X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে ৯ দফা সুপারিশ টিআইবির

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ আগস্ট ২০২২, ১৮:৫৭আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ১৮:৫৭

দেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক-পঞ্চমাংশ তরুণ ও যুবগোষ্ঠী হলেও এদের মাঝে বেকারত্বের হার জাতীয় পর্যায়ের হারের দ্বিগুণ। এমন বাস্তবতায় দেশের অগ্রযাত্রায় বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

টেকসই উন্নয়ন, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি প্রকাশিত জনশুমারিকে বিবেচনায় নিলে তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীর হাত ধরে দারুণ এক জনমিতিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। যদিও সেই সম্ভাবনার পুরোটাই নির্ভর করে এই বিপুল তারুণ্য কতটা কার্যকরভাবে দক্ষ করে কাজের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যাচ্ছে, তার ওপর। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সুখকর অবস্থায় নেই, তার বড় প্রমাণ আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘দ্য গ্লোবাল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ফর ইয়ুথ-২০২২’ এর তথ্য।'

তিনি বলেন, ‘প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ। যেখানে জাতীয় পর্যায়ে বেকারত্বের হার মাত্র ৪.২ শতাংশ। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা অতিমারির প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর বড় অংশই তরুণ। কিন্তু বিপুল এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ করে কর্ম উপযোগী করার বিষয়ে এখনও কোনও সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। যা সত্যিই হতাশার। যদিও দেশের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় এ উদ্যোগ নেওয়া সবচেয়ে জরুরি।’

ড. জামান বলেন, ‘সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপ বলছে, দেশে ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার। যার বড় কারণ হচ্ছে কাজে যোগ দেবার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করা যাচ্ছে না, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে। এই সমস্যাটি ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠলেও তা সমাধানে সমন্বিত কোনও উদ্যোগ এখনও দেখা যায়নি, যা সত্যিই উদ্বেগের। সবচেয়ে আতঙ্কজনক বিষয়টি সম্ভবত দেশের যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারের প্রকৃত সংখ্যাকে অস্বীকার করা বা প্রকাশ না করার প্রচেষ্টা। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু এবং যুব কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও বাজেট বরাদ্দের উদ্যোগ গ্রহণ সময়ের দাবি। একইসঙ্গে প্রয়োজন বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ও কারিগরিভাবে দক্ষ করে তোলা। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য তরুণ-যুব জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে না পারলে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিচারেই খুশি থাকার চেষ্টা বুমেরাং হবে।’ 

ড. জামান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ অবস্থায় আছে বলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তিমূলক প্রচার রয়েছে। তবে প্রকৃত অর্থে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগাতে চাইলে উন্নয়ন পরিকল্পনায় তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর চাহিদা ও মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। এর জন্য শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভয়ডরহীনভাবে তরুণদের মত প্রকাশের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাদের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরিও জরুরি।’

আন্তর্জাতিক যুবদিবস উপলক্ষে টিআইবির প্রস্তাবে রয়েছে  আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী, তরুণদের কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষিত করাসহ ৯ দফা।

টিআইবির অন্যান্য দাবি হচ্ছে—

১.  আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ও নারী শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। 

২.   জাতিসংঘের সুপারিশ অনুয়ায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

৩. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে, সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। 

৪. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করার উদ্যোগ নিতে হবে।

৫. সরকারি-বেসরকারি যেসব চাকরির নিয়োগ, পরীক্ষা, যাচাই বন্ধ রয়েছে— অবিলম্বে বিশেষ ব্যবস্থায় সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নিতে হবে। 

৬.  সব চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত এবং মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৭.  কোভিডের কারণে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। 

৮. তরুণ সমাজসহ সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইন ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করতে হবে। 

/আরএইচ/
সম্পর্কিত
সড়ক আইনে শাস্তি ও জরিমানা কমানোয় টিআইবির উদ্বেগ
সম্পদের হিসাব জমার বাধ্যবাধকতা বাতিল হলে দুর্নীতি উৎসাহিত হবে: টিআইবি
দায় এড়াতে ও প্রকৃত দোষীকে আড়াল করতে অভিযান: টিআইবি
সর্বশেষ খবর
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
পণ্ড হলো না পরাগের শ্রম, দিল্লিকে হারালো রাজস্থান
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
বাসের পেছনের অংশ খোয়া যাচ্ছে কেন?
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা