X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি শেল্টার হোমের করুণ দশা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ মে ২০২২, ২০:৪২আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ২১:০৭

ঝুঁকিপূর্ণ সহিংসতার শিকার কিশোরীদের শেল্টার হোমগুলো (নিরাপদ আবাসন) জরাজীর্ণ। লোকবল স্বল্পতার কারণে সরকারি এই শেল্টার হোমগুলো যথাযথ সেবা দিতে পারছে না। এর কোনোটিতে নেই গার্ড, আবার কোনোটিতে নেই বাবুর্চি। হোমগুলোতে মানসিক প্রতিবন্ধীদের রাখার কারণে সাধারণ নিবাসীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আলোচনায় শেল্টার হোমের এই চিত্র উঠে এসেছে। খোদ সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শেল্টার হোমের করুণ দশার কথা উল্লেখ করেছেন। কমিটির আগের বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংসদীয় কমিটি ঝুঁকিপূর্ণ সহিংসতার শিকার কিশোরীদের নিরাপদ আবাসন (সেফ হোম/শেল্টার হোম) সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিটি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য বদরুদ্দোজা ফরহাদ হোসেন, আ কা ম সরওয়ার জাহান, আরমা দত্ত ও শবনম জাহান অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ আমন্ত্রণে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান বৈঠকে অংশ নেন।

বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশে ছয়টি সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র (শেল্টার হোম) রয়েছে। এগুলো ত্রিশাল-ময়মনসিংহ, গোদনাইল-নারায়ণগঞ্জ, মিরপুর-ঢাকা, বেথিলা-মানিকগঞ্জ এবং গাজীপুরের পুবাইল ও কাশিমপুরে অবস্থিত।

বৈঠকের কার্যবিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগের বৈঠকে শেল্টার হোমের বিষয়ে সমাজকল্যাণ সচিব জানান, ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত ছয়টি নিবাস কেন্দ্রে অনুমোদিত আসনের চেয়ে বেশি নিবাসী রয়েছে। লোকবলের স্বল্পতা ও ভবনের জরাজীর্ণতার জন্য সেখানে নিবাসীদের যথাযথ সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

বৈঠকে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তৈরি শেল্টার হোমগুলো বর্তমানে খুবই জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে সেখানে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সেখানে মানসিক রোগী রাখার কারণে অন্য সাধারণ নিবাসীদের বসবাসে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। সংস্কার করে আবাসন কেন্দ্রগুলো ঢেলে সাজানো জরুরি।’

প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান বলেন, ‘সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেশিরভাগ শেল্টার হোম পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর কোনোটিতে গার্ড নেই, কোনোটিতে নেই বাবুর্চি। সাধারণ নিবাসীদের মধ্যে প্রতিবন্ধী ও মানসিক রোগী রাখা হচ্ছে, যা খুবই করুণ দৃশ্য।’ এসব শেল্টার হোমের যাবতীয় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেন তিনি।

কমিটির সভাপতি রাশেদ খানন মেনন তার বক্তব্যে বলেন, ‘সম্প্রতি দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী পরিবার যারা থাকেন, তারা স্বামী বা আত্মীয়স্বজনের কাছে  সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। চাকরিজীবী নারীদের প্রতিও সহিংসতার প্রবণতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’

এ সময়ে তিনি জরাজীর্ণ শেল্টার হোমগুলোর জনবলসহ সমস্যাদি চিহ্নিত করে এর উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেন।

হিজড়াদের উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ

বৈঠকে হিজড়াদের সমস্যা ও তাদের জন্য সরকারি সুবিধাদি নিয়ে আলোচনা হয়। এই আলোচনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে ১৩ হাজার হিজড়া রয়েছে। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরে এক হাজার ৯২০ জন প্রশিক্ষণ সুবিধা পেয়েছেন। শুধু ৫০ ও তদূর্ধ্ব বয়সের হিজড়াদের মাসে ৬০০ টাকা হারে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।’

কমিটির সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা বলেন, ‘হিজড়াদের সরকারিভাবে এত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও প্রায়ই রাস্তাঘাট, বাস ও ফেরিতে তাদের উৎপাতে মানুষ অতিষ্ঠ। হিজড়ারা জানিয়েছে, তারা সরকারিভাবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ কিংবা আর্থিক কোনও সহায়তাই পাচ্ছে না। তাহলে মন্ত্রণালয়ের নেওয়া হিজড়াদের এসব কর্মসূচিগুলো কোথায় বাস্তবায়ন হচ্ছে? হিজড়াদের কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে মূলধারায় রাখতে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।’

হিজড়াদের যাতে পরিবার থেকে বের করে না দেওয়া হয়, তার জন্য মোটিভেশনাল কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রস্তাব দেন সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রায়ই হিজড়া সেজে নানা রকম অসামাজিক কার্যকলাপ সৃষ্টির কথা শোনা যাচ্ছে। পরিবারকে মোটিভেট করা গেলে হয়তো তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।’ তিনি ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়াদের চিহ্নিত করে ভাতা প্রদানের বয়সসীমা কমিয়ে আনার কথা বলেন।

কমিটির সভাপতি বলেন, ‘হিজড়াদের মাঝে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।’ পরে কমিটি হিজড়াদের পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে মোটিভেশনাল কর্মসূচি নেওয়া ও তাদের ভাতা প্রদানের বয়সসীমা কমানোর সুপারিশ করে।

বিদ্যমান নীতিমালা সংশোধন করে হিজড়াদের ভাতা প্রদানের বয়সসীমা ৩০ বছরে কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে জানানো হয়।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কমিটি ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত হিজড়া চিহ্নিত করে আইডি কার্ড প্রদান ও হিজড়াদের উপদ্রব প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রদত্ত জমিতে মাঠ নির্মাণ কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্টের বিগত ১০ বছরের অডিট রিপোর্ট স্থায়ী কমিটির সভায় উপস্থাপন এবং শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান ট্রাস্ট (বাংলাদেশ)-এর বনানীর ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের সর্বশেষ অবস্থা আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

 

 

/ইএইচএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ৬১ হাজারের বেশি আবেদনএমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে বছরে ঘাটতি ৫৬০ কোটি টাকা
২০২৩ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় বিআরটিসির ১০ বাস পুড়েছে
সর্বশেষ খবর
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী