X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক: কেন সন্দেহ আর বিদ্বেষ?

উদিসা ইসলাম
২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৫৬আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৫০

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক ক্রমাগত সন্দেহ, অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা এমনকি নিখাদ বিদ্বেষে রূপ নিচ্ছে বলে মনে করেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই। তাদের মতে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গলদ আর বিশ্ববিদ্যালয় কনসেপ্টের অস্পষ্টতার কারণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন শিক্ষকরা। আবার অনেকেই বলছেন, আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ থাকবে না, এমনটি হয় না। পারস্পরিক আলাপের মধ্যদিয়ে একটা সমাধানের রাস্তা বের করে আনাটাই চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন ও অনশনের ঘটনায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভূমিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে একাধিকবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি আলাপ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে পরিস্থিতি সমাধানে উদ্যোগ নেননি। আবার বারবার শিক্ষকরা আলোচনা করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সাফ জবাব, কারোর সঙ্গে কোনও আলোচনার সুযোগ নেই।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যকার এই সম্পর্কের অবনতির পেছনের কারণ কী এবং কোন পর্যায়ে গেলে আলোচনার জায়গা অবশিষ্ট থাকে না-সে বিষয়ে বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও শিক্ষায়তনের পরিধিতে শিক্ষকরা মূলত তিন ধরনের দায়িত্ব পালন করেন—বিষয়গত বিশেষজ্ঞ, নৈতিক পরামর্শক এবং অবকাঠামো ও উপকরণ ব্যবস্থাপক। একজন শিক্ষক তার বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করে তাদের নতুনভাবে জ্ঞানের চর্চা বা কোনও বিশেষ দক্ষতা আরও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করেন।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক ক্রমাগত সন্দেহ, অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা এমনকি নিখাদ বিদ্বেষে রূপ নিচ্ছে। এর প্রধান কারণ, বিগত তিন দশকে ক্ষমতাসীনদের অনুগত শিক্ষক পরিচালিত প্রশাসন—যারা শিক্ষার্থীদের মূলত একটা ঝুঁকিপূর্ণ সামাজিক গোষ্ঠী হিসেবে দেখেন। তাদের যেকোনও ন্যায্য আন্দোলনকে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যড়যন্ত্র হিসেবে দেখেন।

তার মতে, শাবিপ্রবির প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার জানান দিচ্ছেন যে, এই সনাতন কায়দায় শিক্ষাঙ্গন পরিচালনার দিন শেষ হয়েছে। আজকের শিক্ষার্থী প্রজন্ম এসব রাজনৈতিক কূটকৌশল মোকাবিলা করবার মেধা, প্রজ্ঞা ও সাহস রাখেন। প্রশাসনকে এই তারুণ্যকে ধারণ করবার যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। শাবিপ্রবির উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে, বাকিদের শাবিপ্রবির কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

এ সবের দায় শিক্ষকদের বেশি কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘অবশ্যই শিক্ষকদের বেশি। আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই গলদ। আমরা কি শিক্ষার্থীদের কথা ভাবি? যে কয়টা দাবি নিয়ে ছাত্রীরা আন্দোলন করলো—ওসব দাবি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আসার আগেই পূরণ হওয়ার কথা।’

এ পরিস্থিতি তৈরিতে শিক্ষকদের দায় বেশি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বয়সে তরুণ, তারা ভুল করতে পারেন (যদিও ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, জাতীয় বহু ঘটনায় তারা সঠিক আচরণই করে থাকেন)। কিন্তু শিক্ষকদের দিক থেকে তাদের প্রতিপক্ষ মনে করে দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া মানায় না। এ ছাড়া নেতৃস্থানীয় শিক্ষকদের ক্ষমতাসীন দলের প্রতি ভৃত্যের মতো আচরণ দেখে, অন্যান্য অনেক নৈতিক পতন দেখে, তাদের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সম্মানবোধ চলে গেছে বা দ্রুতই চলে যাচ্ছে। ফলে আলোচনার পরিবেশ থাকে না।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ মনে করেন, যেকোনও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কোনও আলোচনাতেই বসা যাবো না, এটা হতে পারে না। এখানে উভয়পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকরা শত্রু না, এই ভাবনা শিক্ষার্থীদের শিখে নিতে হবে।’

অপমানের প্রতিবাদে শিক্ষকরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক। শিক্ষকরা দাবি করেন, সাবেক অনেক শিক্ষার্থী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা লিখছে ও অশালীন মন্তব্য করছে, যা শিক্ষকদের জন্য সম্মান হানিকর।

আর অনশনরত শিক্ষার্থী নিফিসা ইমু বলেন, ‘আলোচনায় বসা যায়নি, কারণ শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে সংহতি জানাতে পারেনি।’

/এফএ/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়লো
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের মেয়াদ বাড়লো
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ আজ থেকে শুরু
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ আজ থেকে শুরু
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ
ভোটকেন্দ্র নীতিমালার গেজেট প্রকাশ, বাদ পড়লো ডিসি-এসপির কমিটি ও ইভিএম
ভোটকেন্দ্র নীতিমালার গেজেট প্রকাশ, বাদ পড়লো ডিসি-এসপির কমিটি ও ইভিএম
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের