ছয়তলা বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন বাবা আহমেদুল ইসলাম চৌধুরী। ভাই কামরুল হাসান সুমন থাকেন দ্বিতীয়তলায়। আর তৃতীয়তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেতেন বিমানবালা হুমায়রা জাহান চৌধুরী সুখী (৩৫)। একই বাড়িতে থাকলেও স্বজনদের কাছ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন জীবন কাটাতেন সুখী। এ কারণেই তার মৃত্যু আর তারপর লাশ পচে গেলেও স্বজনরা জানতে পারেননি।
গত শনিবারের পর যে কোনও সময় স্বজনদের মাথার ওপরের ফ্ল্যাটেই ‘মৃত্যু’ হয় সুখীর। লাশ পচে গণ্ধ বের হলে তবেই স্বজনরা জানতে পারেন।
সুখীর বাবা আহমেদুল ইসলাম চৌধুরী এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে রাজি হননি। বাংলা ট্রিবিউনকে শুধু বলেন, মাঝে-মধ্যে খোঁজ খবর নিতে গেলে সুখী বিরক্ত হতো। এজন্য তেমন কিছু বলতাম না। মেয়ের মৃত্যু নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে ময়না তদন্তের প্রতিবেদনে অস্বাভাবিক কিছু পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
আরও পড়ুন: ‘সিসিটিভির ফুটেজে ঘাতকরা’ (ভিডিও)
পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না সুখীর। নিজের মতোই চলতেন তিনি। ২০০৮ সালে কাতার এয়ার ওয়েজের বিমানবালার চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রতিবেশি একজনকে বিয়ে করলেও তিন মাসের মধ্যে আবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে তিনি একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি নেন। গত এক বছর আগে ওই চাকরিও ছেড়ে দেন। মাঝে-মধ্যে বাসায় বন্ধু-বান্ধব আসতো। তাদের সঙ্গেই তিনি আড্ডা দিতেন ও সময় কাটাতেন।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি গোপাল গনেশ বিশ্বাস (জি জি বিশ্বাস) বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, সুখীর বাবা প্রকৌশলী আহমেদুল ইসলাম চৌধুরী সিভিল এভিয়েশনের উপ-পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। পশ্চিম রাজাবাজারের ৪৪-এইচ নম্বরের পান্থনীড় নামের বাড়িটিও তার। ওই বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। দ্বিতীয়তলায় থাকেন তার একমাত্র ছেলে কামরুল হাসান সুমন। তিনি কাতার এয়ারওয়েজের পাইলট। বড় বোন স্বামীর সঙ্গে থাকেন বসুন্ধরা এলাকায়।
ওসি জি জি বিশ্বাস আরও জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টার পর তারা হুমায়রার ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। লাশটি মেঝেতে পড়ে ছিলো। নাকে-মুখে রক্ত দেখা গেলেও শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ময়না তদন্তের পর তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে বলে মনে করেন তিনি। ২৩ এপ্রিলের পরে যে কোনও সময় তার মৃত্যু হতে পারে। যে কারণে তার লাশ অনেকটা পচে যায়। ময়না তদন্তের জন্য সুখীর লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছেন। আলামতের মধ্যে রয়েছে- ওড়না, চিরুনী, চাবির ছড়া, স্যানিটারি ন্যাপকিন, টেবিল ল্যাম্প ও ছবি। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুখীর বন্ধু তুষারকে বাসার নিচে দেখতে পান। এই সময়ে বাসার নিচে আসায় সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া বাড়ির দারোয়ান ইলিয়াসকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
সুখীর প্রতিবেশী আবদুল খালেক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনদিন আগে সুখীকে রিকশায় চড়ে যেতে দেখেছেন। গত তিনদিন তাকে আর দেখা যায়নি। তার ধারণা, এ সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে। রাস্তায় দেখা হলে কথা হতো। কখনও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি। তার পুরো পরিবারই এলাকায় ভদ্র হিসেবে পরিচিত বলে জানান তিনি। তবে আশপাশের ফ্ল্যাটের কেউই কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত র্যাব-২ এর সহকারী পরিচালক এএসপি ইয়াসির আরাফাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঘরের ভেতর থেকে দরজার ছিটকানি লাগানো ছিল। ভেতর থেকে কেউ বের হয়নি সেটা বোঝা যাচ্ছে। এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। তদন্তের পরই আসলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনী রচনা করা আওয়ামী লীগের স্বভাবধর্ম
/এজে/