X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৭ বৈশাখ ১৪৩২

দোষী সাব্যস্ত করে শাহজালালের সিএসওকে সতর্ক করলেন আদালত

চৌধুরী আকবর হোসেন
১৯ এপ্রিল ২০১৬, ০১:৪৫আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০১৬, ০১:৫৩

ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনে নিরাপত্তা কর্মীদের হট্টগোল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সিএসও) ইফতেখার জাহানকে দোষী সাব্যস্ত করে সর্বোচ্চ সতর্ক করল ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ‘যাত্রী হয়রানি সংক্রান্ত একটি অভিযোগের’ প্রাথমিক তদন্তে আদালতের কাজে ‘অসহযোগিতা ও প্রতিবন্ধকতা’ সৃষ্টির অপরাধ প্রমাণিত হলে ইফতেখার জাহান ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ তাকে সর্বোচ্চ সতর্ক করেন।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল শেখ সাদিক নামের দুবাইগামী (বিজি ০৫১) এক যাত্রী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফকে টেলিফোনে অভিযোগ করেন, শাহজালালের এক নিরাপত্তা কর্মী তার মানি ব্যাগ থেকে ১১শ দিরহাম ও সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। বিমানবন্দরের এক নম্বর বোর্ডিং গেইটে সিকিউরিটি চেকের সময় আর্চওয়েতে কর্মরত নিরাপত্তা কর্মী নিজ হাতে তার (যাত্রির) মানিব্যাগ খুলে টাকা গুণে দেখেন। মানিব্যাগে ১১ শ’ দিরহাম এবং ৫ হাজার ৫০০ টাকা ছিল। সিকিউরিটি কর্মী মানিব্যাগটি স্ক্যানিং ম্যাশিনে দেওয়ার জন্য অপর এক নিরাপত্তা কর্মীর কাছে দেন। বোর্ডিং তল্লাশি ও স্ক্যানিং শেষে বিমানে উঠে সাদিক মানিব্যাগ চেক করে দেখেন কোন দিরহাম ও টাকা নেই। পরে সাদিক ওই দুই নিরাপত্তাকর্মীর বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইলে ফোন করে অভিযোগ করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ১ নম্বর বোর্ডিং গেটে কর্মরত দুই নিরাপত্তা কর্মীকে চিহ্নিত করেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিক তদন্তের স্বার্থে তাদের বক্তব্য শোনার জন্য প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতাখারের মোবাইলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন ম্যাজিস্ট্রেট। পরে ম্যাজিস্ট্রেট কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মকর্তার (ডিএসও) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এই অবস্থায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ নামে অন্য এক নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে অভিযুক্ত দুই কর্মীকে ১৬ এপ্রিল বক্তব্য দিতে আদালতে হাজির হওয়ার আহ্বান জানান।

আরও পড়ুন: শাহজালালে ৮শ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার


১৬ তারিখেও অভিযুক্ত দুই নিরাপত্তা কর্মী আদালতে না এলে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহানকে তিনবার ফোন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। কিন্তু তিনি ফোন  রিসিভ করেননি এবং যোগাযোগের চেষ্টাও করেননি। রোববার (১৭ তারিখ) সকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের স্বার্থে ডিএসও মাহমুদা খানমকে অবহিত করে সিসিটিভি মনিটরিং রুমে গিয়ে যাত্রী সাদিকের অভিযোগের সময়ের ঘটনার ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় সিকিউরিটি সুপারভাইজার সালেহা, ইমিগ্রেশন প্রতিনিধি মমিনুল ইসলাম, এপিবিএন প্রতিনিধি রোজী এবং এভসেক সদস্য তানভীর আহমেদ উপস্থিতি ছিলেন। 

এসময় ডিএসও মাহমুদা খানম টেলিফোনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জানতে চান কোন অপরাধে দুই নিরাপত্তা কর্মীকে তলব করা হয়েছে তা না জানালে তাদের আদালতে পাঠানো হবে না। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। রোববার এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সহযোগিতা না করে আদালতের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগে সিএসও এবং ডিএসও’র বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেন। আর এই পর্যায়ে বিমানবন্দরের পরিচালক জাকির হাসান টেলিফোনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ডিউটি সিকিউরিটি অফিসার সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে হাজির হবেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে আদলতে হাজির হন বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা (সিএসও) ইফতেখার জাহান হোসেন ও ডিউটি সিকিউরিটি অফিসার (ডিএসও) মাহমুদা খানম। এর কিছু সময় পরেই আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে অন্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হ্ট্টগোল শুরু করেন। এই অবস্থায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ মুহাম্মদ ফরহাদ। এতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান, সিভিল এভিয়েশনের একাধিক নিরাপত্তা কর্মীকে চুরিসহ নানা অপরাধে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহান। এই পরিস্থিতিতে তাকে আদালতে তলব করা হলে তার অনুগতরা  হ্ট্টগোল শুরু করেন।

আরও পড়ুন: মাস্টার্সের কার্যক্রম থেকে জবির ৩ শিক্ষককে অব্যাহতি

বিকেল তিনটার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্টেট মুহাম্মদ ইউসুফ। এসময় বিমানবন্দরের পরিচালক জাকির হাসানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ডিউটি সিকিউরিটি অফিসার (ডিএসও) মাহমুদা খানমের বিরুদ্ধে যথাযথ অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অন্যদিকে ইফতেখার জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দোষ স্বীকার করে ইফতেখার জাহান নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন আদালতে। এসময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক করেন।

এ প্রসঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,শাহজালাল বিমানবন্দরে উস্কানি দিয়ে হ্ট্টগোল করার এমন ঘটনা অনাকাঙ্খিত। বিমানবন্দরের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ইফতেখার জাহানের সরল স্বীকারোক্তির জন্য তাকে ক্ষমা করা হয়েছে এবং বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে তাকে নূন্যতম সাজা হিসেবে সতর্ক করা হয়েছে।

আদালতের সামনে হট্টগোল ও সিওস’কে সতর্ক করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের পরিচালক জাকির হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হ্ট্টগোল না ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছিল, সবাইকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভবিক করা হয়েছে। যা কিছু হয়েছে সব সিভিল এভিয়েশনের নিজেদের ব্যাপার,এ নিয়ে রিপোর্ট করার কিছু নেই। ইন্টারনাল সমস্যা ছিল, সমাধান হয়েছে।

 

/সিএ/ এমএসএম /

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জুলাই ঘোষণাপত্র না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
জুলাই ঘোষণাপত্র না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না গ্রেফতার
শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না গ্রেফতার
জাবির সব দরজা খোলা: আনচেলত্তি
জাবির সব দরজা খোলা: আনচেলত্তি
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
সর্বাধিক পঠিত
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
লঞ্চঘাটে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর, যুবক বললেন ‘ভাই হিসেবে মেরেছি’
লঞ্চঘাটে তরুণীদের প্রকাশ্যে মারধর, যুবক বললেন ‘ভাই হিসেবে মেরেছি’
আ.লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা, শাহবাগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন হাসনাত
আ.লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা, শাহবাগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন হাসনাত
আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ
আ.লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপি সুস্পষ্ট অবস্থান না নেওয়ায় ছাত্রদল নেতার পদত্যাগ
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান শুরু
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক অভিযান শুরু