রাজপথ থেকে পুলিশ যাতে সরিয়ে দিতে না পারে, সেজন্য নতুন কৌশল বেছে নিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনকারীরা। এর কিছুটা সুফলও পাচ্ছেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংগঠন তাদের ব্যানার ও ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ব্যবহার করে বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের লক্ষ্য একটাই,পুলিশের সহানুভূতি নিয়ে রাজপথ দখলে রাখা এবং তাদের দাবি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা।
আরও পড়ুন: নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, অনিয়ম শূন্য শতাংশ: আওয়ামী লীগ
বিগত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এক দফা দাবি আদায়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করছে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ বেসিক গ্র্যাজুয়েট নার্সেস সোসাইটি।দিনের বেশিরভাগ সময় তারা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাত ও রাস্তা দখলে রাখছে। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয়নি।প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর দাবির প্রতি আন্তরিক হলেও আমলা ও চাটুকাররা তাকে ভুল বুঝানোর কারণে সেই সব দাবি আদায়ে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।
অবস্থান ধর্মঘটে থাকা আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমলা ও চাটুকাররা প্রধানমন্ত্রীকে তাদের বিষয়ে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এজন্যই তাদের দাবি আদায়ে বিলম্ব হচ্ছে। তাদের বিশ্বাস, আজ হোক কাল হোক প্রধানমন্ত্রী তাদের দাবি মেনে নেবেন।
আন্দোলনরত বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারুক হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার অভাব নেই। তিনি নার্সদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আমলারা। দাবি তাদের এটা ঠিক, কিন্তু ব্যাচ, মেধা ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নার্স নিয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘ইউপি নির্বাচন অর্থহীন, কমিশন সাক্ষী গোপাল’
আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার তাদের কৌশল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাবি আদায়ে তারা আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কৌশলই বেছে নিয়েছেন। অন্য কোনও কৌশল তারা নেননি। আর প্রধানমন্ত্রী যেহেতু তাদের ভালোবাসেন সেজন্যই তারা প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করেছেন।
নাম প্রকাশ না করে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, যেহেতু তারা রাস্তায় অবস্থান করছেন, পুলিশ যাতে ঝামেলা না করে সেজন্যই বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
বুধবার আন্দোলনরত নার্সদের পক্ষ থেকে চারজনের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চেয়ে তার কার্যালয়ে গিয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেখান থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে বলেও জানান ফারুক হোসাইন । বৃহস্পতিবার তারা কালো পতাকা মিছিল করেন প্রেসক্লাবের সামনে।
এর আগে গত মাসে বাংলাদেশ গ্রাম পুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে। তারাও একই পদ্ধতিতে আন্দোলন করেছিলেন। সংগঠনটির দফতর সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, তাদের দাবি হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মতো সমস্কেল। যেভাবেই হোক, দাবি আদায় হলেই হলো।
আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে গলাকেটে হত্যা
বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি নিয়ে আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারি কমিশনার (পেট্রোল) ইমামুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেউ হয়তো ভালোবাসেন, আবার কেউ কৌশল হিসেবে তাদের ছবি ব্যবহার করতে পারেন। সেটা সংশ্লিষ্টদের ব্যাপার। তবে সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতাদের বলে দেওয়া হয়েছে, আন্দোলন করতে গিয়ে তারা যাতে বাড়াবাড়ি না করেন। কেউ যাতে রাস্তা দখল করে জনভোগান্তি সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য তারা সব সময় সতর্ক রয়েছেন।
এপিএইচ/