X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জন্ম থেকেই কবর সেবায় ইয়াছিন

শাহেদ শফিক
১২ আগস্ট ২০২১, ১৫:০০আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২১, ১৫:০০

তখনও কবরস্থান ছিল না। এলাকাটিতে অথৈ পানি প্রবাহিত হতো। সেখানেই জন্ম ইয়াছিন আরাফাতের। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে তার জন্মস্থানে হয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ- রায়েরবাজার কবরস্থান। এই কবরস্থানের অনেক কিছুই ঘটেছে তার চোখের সামনে। নখদর্পনে তার সব কিছু। সেই থেকেই আছেন কবরস্থানটির কবরের সেবায়। রোদ-বৃষ্টি, অভাব-অনটন কোনও কিছুই তার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। করে যাচ্ছেন অনবরত কবরের পরিচর্যা।

সোমবার কবরস্থানটির একটি কবরের পরিচর্যা করার সময় তার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। জানালেন করোনা মহামারীর এই সময়সহ লাশ আর কবরের সঙ্গে তার মিতালীর নানা কথা। জানালেন, মাদরিপুরের সদরে তার বাড়ি হলেও কখনো গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি। কথা বলছেন আর মনযোগসহ খুন্তি ও নিড়ানি দিয়ে কবরের ঘাস ও ফুলের গাছের পরিচর্যা করছিলেন ইয়াছিন।

ইয়াছিন আরাফাত বলেন, আমার জন্ম এখানে। গ্রামের বাড়ি মাদারিপুর সদরে হলেও কখনও সেখানে যাইনি। এই কবরস্থানে যতগুলো কবর রয়েছে, তার প্রায় প্রতিটিতেই আমার হাত পড়েছে। এজন্য আমি কারও থেকে কোনও অর্থ নিই না। এই এখন যে কবরটির কাজ করছি সেটিও আমি নিজ থেকেই করছি। এই ব্যক্তি কোটিপতি। তার ছেলে সন্তানরা দেশের বাহিরে থাকেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে কেউ আসেনি। আমিই তাকে কবর দিয়েছি। এখন তার কবরের সেবা করছি। এমন শতশত ঘটনা চোখের সামনে ঘটেছে।

আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত ইয়াছিন

করোনার প্রথম সময়ের চিত্র তুলে ধরে ইয়াছিন বলেন, এমন একটি সময় দেখতে হলো, বাবা তার ছেলেকে রেখে চলে যান। ছেলে তার বাবা-মাকে ফেলে রেখে গেছেন। স্বামী তার স্ত্রীর খবর নেয়নি। লাশের উপর পরিচয়পত্রটি রেখে চলে গেছেন। সেসময় আমরা অগনিত লাশের কবর দিয়েছি। নিজ হাতে সেই কবরের পরিচর্যা করেছি। কোনও ভয় করিনি। মহামারীর কারণে অনেকেই ভয় পায়। কবর দেওয়ার পরেও তেমন একটা কেউ আসে না।

তবে সেই চিত্র এখন কিছুটা পাল্টেছে। আগে ৭০ ভাগ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা মানুষের লাশের সঙ্গে কবরে নামতো না। রেখে চলে যেতো। এখন ৩০ ভাগ মানুষ এমন কাজ করে। লাশকে সমাহিত বা কবরস্থ কারতেও আত্মীয়স্বজনরা বেশি আসে না। এমন পরিস্থিতি দেখতে হবে তা কখনও ভাবিনি। এসব ভাবতে গেলে চিন্তা লাগে, অবাক হই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে এতসব কথা বলেন ইয়াছিন আরাফাত।

তিনি আরও বলেন, এই যে দেখেন যতগুলো কবরে ফুল ফুটেছে অধিকাংশ ফুল গাছ আমার লাগানো। এ জন্য আমি কখনও কারও কাছ থেকে চেয়ে কোনও টাকা নিইনি। সওয়াবের জন্যই একই কাজটি করে যাচ্ছি। মানুষ যেন আমাকে দোয়া করে। আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করেন। আমি নিজ থেকেই এসে কাজ করি। কবরবাসীর কবরের খেদমত করছি। আমি ছাড়াও এই কবরস্থানে অনেক লোক আছেন। তারাও লাশ দাফনে ব্যস্ত থাকেন।

চলছে কবর ও গাছের পরিচর্যা

তিনি আরও বলেন, এই কবরস্থানে সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪০ জনের মতো লোক আছে। আমি তাদের থেকে আলাদা। আমি একা একাই কাজ করি। আমি ছেঁড়া লুঙ্গি পরে থাকি। তাতেই আমার তৃপ্তি।

রায়েরবাজার কবরস্থানের ম্যানেজার লেয়াকত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন পর্যন্ত এই কবরস্থানে ১ হাজার ৩৯০ জনকে দাফন করা হয়েছে। এখানে করোনা আক্রান্ত লাশ দাফনে কোনও ফি লাগে না। সিটি করপোরেশনের মেয়র তা ফ্রি করে দিয়েছেন। তবে সাধারণ লাশের জন্য ৫০০ টাকা করে ফি ধার্য করা আছে। 

লাশ থেকে কখনো করোনা ছড়ায় না বলেও মনে করেন তিনি। তার কথায়, যদি ছড়াতো (করোনা) তাহলে আমরা যারা এই লাশ দাফনের কাজ করি সবাই আক্রান্ত হতাম। কিন্তু আমাদের একজনও আক্রান্ত হয়নি। এর পরেও মানুষ তার স্বজনের লাশ নিয়ে কবরে নামতে চায় না। আমাদের কর্মীরা দাফন করে। 

/এমকে/
সম্পর্কিত
কবরস্থান থেকে ১১টি কঙ্কাল উধাও
দেড় মাসে তৃতীয়বারের মতো কবর থেকে কঙ্কাল চুরি
কবরস্থান থেকে ১২ কঙ্কাল চুরি
সর্বশেষ খবর
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!