X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে স্পিকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:০০আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:২৫

জাতীয় সংসদ (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

জাতীয় সংসদে বেসরকারি সদস্যদের একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব নিষ্পত্তিতে স্পিকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর)। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৯৪ বিধি অনুসারে ‘হ্যা’-‘না’ ভোটের পর ওই ইস্যুতে কোনও সদস্যের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও প্রস্তাব উত্থাপনকারী সরকারি দলের সাবের হোসেন চৌধুরী ও ওয়ার্কার্স পার্টির  রাশেদ খান মেনন এটা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে বিতর্কে জড়ান।

স্পিকার সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি নিষ্পত্তি করলে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন প্রস্তাব উত্থাপনকারী আওয়ামী লীগের সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। পরে ক্ষমতাসীন দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননও সাবের হোসেনের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন।

ক্ষমতাসীন দলের কোনও সদস্য কর্তৃক স্পিকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জের নজির সংসদে খুব একটা দেখা যায় না।

তামাকজাত দ্রব্যের ওপর প্রচলিত অ্যাড–ভেলারাম (স্তরভিত্তিক মূল্যের শতকরা হার) পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট করারোপ করার দাবি জানিয়ে বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব এনেছিলেন সরকারি দলের সাবের হোসেন চৌধুরী। সংশোধনি দিয়ে তার এই প্রস্তাবে সমর্থন জানান আরও ৯ জন সংসদ সদস্য।

পরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই প্রস্তাব প্রত্যাহারে অনুরোধ করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণত প্রস্তাবকারী সদস্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু সাবের হোসেন চৌধুরী তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে রাজি হননি। তখন নিয়ম অনুযায়ী প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

স্পিকারের ভোটের সময় প্রথমে প্রস্তাবটি গ্রহণ করার পক্ষে বেশি ভোট পড়লেও স্পিকার তার সিদ্ধান্ত না দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ভোটে দেন। এসময় কণ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ না করার পক্ষে ভোট পড়ে এবং এটি গ্রহণ হয়নি বলে স্পিকার সিদ্ধান্ত দিয়ে নিষ্পত্তি করেন।

পরে স্পিকার অন্য বিষয়ে চলে যান। এসময় সাবের হোসেন চৌধুরী ফ্লোর চাইলে স্পিকার তাকে পরে দেবেন বলে জানান।

পরে স্পিকার ফ্লোর দিলে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম দফা কণ্ঠভোটেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যায়। পরবতর্তীতে আবার স্পিকার ভোটে দিলেন। একটা বিষয়ে দুইবার ভোটের কোনও নজির আছে বলে মনে করি না। এখানে দুটি বিষয়। একই বিষয়ে দুবার ভোট হতে পারে কিনা? অবশ্যই আমি হতাশ। আমরা যখন বেসরকারি সদস্য হিসেবে কোনও বিষয় সংসদে উত্থাপন করি, একজন মেম্বার হিসেবে করি। এটা আমাদের অধিকার। এখানে সরকারের হুইপিংয়ের কোনও বিষয় নেই। পরবর্তীতে যেভাবে হাত দেখিয়ে ভোট পাল্টাবে এই নজির সংসদে রাখা উচিত নয়। আমরা চাই না এই সংসদে এমন কোনও নজির স্থাপন হোক, যেটা নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনায় আসবে।’

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আপনার (স্পিকার) রুলিং সম্মান করি। আমার কথাগুলো কার্যবিবরণীতে থাকা উচিত। এতই যদি কনফিউশন থাকতো আমি তখন দাঁড়িয়েছিলাম কেন? এটা নিয়ে যদি কোনও কনফিউশন থাকতো, তাহলে আমরা একটা ডিভিশন দেই। এই একটা ভোটে তো সরকারের পতন হয়ে যাবে না। আমাদের সবার মধ্যে সেনসিটিভিটি এত বেশি হয়ে যায়, এটাতো সরকারের বিপক্ষে ভোট না। এটা জনস্বার্থের পক্ষে একটা ভোট। সে উদারতা আমাদের মাননীয় মন্ত্রীদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি এবং জাতীয় স্বার্থেই তারা এ ধরনের আচরণ করবেন বলে আশা করি।’

স্পিকারের উদ্দেশ্যে তিনি এসময় বলেন, ‘প্রসিডিংস দেখেন। সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখেন। যদি প্রমাণ হয় প্রথম ভোটটি স্পষ্ট ছিল, সে হিসাবে আমার সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ করবেন। সেটাই সংসদের অভিমত হিসেবে গণ্য হবে।’

এসময় ফ্লোর নিয়ে রাশেদ খান মেনন স্পিকারের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি অভিভাবক। বেসরকারি সদস্যদের বিশেষ অধিকার আছে। যেগুলো জরুরি মনে করে, নিয়ে আসে। বেসরকারি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এমন নজির সংসদে আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্ন নিয়ে প্রস্তাব এসেছিল। গ্রহণ হয়েছিল, বিচার হয়েছে। আজকে যদি সংসদ সদস্যরা জাতীয় স্বার্থে কথা বলতে না পারে, এভাবে যদি পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়, পদ্ধতিগত প্রশ্ন ওঠে...।একজন কর্মকর্তা কি যেন বললেন, তারপর আবার ভোটে দিলেন। মাননীয় স্পিকার আপনি বলতে পারতেন- আপনি ডিভিশনে যান। তখন হয়তো তিনি হেরে যেতেন। এই যে পদ্ধতিগত প্রশ্ন এখানে এলা, এটা খুব খারাপ দৃষ্টান্ত হলো। সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখে প্রসিডিংস যাচাই করুণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।’

পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম যে বিষয়টি হয়েছে, প্রত্যাহারের বিষয়ে মন্ত্রী অনুরোধ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী ভোটে দেওয়া হয়েছে। যেভাবে ভোটটা হয়েছে, আমি এই চেয়ারে বসে একটু কনফিউজড ছিলাম। সংসদের অভিমত কী সে বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট ছিল না। যে কারণে আমি পুনরায় ভোটে দিই। আমি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেই নাই। ভোটের পরে কোনও সিদ্ধান্তের কথা না বলে আমি আবার ভোটে দেই। যাদের এই বিষয়ে অধিকার তাদের সামনেই সেটি উপস্থাপন করি। তখন একটা ভিন্ন মত এসেছে। এখন যদি আমার মনে হয়- আমি সঠিক ছিলাম, যদি সদস্যের পক্ষে ভোট হতো, দ্বিতীয়বারও একই ফল আসতো। যেটা আপনি (সাবের) দাবি করছেন। কিন্তু দ্বিতীয় ভোটে সেটা হয়নি। এখানে হুইপিংয়ের ইস্যু নেই কোনও। হুইপের সঙ্গে কথাও বলিনি। সংসদ সদস্যরা যেটা যথাযথ মনে করেছেন, তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

স্পিকার বলেন, ‘এখানে কোনও পক্ষপাতিত্বের বিষয় নেই। বেসরকারি সিদ্ধান্ত উত্থাপন করেছেন এটা আপনার অধিকার। রাশেদ খান মেনন যে কথা বলেছেন সেখানে কিছু বক্তব্য অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। জাতীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হোক এধরণের কোনও কিছুই এই হাউজে করা হয় না। কার্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ ছাড়া এখানে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। এর আগে অনেক নজির আছে- স্পিকারের মনে হয়েছে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয়, পুনরায় ভোটের নজির আছে।’ স্পিকারের বক্তব্যের সময় দুই দফা সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তাকে সমর্থন জানান।

আরও খবর: সংসদে না বুঝে ‘না’ ভোট দিলেন সরকারি দলের এমপিরা 

 

/ইএইচএস/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
শিক্ষাবিদ প্রণব কুমার বড়ুয়ার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
প্রধানমন্ত্রী দেশের পথে
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
সুঁই-সুতোয় ‘স্বপ্ন বুনছেন’ ভোলার আমেনা খানম
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ