলেও, পরে তাকে যুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
মামলায় ৫৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সামীম মো. আফজাল রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন হান্নান ও বিপুল। আর দেলোয়ারের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রায়েও ওই তিন আসামির সর্বোচ্চ সাজার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ওই তিন জঙ্গির আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের (মুত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন) শুনানি শেষে চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি রায় দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ। তাতে আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। ফলে মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুজনের যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল থাকে।
এরপর রায় পুনর্বিবেচনার আপিলও খারিজ হয়ে গেলে গত ২১ মার্চ তাদের মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানো হয়। সবশেষে ছিল কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা। সেটিও ১০ এপ্রিল প্রত্যাখ্যাত হলে মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কোনও বাধা নেই।
আরও পড়ুন-
মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে মুফতি হান্নান
‘জঙ্গি রিপনের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুত ১০ জল্লাদ’
যেকোনও সময় মুফতি হান্নানের ফাঁসি: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
মুফতি হান্নানের গ্রামের বাড়িতে দাফনের প্রস্তুতি সম্পন্ন
/টিআর/টিএন/এপিএইচ/