১০ বছরের কারাদণ্ড মাথায় নিয়ে থাইল্যান্ডে যাওয়া সংসদ সদস্য হাজী সেলিম আগামী ৬ মে দেশে ফিরবেন। দেশে ফিরেই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হবেন। হাসপাতালে ভর্তি থেকেই তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।
বুধবার (৪ মে) সকালে হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠ ও একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আইনগতভাবে কীভাবে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তিনি সুবিধা পাবেন সেসব বিষয়ে কাগজপত্র ঠিক করছেন তার আইনজীবীরা।
হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, হাজী সেলিম ব্যাংককে ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তার চিকিৎসক নির্ধারিত। মোহাম্মদ আলী নামে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় হাজী সেলিম প্রতিবার ব্যাংককে যান। মোহাম্মদ আলী হাজী সেলিমের ঘনিষ্ঠ এবং ব্যাংককের হাসপাতাল ও চিকিৎসক সম্পর্কে তার ভালো ধারণা রয়েছে। ব্যাংককে হাজী সেলিমের সঙ্গে তিনি রয়েছেন। হাজী সেলিম উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বেশ কিছু রোগে ভুগছেন। ব্যাংককের চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে এসে ঢাকায় তিনি একটি হাসপাতালে ভর্তি হবেন। এরপর তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।
ঘনিষ্ঠ সূত্রটি আরও জানায়, হাজী সেলিমের আরও কয়েক দিন পরে দেশে আসার কথা ছিল। তবে গণমাধ্যমে লেখালেখি শুরু হওয়ায় তিনি দ্রুতই ফিরে আসবেন। এসেই ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হবেন। হাসপাতালে কাগজপত্র আদালতে জমা দিয়ে তিনি ফের জামিনের আবেদন করবেন।
গত শনিবার (৩০ এপ্রিল) বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে তিনি ব্যাংককে যান। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার প্রটোকল অফিসার সোহেল, চিকিৎসা সহযোগী মোহাম্মদ আলী এবং ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন বেলাল। তারা সবাই একটি গাড়িতে বিমানবন্দরে যান।
মহিউদ্দিন বেলাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাজী সেলিম পালিয়ে যাওয়ার লোক নন। তিনি চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গেছেন। তার কাছে ৩০ দিন সময় রয়েছে। তিনি এই সময়ের মধ্যেই আদালতে হাজির হবেন। তিনি পালিয়ে দেশ ছেড়ে যায়নি। শিগগিরই দেশে ফিরবেন।’
উচ্চ আদালতে সাজা হওয়ার পর আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। তার দেশে ফিরে আসা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম জানান, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামি কীভাবে ইমিগ্রেশন পার হলেন এটাই তো অস্বাভাবিক। তিনি বিদেশে যেতে পারেন না। উচ্চ আদালত তাকে বলেছেন বিচারিক আদালতে যেতে, তিনি চলে গেলেন বিদেশে!’
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দুই ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে তার সাজা বাতিল করেন। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে পুনরায় হাইকোর্টে শুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। পরে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর এ মামলার বিচারিক আদালতে থাকা যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেছিলেন উচ্চ আদালত। আপিল শুনানিতে তার সাজা বহাল থাকে। আপিল বিভাগ তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।