X
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিজয় নিশান উড়ছে

উদিসা ইসলাম
১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:০১আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭, ০০:০১

জাতীয় পতাকা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করার মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জিত হয় বাংলাদেশের। লাল-সবুজে খচিত হয় ইতিহাস। যেসব সাহসী কীর্তিমান মানুষের আত্মত্যাগে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধশেষে এই বিজয়, আজকের দিনে তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। আমাদের স্বাধীনতার বয়স এখন ৪৭ বছর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনের বিকালে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনী।বিশ্বের মানচিত্রে সেদিন থেকে নতুন রাষ্ট্র- বাংলাদেশ।

দিবসটি পালন শুরু হবে তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। মহান বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এদিন সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে জনতার ঢল। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসের উৎসবে। সরকারি ছুটির দিনে মানুষ উদযাপন করবে জন্মের শুভক্ষণ, একইসঙ্গে স্মরণ করবে যাদের হারাতে হয়েছে, যাদের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা, সেই মানুষদের।

বিজয়ের এই ৪৬ বছরে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনও সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৭৫ সেরকমই একটি বছর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশে সামরিক শাসন জারি হয়। আর এরপর বদলে যেতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। জাতি পিছিয়ে যেতে শুরু করে রোজ। ইতিহাসের পাতায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়া, দুর্নীতি থেকে মুক্তির লড়াইয়ের পাশাপাশি একইভাবে চলেছে সামরিক শাসন। বন্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলা, বন্ধ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চর্চা।

বারবার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা চর্চায় অভ্যস্ত বাংলার মানুষ সামরিক শাসন থেকে বেরিয়ে ১৯৯৬ সালে আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ব্যবস্থায় প্রবেশের সুযোগ পেলে, শুরু হয় দীর্ঘদিনের অবরুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধকে নতুন করে পাঠ। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধের বিচার, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ আন্দোলন মানুষকে নতুন জায়গায় দাঁড় করায়।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সরকার একাত্তরের জঘন্য হত্যাযজ্ঞকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে বিচারের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর একে একে ফাঁসি কার্যকর হয় জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলীর। কারা অন্তরীণ অবস্থায় মারা যায় ইতিহাসের জঘন্য যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আজম।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী পলাতক থাকায় পুরোপুরি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি, মনস্তাত্ত্বিক বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চৌধুরী মঈনউদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান, খোকন রাজাকার, বাচ্চু রাজাকারসহ বেশকিছু রাজাকারকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে যে উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল, তা কোন অবস্থায় রয়েছে আমরা জানি না। আমাদের কাজের অংশটুকু আমরা করেছি।’

বীরাঙ্গনাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে না পারার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আদালত বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন বীরাঙ্গনাদের বিষয়ে। সেগুলোর বিষয়ে কোনও উদ্যেগ দেখা যায় না।’

বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা কোনও সময়ের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা ঠিক হবে না উল্লেখ করে তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আমরা বুদ্ধিজীবী নিধনকে সময়ের ফ্রেমে বেঁধে ফেলেছি। ভুলে গেলে চলবে না বুদ্ধিজীবীরা টার্গেট হয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকেই। এটি অনেক ব্যাপক। সারাবছর ধরে এই নিধনযজ্ঞ চলেছে।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ হাসান ইমাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ১৯৭৫ সালের পর যে সামরিক শাসনে পড়েছিলাম সেখানে মুক্তচিন্তা নিষিদ্ধ ছিল। নব্বইয়ের দশকে এসে আবারও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে চর্চার সরকারি অনুমতি মিলেছে যখন, ততক্ষণে একটি প্রজন্ম ইতিহাসচ্যুত হয়ে গেছে।এই বন্ধুর পথপরিক্রমায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু শত বাধার মধ্যেও বারবারই আমরা বিজয়ী হয়েছি।’

 

/ইউআই/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লাহোরে মিচেলের বদলি হয়ে রোমাঞ্চিত সাকিব
লাহোরে মিচেলের বদলি হয়ে রোমাঞ্চিত সাকিব
কুয়েটে অচলাবস্থা: আবারও অবস্থানে শিক্ষার্থীরা, দাবিতে অনড় শিক্ষকরা
কুয়েটে অচলাবস্থা: আবারও অবস্থানে শিক্ষার্থীরা, দাবিতে অনড় শিক্ষকরা
‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসতে হবে’
১২ দলীয় জোটের যৌথ বিবৃতি‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসতে হবে’
এবার মধ্যপ্রাচ্যে ‘বরবাদ’
এবার মধ্যপ্রাচ্যে ‘বরবাদ’
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক করে জরুরি নির্দেশনা মাউশির
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক করে জরুরি নির্দেশনা মাউশির
পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
উদীচীর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের অনুষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, আহত ৭
উদীচীর জাতীয় সংগীত পরিবেশনের অনুষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, আহত ৭
সেলিব্রিটি লিগে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গির বিষয়ে ৬ অভিনেত্রী-মডেলকে আইনি নোটিশ
সেলিব্রিটি লিগে পোশাক ও অঙ্গভঙ্গির বিষয়ে ৬ অভিনেত্রী-মডেলকে আইনি নোটিশ
সাতক্ষীরার হিমসাগর আমে বাজার সয়লাব, কেজি ৪৫ টাকা
সাতক্ষীরার হিমসাগর আমে বাজার সয়লাব, কেজি ৪৫ টাকা