X
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বজ্রাঘাতে মৃত্যু: ঠেকানোর উপায় আছে, উদ্যোগ নেই

উদিসা ইসলাম
০৪ মে ২০২২, ১২:০০আপডেট : ০৪ মে ২০২২, ১৪:৫১

ঈদুল ফিতরের দিন নামাজ শেষে বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে বজ্রাঘাতে রনি মিয়া নামে ৩৫ বছর বয়সী এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মর্মান্তিক এই মৃত্যু আবেগতাড়িত করেছে সারাদেশের মানুষকেই। শুধু রনি নন, গতকাল ঈদের দিনে আরও দুই জেলায় বজ্রাঘাতে মৃত্যু হয়েছে আরও পাঁচ জনের। তাদের মধ্যে টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে নদীতে গোসল করার সময় বজ্রাঘাতে স্কুলছাত্রসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় একই সময়ে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও শায়েস্তাগঞ্জেও পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় মারা গেছেন আরও দুজন। 

বাংলাদেশে প্রতি বছরই বজ্রপাতে বহু মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বছরের মার্চ থেকে শুরু হয়ে আগস্টের শেষ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে একাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। অথচ এই মৃত্যু ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আমাদের দেশে তেমন কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। গবেষকরা বলছেন, কেবল মৃত্যু ঠেকানো নয়, যারা বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে ভাগ্যগুনে বেঁচে যান- তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি কী হবে সে বিষয়েও উদ্যোগ জরুরি।

চলতি বছর ২২ এপ্রিল পর্যন্ত ২৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ২ জন ফেব্রুয়ারি মাসে এবং ২০ জন এপ্রিল মাসে। মৃতদের মধ্যে শিশু চার জন, নারী ৫ জন এবং পুরুষ ১৫ জন। নিহতদের মধ্যে কৃষকের সংখ্যাই বেশি, তারপর জেলে এবং ছাদে-মাঠে খেলারত শিশু।

গত কয়েক বছরে মৃতের সংখ্যা নথিভুক্ত করেছে ডিজাস্টার ফোরাম। তাদের হিসেব বলছে, ২০২১ সালে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৩৬২ জন । এরমধ্যে পুরুষ ২৪৮। শিশু ৭২। ২০২০ সালে বজ্রপাতে মারা গেছেন  ৩৮০ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২৭১ জন ও শিশু ৮০ জন। 

বজ্রাঘাতে গ্রামে মৃত্যু বেশি কেন? 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের হাওর এলাকায় বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনও গাছ না থাকায় মৃত্যু ঠেকানো যায় না। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে তা মাটিতে আঘাত হানার আগে সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। হাওর এলাকায় কৃষকের শরীরই পায়, তার ওপর পড়ে। ফলে পরিকল্পনা করে গাছ লাগানো গেলে মৃত্যু অনেক কমবে। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শহরে বজ্রপাত প্রতিরোধে বেশির ভাগ ভবনে প্রতিরোধক দণ্ড থাকায় মানুষের মৃত্যু কম। কিন্তু গ্রামে, বিশেষ করে ফসলের মাঠে সেই ব্যবস্থা নেই। এ কারণে সেখানে মৃত্যু বেশি হয়।

বাংলাদেশে বজ্রপাত প্রবণতার কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বজ্রপাতের প্রবণতা বেশি। কিন্তু এর কারণ কী? বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাদের মতে, বাংলাদেশে বজ্রপাতের মূল কারণ ভৌগোলিক অবস্থান। বাংলাদেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর, এরপরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে আসে গরম আর আর্দ্র বাতাস। আবার উত্তরে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা যেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। এই দুইয়ের কারণে বজ্রপাত বেশি।

করণীয় কি?

আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ বলছে দেশে বজ্রপাতের হটস্পট হচ্ছে মধ্যাঞ্চল। সেগুলো আরও পর্যালোচনা করে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব মনে করেন বজ্রপাতের সময় কী কী কাজ করণীয় এবং কী কী বর্জনীয়, সেসব বিষয় সর্বস্তরের মানুষকে জানানো দরকার। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, কালবৈশাখীসহ বজ্রপাতের স্থানভিত্তিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিষয়ে মানুষ সচেতন নয়। বর্তমানে কোন এলাকায় কোন সময়ে ঠিক কতটি সম্ভাব্য বজ্রপাত হবে, তা সহজেই আবহাওয়া বিষয়ক অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে জানা যায়। আবহাওয়ার গাণিতিক মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ, রাডার এবং মোবাইল সেবার বোধগম্য ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষতি কমানো যায় অনায়াসেই।

দুর্যোগ বিজ্ঞান গবেষক ও লেখক গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, বজ্রপাতে গরীব মানুষের প্রাণ যায় বলে আমরা বিষয়টাকে আমলে নেই না। যারা বজ্রপাতে আক্রান্ত হয়ে ভাগ্যগুনে বেঁচে যান, তাদের নিয়েও ভাবি না। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। গ্রামে গ্রামে মাঠে মাঠে বজ্র নিরোধক দণ্ড লাগিয়ে নেপাল অনেক ফল পেয়েছে। আমাদের তেমন উদ্যোগ নিতে অসুবিধা কোথায়?

/ইউএস/
সম্পর্কিত
মাদারীপুরে বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো তিন জনের
সীমান্তে টহলরত অবস্থায় বজ্রাঘা‌তে বিজিবি সদস্যের মৃত্যু, আহত ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বজ্রাঘাতে ৫ জনের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখতে আহ্বান ইউক্রেনের
রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখতে আহ্বান ইউক্রেনের
‘ক্ষমতায় গেলে মাতৃভাষার পাশাপাশি আরও দুটি ভাষা শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নেবো’
‘ক্ষমতায় গেলে মাতৃভাষার পাশাপাশি আরও দুটি ভাষা শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগ নেবো’
‘ভারত পানিকে মারণাস্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে’
‘ভারত পানিকে মারণাস্ত্র হিসেবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে’
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
চট্টগ্রামে হচ্ছে একাধিক হাসপাতাল, পাল্টে যাচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র
সর্বাধিক পঠিত
চার দশক পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ
চার দশক পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ
বেবিচকের মেম্বার সিকিউরিটিকে বাহিনীতে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
বেবিচকের মেম্বার সিকিউরিটিকে বাহিনীতে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
গুলিস্তানে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে এনসিপি’র যুবশক্তির নেতাদের হট্টগোল
গুলিস্তানে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে এনসিপি’র যুবশক্তির নেতাদের হট্টগোল
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ উদ্বেগজনক: দ্য ডন
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ উদ্বেগজনক: দ্য ডন
কক্সবাজার থেকে উড্ডয়নের পর খুলে পড়লো বিমানের চাকা
কক্সবাজার থেকে উড্ডয়নের পর খুলে পড়লো বিমানের চাকা