X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২

যে কারণে যা খুশি করার সুযোগ পায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলো

জাকিয়া আহমেদ
১৩ নভেম্বর ২০২০, ১১:০০আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৫৭

মাইন্ড এইড নিরাময় কেন্দ্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে রাজধানীর আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিংয়ের ২ নম্বর সড়কের ২৮১ নম্বর বাড়িটিতে চলছিল মাইন্ড এইড মানসিক ও মাদকাসক্তি নিরাময় হাসপাতালটির কার্যক্রম। পরে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো নাম রাখে মাইন্ড এইড ও মাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউট। কেবল একটি লাইসেন্স ও বিশেষ কোনও কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি না থাকার সুবাদেই যেন স্বেচ্ছাচারী আচরণের সুযোগ পেয়েছিল ওরা।
দেশের সব হাসপাতালই চলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নীতিমালা অনুযায়ী। কিন্তু সেখানে যদি মাদকাসক্ত থাকে তবে সেটা চালাতে হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নীতিমালা অনুযায়ী। অর্থাৎ সারাদেশে যেসব বেসরকারি মানসিক রোগের হাসপাতাল রয়েছে, তাদের ছাতা হিসেবে কাজ করে দুই অধিদফতরের দুই নীতি। এমন দ্বৈতনীতির কারণে থাকে না একক নজরদারি। আর এটাকেই স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ হিসেবে নেয় মাইন্ড এইডের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত ৯ নভেম্বর মাইন্ড এইড ও মাইন্ড কেয়ার ইনস্টিটিউটে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের নির্যাতনে মারা যান পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম শিপন। এরপরই আলোচনার কেন্দ্রে আসে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশ্ন ওঠে, কী করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান মাদক নিরাময় হাসপাতাল হিসেবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল?

বৃহস্পতিবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ‘মাইন্ড এইড মানসিক ও মাদকাসক্তি নিরাময় হাসপাতাল’-এর লাইসেন্স বাতিল করেছে। এ ঘটনায় আদাবর থানায় মামলাও হয়েছে। হাসপাতালের মালিকসহ ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে ১১ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রের নামে গড়ে উঠেছে নির্যাতন সেল। এসব কেন্দ্রে থাকে না প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। নেই কোনও মনোরোগ বিশেষজ্ঞও। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান চালানো হয় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। কিন্তু ঢালাওভাবে কার্যকর কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। লাইসেন্স প্রদান ও নজরদারির ক্ষেত্রে কড়া কোনও কর্তৃপক্ষ নেই বলেই চিকিৎসার নামে নির্যাতন বাণিজ্য চালানোর সুযোগ পায় এরা।

জাতীয় মানসিক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালের কার্যক্রম তদারকির মতো বিশেষজ্ঞ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নেই। যে কারণে এ ধরনের কেন্দ্রগুলো স্বেচ্ছাচারী হয়। এদের বেশিরভাগেরই কেবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লাইসেন্স আছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া লাইসেন্স নেই।’

‘এ ধরনের নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। আর এদের লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ হবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাহলেই কেবল এগুলোর মানোন্নয়ন সম্ভব’—যোগ করলেন ডা. হেলাল আহমেদ।

ডা. হেলাল আরও বলেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো অবসরপ্রাপ্ত মাদকাসক্তদের (রিকভারি অ্যাডিক্ট) দিয়ে নিরাময় কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এ চর্চাও বন্ধ করতে হবে। রিকভারি অ্যাডিক্টরা বলে থাকে, তারা চিকিৎসকদের চেয়েও নাকি ভালো কাজ করে। তারা বলে বেড়ায়, তারা জানে কীভাবে মাদক ছাড়াতে হয়। ওই রিকভারি অ্যাডিক্টরাই এ ধরনের সেবাকেন্দ্র খুলে বসছে, আর যা-তা কাজ করছে।’

এসব কেন্দ্র বন্ধ করতে সরকারি মানসিক হাসপাতাল এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোর মানসিক রোগ বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়াতে হবে মন্তব্য করে ডা. হেলাল আহমেদ বলেন, ‘হয়তো নোংরা পরিবেশে আমরা চিকিৎসা দেই, হয়তো বাথরুমটা পরিষ্কার নয়। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নেই যে রোগীকে নির্যাতন করা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোকে ক্ষমতায়িত করতে হবে। সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।’

ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেইন মোহাম্মদ মইনুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদকাসক্তি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কিন্তু অন্য চিকিৎসাও দিতে হয় রোগীকে। আর তার জন্য অনেক শর্ত পূরণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে লাইসেন্স পেতে হয়। কিন্তু এসব বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স না নিয়ে কেবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে লাইসেন্স দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে।’

এরইমধ্যে দেশের অবৈধ মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর তালিকা চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আগামী রবিবারের মধ্যে তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তারপর সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাইন্ড এইড নামের প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু অনেক শর্ত পূরণ না করায় ওদের আমরা লাইসেন্স দেইনি।’

উল্লেখ্য, মাদকসক্তিকে মানসিক রোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ফলে, মানসিক স্বাস্থ্য এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত। কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাদের লাইসেন্স দেবে, তারাই মনিটরিং এবং সুপারভিশন করবে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে হিন্দু নারীর মামলা
মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে হিন্দু নারীর মামলা
বাদ পড়ছেন চুন্নু, জাপার মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনছেন জিএম কাদের
বাদ পড়ছেন চুন্নু, জাপার মহাসচিব পদে পরিবর্তন আনছেন জিএম কাদের
চালু হচ্ছে নতুন নকশার ই-রিকশা, পর্যায়ক্রমে সরবে পুরনোগুলো
চালু হচ্ছে নতুন নকশার ই-রিকশা, পর্যায়ক্রমে সরবে পুরনোগুলো
ইরানে প্রয়োজনে আবারও হামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
ইরানে প্রয়োজনে আবারও হামলার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
সর্বাধিক পঠিত
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
বিমানে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি এয়ারক্র্যাফট, যাচ্ছেও ২টি
বিমানে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি এয়ারক্র্যাফট, যাচ্ছেও ২টি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আবারও টানা ৩ দিনের ছুটি
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আবারও টানা ৩ দিনের ছুটি
মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে হিন্দু নারীর মামলা
মুরাদনগরে ধর্ষণের অভিযোগে হিন্দু নারীর মামলা