X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

চার বছর মর্গে থাকা ধর্মান্তরিত লাইজুর লাশ মুসলিম রীতিতে দাফনের নির্দেশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ এপ্রিল ২০১৮, ১৫:১৯আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৮, ১৭:৫২

সুপ্রিম কোর্ট দীর্ঘ চার বছর মর্গে থাকা নীলফামারীর হোসনে আরা লাইজুর (নীপা রানী রায়) লাশ ইসলামিক রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। লাইজু হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়ায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এই আদেশ লিখিত আকারে হাতে পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহযোগিতায় তা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হোসনে আরা লাইজুকে দাফনের আগে তাকে পরিবারকে দেখার সুযোগ দিতে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) এক আবেদনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে মেয়ের বাবার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সমীর মজুমদার। অন্যদিকে ছেলের বাবার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট একেএম বদরুদ্দোজা।

নীপা রানী রায় ধর্মান্তরিত হয়ে হন হোসনে আরা লাইজু

মামলার বিবরণ অনুসারে, নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বমুনিয়া গ্রামের অক্ষয় কুমার রায় মাস্টারের মেয়ে নীপা রানী রায়ের (২০) সঙ্গে একই উপজেলার পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন ফরিদ লাজুর (২৩) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যান। এরপর নীপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি মোছা. হোসনে আরা বেগম লাইজু নাম ধারণ করেন। নীলফামারী নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিটে দুই লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমায়ুন ফরিদ লাজুকে বিয়ে করে। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করে আসছিলেন। এ অবস্থায় মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে। মামলার পর তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ের সব কাগজপত্রসহ আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দেন। পরে আদালত সার্বিক বিবেচনায় অপহরণ মামলাটি খারিজ করে দেন।

মেয়ের বাবা মামলার খারিজ আপিলে তার মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিষ্ক বিকৃতি রয়েছে (পাগল) দাবি করে আদালতে কাগজপত্র দাখিল করে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার জন্য রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। লাইজু সেফ হোমেই অবস্থান করছিলেন। হুমায়ুন ফরিদ লাজু ও হোসনে আরা লাইজু

পরে ২০১৪ সালের  ১৫ জানুয়ারি লাইজুর স্বামী হুমায়ুন ফরিদ ওরফে লাজু ইসলাম বিষপানে আত্নহত্যা করেন। লাজুর আত্মহত্যার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে লাইজুর বাবা তাকে নিজের জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে বাবা তার বাড়িতে চলে যান। তবে মেয়েকে অপ্রাপ্তবয়স্ক ও মস্তিষ্ক বিকৃতি (পাগল) দাবি করে আদালতে দায়ের করা মামলাটি চলমান থেকে যায়।

২০১৪ সালের ১০ মার্চ দুপুরে বাবার বাড়িতে নিজের শোয়ার ঘরে সবার অগোচরে কীটনাশক পান করেন লাইজু। পরে তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ডোমার থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকে মেয়েটির মরদেহ রাতেই উদ্ধার করে। পরের দিন (১১মার্চ) নীলফামারী জেলার মর্গে মেয়েটির মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়। ওইদিন পুত্রবধূ দাবি করে লাজুর বাবা জহুরুল ইসলাম ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক লাইজুর দাফনের আবেদন করেন। তবে মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে মেয়ের সৎকারের জন্য নীলফামারী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে লাইজুর মরদেহ তার শ্বশুরের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে লাইজুর বাবা আপিল করেন। এরপর জজ আদালত লাইজুর মরদেহ তার বাবার কাছেই হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন তার শ্বশুর। বৃহস্পতিবার সেই আবেদনের নিষ্পত্তি করে আদালত আদেশ দেন।

বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত লাইজুর মরদেহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের হিমঘরেই থেকে যায়।

 

/বিআই/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীথাইল্যান্ড সফর একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
‘গরমে অসুস্থ’ হয়ে মারা যাওয়া সেই শ্রমিকের পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ওমরাহ করতে স্ত্রীসহ সৌদি আরব যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
ঢাকার অধস্তন আদালতগুলোতে এসি লাগাতে আইনি নোটিশ
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি