অসচেতনার কারণে দেশের বহু নারী প্রতিবছর জরায়ু মুখে ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। জরায়ু ক্যান্সারে মৃত্যুর হারে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। এই পরিস্থিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসকে ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাসজুড়ে দিবসটি পালন করবে ক্যান্সারবিরোধী মোর্চা ‘মার্চ ফর মাদার’ ও আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১। জরায়ু মুখে ক্যান্সার সচেতনতা উপলক্ষে এ মাসে রাজধানীর লালমাটিয়ার ৭/৯, ব্লক-বি এর কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টারে ১২ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি বিকাল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত নারীদের ফ্রি স্ক্রিনিং ও ভায়া টেস্ট করানো হবে। তবে শুক্রবার বন্ধ থাকবে।
এছাড়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগতভাবে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। ক্যান্সারবিরোধী সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) বলছে, বিশ্বে প্রতিবছর পাঁচ লাখ ২৮ হাজার নারী জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন দুই লাখ ৬৬ হাজার। বাংলাদেশে এই রোগে আক্রান্ত নারীর হার ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ, বা ১১ হাজার ৯৫৬ জন। এরমধ্যে মারা যান ১৫ দশমিক ছয় শতাংশ বা ছয় হাজার ৫৮২ জন। এই রোগে প্রতিদিন গড়ে মারা যান ১৮ জন নারী।
ক্যান্সারবিরোধী মোর্চা ‘মার্চ ফর মাদার’ ও ‘আন্তর্জাতিক রোটারি জেলা ৩২৮১’-এর সমন্বয়ক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা জানুয়ারি মাসজুড়ে মানুষকে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতন করতে কাজ করবো। পাশাপাশি আগামী ১২ জানুয়ারি ‘জরায়ু মুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস’ পালিত হবে। এদিন আমরা ঢাকায় ‘জননীর জন্য পদযাত্রা’র আয়োজন করেছি।’
ক্যান্সারবিরোধী সংগঠনের সমন্বয়ক বলেন, ‘‘গত বছর থেকে আমরা এই মাসের দ্বিতীয় শনিবার অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি উদযাপন করছি ‘জরায়ু মুখের ক্যান্সার সচেতনতা দিবস'হিসেবে। গত বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল— ‘বাল্যবিবাহে জোর না’। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে এ বছরও একই থিম রাখা হয়েছে ।’’
হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, ‘সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আগামী ১২ জানুয়ারি (শনিবার) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এতে জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেবেন। এরপর থেকে প্রতিদিন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। এছাড়া, ১৩ জানুয়ারি সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজে, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি সিলেটে এবং ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় ‘জননীর জন্য পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করা হবে।
বিভিন্ন সংগঠনকে ক্যান্সার সচেতনতার মাস পালনের আহ্বান জানিয়ে হাবিবুল্লাহ রাসকিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘আমাদের এই আয়োজনে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন যুক্ত হতে পারে। ‘জননীর কাছে সবার আছে জন্মঋণ, জরায়ু মুখের ক্যান্সার সচেতনতায় অংশ নিন’ এই শ্লোগানে মাসব্যাপী জরায়ু মুখের ক্যান্সার সচেতনতা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।’’
ক্যান্সার প্রতিরোধ ও গবেষণা কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মোসাররত জাহান সৌরভ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘কিশোরী বয়সে জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের ভ্যাকসিন নিলে এবং কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। কেবল বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেও অনেক নারীকে এই রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। আবার নিয়মিত টেস্টের মাধ্যমে রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে রোগী মৃত্যুর থেকে রক্ষা পেতে পারেন। কিন্তু এই রোগটি সম্পর্কে এখনও সেভাবে সচেতনতা তৈরি হয়নি। তাই আমরা এই ‘জননীর জন্য পদযাত্রা’র আয়োজন করছি। আমাদের উদ্দেশ্য মানুষকে এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন করা। যেন কোনও নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ না করেন।’’