X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমি এইচআইভি পজিটিভ, কথাটা গোপন থাকেনি

জাকিয়া আহমেদ
০১ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:৪৩আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০১৬, ২১:৪৬

এইচআইবি আক্রান্ত ব্যক্তি ২০০০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ছিলেন চাঁদপুরের নুরুজ্জামান (ছদ্মনাম)। সিঙ্গাপুরে থাকার মেয়াদ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে কিছু মেডিক্যাল টেস্ট করান তিনি। কিন্তু কোনও ফলাফল না জানিয়েই তাকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দেশে আসার পর তার নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় চাঁদপুরের একটি ক্লিনিকে যান তিনি। সেখানেও চিকিৎসক তাকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন। রিপোর্ট আনতে গেলে তাকে বলা হয় অন্য কাউকে নিয়ে আসতে। বাবাকে নিয়ে যান নুরুজ্জামান। বাবার কাছেও রিপোর্ট দেয় না ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আরও কাউকে নিয়ে যেতে বলেন নুরুজ্জামানকে।






এবার বাবার সঙ্গে মামাকেও ক্লিনিকে নিয়ে যান তিনি। তাকে বাইরে বসিয়ে রেখে মামা ও বাবাকে ভিতরে ডেকে নেন কর্তৃপক্ষ। নুরুজ্জামান বলেন, ‘সেখান থেকে বের হওয়ার পর তাদের যে মুখ দেখি সেটা কোনওদিন আমি দেখিনি, তাদেরকে একদম অপরিচিত লাগছিল।’ বাড়ি ফিরে বাবা তাকে বলেন, ‘তোর বিদেশ যাওয়া লাগবে না। তোর কামাই করে খাওয়ানো লাগবে না। আমিই তোরে খাওয়াবো জীবনভর। তবে তুই একঘরে থাকবি, বাইরে বের হবি না।’ সেই থেকে আমি ওই একটা ঘরে বন্দি থাকতে শুরু করলাম। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের বাইরে বসে এভাবেই নিজের জীবনের গল্প বলছিলেন নুরুজ্জামান। তার জীবনের এমন করুণ পরিস্থিতির আবির্ভাবের কারণ তিনি একজন এইচআইভি পজিটিভ।
এই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়নি নুরুজ্জামানকে। তিনি বলেন, ‘কথাটা গোপন থাকেনি। ক্লিনিকেরই একজন কথাটা আরেকজনকে বলেন, তিনি বলেন আরেকজনকে। এভাবেই পুরো গ্রাম জেনে যায়, আমি এইডসে আক্রান্ত। সবার কাছে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে যে আমি আর দুই থেকে তিন সপ্তাহ বাঁচব।’
ওসমানী মিলনায়তনের বাইরের মাঠের দিকে তাকিয়ে নুরুজ্জামান বলতে থাকেন, ‘এক সময় যারা এলাকায় বড় ভাই হিসেবে মেনে চলত, ভয়ে সামনে আসত না তারা চোখ রাঙাতে শুরু করে। চোখের সামনে এসে বলতে থাকে, ‘তোর এইডস হইছে, তুই সিঙ্গাপুর গিয়া খারাপ কাজ করছোস, তোরে গ্রামছাড়া করব।’ সেসব দিনে কথা ভাবলে এখনও শিউরে উঠি।’ এক সময় টাকাও দাবি করতে থাকে গ্রামের ওইসব মানুষ। রাতের অন্ধকারে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন নুরুজ্জামান। ছেলেকে না পেয়ে বাবার ওপর চলে হুমকি। গ্রাম ছাড়েন তার বাবাও।
সিলেটে পালিয়ে ছিলেন নুরুজ্জামান। মাস তিনেক পার হয়ে যাওয়ার পর তার মনে হয়, এতদিন তো তার বেঁচে থাকার কথা না। কীভাবে তিনি বেঁচে আছেন? সিলেট থেকে চলে আসেন ঢাকা। শুরু করেন চিকিৎসা। নুরুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকায় চিকিৎসা শুরুর পর খোঁজ পাই ‘মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ’-এর। এখন আমি ওখানেই কাজ করছি, বিয়ে করেছি। দুই সন্তান আমার। স্ত্রী ও সন্তানেরা এইচআইভি নেগেটিভ। তবে আমরা দুজন নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছি। মাঝে মাঝে বাড়িও যাই। তখন যারা আমাকে পুলিশে দিতে চেয়েছিল, যারা টাকা চাইতো, তারা এখন চা খাওয়ার জন্য ডাকে। বলে, তারা ভুল করেছিল।’
এইচআইভি পজিটিভ ভারতের মেয়ে মঞ্জুর জীবনও এমন কান্নাভেজা। শিলিগুড়ির এই মেয়ে জানালেন, এইডস হওয়ার পর আর বাড়ি যাননি, দেখেননি বাবা-মা-ভাইকে। চোখের কোণে জমে ওঠা অশ্রু লুকানোর চেষ্টা করে মঞ্জু বলেন, ‘ভালোবেসে কাদেরকে বিয়ে করেছিলাম। ওর সঙ্গে চলে আসি বাংলাদেশে। আমি জানতাম ও এইচআইভি পজিটিভ ছিল। আমি চলে গেলে ওকে দেখার কেউ থাকবে না বলে ফিরে যাইনি। কিন্তু আমি যখনিএইচআইভি পজিটিভ হলাম তখন আমাকে দেখার কেউ রইল না। স্বামী মারা গেল, শ্বশুড়বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল। কেবল খারাপ কাজ করলেই এইডস হয়, এটাই শুধু জানে তারা।’
মঞ্জুর কান্নাভেজা জীবনে হাসির উপলক্ষও এসেছে। এইচআইভি পজিটিভ হয়েও তিনি খুঁজে পেয়েছেন নতুন জীবনসঙ্গী। চোখে জল আর মুখে হাসি নিয়ে মঞ্জু বলেন, ‘আমি এইচআইভি পজেটিভ জেনেও আমার জীবনে এসেছেন আরেকজন। আমাদের বিয়ে হয়েছে, আমরা সুখে আছি। নিয়মিত ওষুধ খাই।’ মঞ্জু বলেন, ‘যেকোনও এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তি ওষুধ খেয়ে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে পারে, এটা সমাজের বুঝার সময় এসেছে। আর এইডস রোগী মানেই খারাপ কাজ করে না, নানাভাবে একজন মানুষ এইডসে আক্রান্ত হতে পারে। সমাজ যদি এটা বুঝতে পারে তাহলেই আমাদের আর লুকিয়ে থাকতে হবে না। সমাজের আর দশ জনের সঙ্গে আমরাও মিলেমিশে থাকতে পারব, সাধারণ জীবনযাপন করতে পারব।’

/টিআর/ আপ-এমডিপি





সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ গেলো দুজনের
সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে প্রাণ গেলো দুজনের
রুনা লায়লার নতুন গান, সঙ্গে দুই তরুণ
রুনা লায়লার নতুন গান, সঙ্গে দুই তরুণ
নারী ফুটবল লিগে দলগুলো ভোটাধিকার চায়
নারী ফুটবল লিগে দলগুলো ভোটাধিকার চায়
তামিম-মুশফিকের ব্যাটে প্রাইম ব্যাংকের জয়
তামিম-মুশফিকের ব্যাটে প্রাইম ব্যাংকের জয়
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
সোনার দাম১০ দিনে ভরিতে কমলো ৮ হাজার টাকা
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম