X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

কে এই শরিফ খান?

নুরুজ্জামান লাবু
০২ জুন ২০১৭, ১৮:৩৬আপডেট : ০৩ জুন ২০১৭, ১০:২৭

শরিফুল খান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি ডোবা থেকে শুক্রবার (২ জুন) সকালে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গুলিবারুদ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্যমতে, শরিফের দেওয়া তথ্যেই ৬২টি এসএমজি, ৫১টি ম্যাগাজিন, ৫টি পিস্তল, ২টি ওয়াকিটকি, ২টি রকেটলঞ্চার, ৫৪টি গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ডেটোনেটর ও গুলি উদ্ধার হয়। এই ঘটনার পর আলোচনায় আসে শরিফ খান। তবে এই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারের পর প্রশ্ন ওঠেছে কে এই শরিফ খান?  

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের বগলা গ্রামের মোসলেহ উদ্দিন খান ও জমিলা বেগমের সন্তান শরিফ খান। ২০০৬ সালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে আসেন। সৌদি আরব থেকে ফিরে বিয়েও করেন। সংসার চালানোর প্রয়োজনে বিয়ের পরপরই আবার দুবাই চলে যান শরিফ খান। আড়াই বছর পর ২০০৯ সালের শেষের দিকে আবার দেশে ফিরে আসেন। শুরু করেন জমি কেনাবেচার ব্যবসা।  স্ত্রী ফাহিমা ও দুই পুত্র সন্তান নিয়ে দেশেই এবার স্থায়ীভাবে সংসার শুরু করেন। তার বড় ছেলে ফাহিমের বয়স নয় বছর এবং ছোট ছেলে রাফি’র বয়স আড়াই বছর।স্ত্রী ফাহিমা বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।

শরিফ খানের দেওয়া তথ্যে অস্ত্র উদ্ধারের কথা পুলিশ জানালেও তা মানতে নারাজ শরিফের স্ত্রী ফাহিমা বেগম। শুক্রবার (০২ জুন) বগলা গ্রামের সেই শরিফ খানের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী ফাহিমা বেগমের সঙ্গে তার স্বামী এবং তাদের বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে কথা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের স্থান থেকে শরিফ খানের বাড়ির দূরত্ব ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার।

শরিফ খানের বাসার রান্নাঘর, প্লাস্টিকের চাল রাখা ড্রামের আড়াল থেকে বড় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ শরিফ ছিলেন র‌্যাবের সোর্স

ফাহিমা বেগম জানান, ২০০৬ সালে বিয়ের পর ওই বছরের শেষের দিকে আবার দুবাই চলে যান শরিফ খান। আড়াই বছর সেখানে থাকার পর দেশে ফিরে আসেন ২০০৯ সালে। এরপর এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচয় হয় র‌্যাব-১১ এর হারুন নামের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। এরপর জমি জায়গা সংক্রান্ত ব্যবসায় নেমে পড়েন। কিন্তু ওই ব্যবসায় দাঁড়াতে পারেননি শরিফ। এরপর ওমান যাওয়ার চেষ্টা করে বেশ কিছু টাকা খুইয়ে ফেলেন। এরপর থেকে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন শরিফ। আর্থিক দৈন্যতার কারণে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে বলেও জানান ফাহিমা বেগম।

ফাহিমা জানান, শরিফকে এর আগে দুইবার রূপগঞ্জ থানা পুলিশ গ্রেফতার করে মাদকসহ। গাজীপুর থানা পুলিশও তাকে একবার গ্রেফতার করেছিল। তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ ও গাজীপুর থানায় মামলা রয়েছে। মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি তার পরিবারের লোকজনও জানেন। একবার মাদকের মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে তিনি কোর্ট থেকে পালিয়ে আসেন। 

স্ত্রী ফাহিমা জানান, গত মঙ্গলবার (৩০ মে) পুলিশ মাদকের খোঁজে তল্লাশি করতে আসে। পরদিন মাদকের মামলায় জামিন পান শরিফ। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তাকে আবার গ্রেফতার করে পুলিশ।  

ফাহিমা বেগম জানান, গত মঙ্গলবার বাসায় যখন পুলিশ তল্লাশির জন্য আসে, তখন  নারায়ণগঞ্জ কোর্টে মামলার শুনানি ছিল শরিফের। শুনানির পর আদালত তার বেল কেটে দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওইদিন দুপুরে দুজন পুলিশ সিভিল পোশাকে তাদের বাসায় আসেন। ওই সময় ফাহিমা রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। পুলিশ রান্নাঘর তল্লাশির কথা জানিয়ে ফাহিমাকে বেডরুমে চলে যেতে বলেন। ওই সময় আরও কিছু পুলিশ সদস্যও রান্নাঘরে ঢোকেন।

শরিফ খানের বাড়ি পুলিশ কিছুক্ষণ পর ফাহিমাকে বলে আপনার রান্না ঘরের চালের ড্রামের আড়াল থেকে বড় অস্ত্র পাওয়া গেছে। কিন্তু যেখান থেকে অস্ত্র পাওয়া গেছে পুলিশ বলছে, সেখানে আগে থেকেই অস্ত্র রাখা থাকলে তা দেখার কথা। কিন্তু তিনি দেখেননি। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, সেখানে আগে থেকেই অস্ত্র রাখা ছিল।

শরিফের ইয়াবা সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ফাহিমা বলেন, ‘স্বামী মাদক সেবন করতেন এবং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে এত বড় অস্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এত টাকা থাকলে তার আর্থিক অনটন থাকতো না।’ অভাবের কারণেই সে মাদক সেবন করে বলে উল্লেখ করেন ফাহিমা।

পুলিশ জানতো না শরিফ আদালতে

পুলিশের তল্লাশির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ফাহিমা বলেন, ‘শরিফ কোথায় আছে জানতো না পুলিশ। বাসায় এসে জিজ্ঞাসা করেছে শরিফ কোথায়? অথচ তখন শরিফ আদালতে।’

পুলিশের তল্লাশির বিষয়ে ফাহিমা বলেন, ‘পুলিশ সিএনজিতে একটি ব্যাগ নিয়ে এসেছিলো। অস্ত্র নিয়ে আবার তারা চলে যায়।’ পুলিশ মাদক উদ্ধার করতে আসলে ব্যাগ কেন এনেছিল প্রশ্ন করেন ফাহিমা।

ফাহিমাকেও টাকার জন্য চাপ দেয় পুলিশ
ফাহিমা আরও বলেন, ‘‘যখন রান্নাঘরে অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায়, তখন পুলিশ প্রস্তাব দেয়, টাকা দিলে আপনাকে মামলায় জড়াবো না। আপনার স্বামীই শুধু আসামি হবে।’ পুলিশের এই প্রস্তাব নাকচ করেন বলে উল্লেখ করেন ফাহিমা। তিনি বলেন, ‘টাকা নেই, টাকা দেওয়া সম্ভব না।’

 /এসএমএ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আসকের নতুন নির্বাহী পরিষদ গঠন
আসকের নতুন নির্বাহী পরিষদ গঠন
রাহিব রেজার মৃত্যু: ডা. সপ্নীলসহ আরও ২ চিকিৎসকের সনদ স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি 
রাহিব রেজার মৃত্যু: ডা. সপ্নীলসহ আরও ২ চিকিৎসকের সনদ স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি 
চা কিংবা কফি দিয়ে চুল ধুলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
চা কিংবা কফি দিয়ে চুল ধুলে যেসব উপকার পাওয়া যায়
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মাইলফলক: পার্বত্য উপদেষ্টা
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের মাইলফলক: পার্বত্য উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট